আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকে নাস্তিক/মুরতাদ বলে যে মানুষ মারা হচ্ছে তা কি ঠিক আছে?

আমি তাই বলি যা আমি বিশ্বাস করি আমার ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান কম তাই নিজে বেশী কিছু বলবো না। আসুন দেখি ইসলামে মুরতাদ/নাস্তিকদের ব্যাপারে কি বলা আছেঃ- এই ব্যাপারে সুরা আল-ইমরান(মদিনায় অবতীর্ণ) এর অর্থ দিলামঃ- (০৩:৮৬) অর্থ- কেমন করে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন, যারা ঈমান আনার পর এবং রসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর এবং তাদের নিকট প্রমাণ এসে যাওয়ার পর কাফের/ অবিশ্বাসী হয়েছে। আর আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না। (০৩:৮৭) অর্থ- এমন লোকের শাস্তি হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং মানুষ- সকলেরই অভিসম্পাত! (০৩:৮৮) অর্থ- সর্বক্ষণই তারা তাতে (নরকে) থাকবে। তাদের আযাব হালকাও করা হবে না এবং তারা এতে বিরামও পাবে না।

(০৩:৮৯) অর্থ- কিন্তু যারা অতঃপর তওবা করে নেবে এবং সৎকাজ করবে তারা ব্যতীত, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালূ। (০৩:৯০) অর্থ- যারা ঈমান আনার পর অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটেছে, কস্মিনকালেও তাদের তওবা কবুল করা হবে না। আর তারা হলো পথভ্রষ্ট। (০৩:৯১) অর্থ- যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে দেয়া হয়, তবুও যারা কাফের/ অবিশ্বাসী হয়েছে এবং কাফের/ অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব! পক্ষান্তরে তাদের কোনই সাহায্যকারী নেই।

সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ) (০২:২১৭) অর্থ- পবিত্র মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে তারা তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, বল, এ সময় যুদ্ধ করা ভীষণ অন্যায়। আর আল্লাহর পথে বাধা দান করা এবং তাঁকে অস্বীকার করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় অন্যায়। আর ফেতনা সৃষ্টি ( বিবাদ, অত্যাচার, উৎপীড়ন, বিপর্যয়, বিদ্রোহ) করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদেরকে তোমাদের ধর্ম থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি তারা সক্ষম হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং অস্বীকারকারী/ বেঈমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আর তারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে। শুধুমাত্র ধর্ম ত্যাগ করার কারনে কাউকে হত্যা করার কোনরূপ ইংগিত আল-কোরআন এমনকি সহী হাদিছেও নেই। ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার পর (০৩:৮৬ - ৯১) যদি কেউ শান্তিপূর্ণভাবে ও মুসলিমদের সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে নিজ ধর্ম পালন করেন বা অবিশ্বাসী হিসেবে জীবন যাপন করতে থাকেন, তাহলে তাকে হত্যা করা তো দূরে থাক, কোনরূপ শাস্তি দেবার অধিকারও কাউকেই দেয়া হয়নি। কারন বলা তো যায় না, পরবর্তীতে ভুল বুঝতে পারলে তাদের মধ্য থেকে কারো জন্য হয়ত আবারও ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেবার সৌভাগ্য হতেও পারে।

তবে যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে, তাদের উপরে আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও মানুষের অভিসম্পাত বর্ষিত হতে থাকে এবং এদের মধ্যে যারা অবিশ্বাসী হয়েই মৃত্যু বরণ করবে, (০২:২১৭) তাদের জন্য আল্লাহতায়ালা পরকালে যে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের ব্যবস্থা রেখেছেন সেটাই যথেষ্টে। হাদীস শরীফে রাসুল (সাঃ) বলেছেন: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ অর্থাৎ, মুসলমানদের মধ্য থেকে যে তার ধর্মকে পরিবর্তন করবে তাকে শাস্তি হিসেবে হত্যা কর। (বুখারী,আবু দাউদ, তিরমীজি, ইবনে মাজাহ,নাসায়ী,মুসনাদে আহমদ) বর্তমান বিশ্বের বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ডক্টর আল্লামা ইউসুফ কারজাভীকে টেলিভিশনে জিজ্ঞাসা করা হল- ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদকে হত্যা করার বিধান রাখা হল কেন ইসলামে? এটা কি তাকে ইসলাম পালনে বাধ্য করার শামিল নয়? তিনি জবাবে বললেন: আসলে ইসলাম ত্যাগ করার কারণে তাকে হত্যার বিধান রাখা হয়নি। বরং, সমাজে ফিতনার পথ বন্ধ করার জন্য এ বিধান রাখা হয়েছে। সমাজে একজন লোক মুরতাদ হয়ে গেলে অনেক সময় তার দেখাদেখি সমাজের বিরাট অংশের মুরতাদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সেই পথ বন্ধ করার জন্যই ইসলামে এ সিস্টেম রাখা হয়েছে। বিঃদ্রঃ ইসলামে হত্যাসহ যে সমস্ত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব শুধুমাত্র রাষ্ট্রপ্রধানের। অন্য কারো নয়। কাউকে অযথা নাস্তিক/ কাফের বলা খুব ঝুকির কাজঃ- قال المستبان ماقالا فعلى البادى مالم يعتد المظلوم- رواه مسلم :[হযরত আবু যার(রা) থেকে বর্নিত] রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যাক্তি কাউকে কাফের বলে ডাকে অথবা আল্লাহর শত্রু বলে, অথচ ( যাকে কাফের ও আল্লাহ তাআলার শত্রু বলা হচ্ছে) সে তা নয়, তখন তার কথা নিজের দিকে ফিরবে। বুখারী ও মুসলিম , মিশকাতঃ৪৬০৬ অধ্যায়ঃজিহ্বার সংযম,গীবতগাল-মন্দ প্রসঙ্গে।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইকে কাফের বলে, তাহলে তা উভয়ের যেকোন একজনের দিকে ফিরবে। যদি সে যেমন বলেছে বাস্তবে তা’ই হয়, তাহলেতো ঠিক আছে, নতুবা উক্ত বিষয়টি যে বলেছে তার দিকেই ফিরে আসবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৫০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৫০৩৫, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৫৪, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২৩৭} যারা অন্যায়ভাবে ফিতনা-ফ্যাসাদ করে তাদের ব্যাপারে আল-কোরআন এ বলা আছেঃ- সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন- مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا وَلَقَدْ جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ بَعْدَ ذَلِكَ فِي الْأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ (32) "এই কারণেই বনি ইসরাইলিদের এই বিধান দিলাম যে নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করার কারণ ব্যতীত যদি কেউ কাউকে হত্যা করে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল। যদি কেউ একটি প্রাণ রক্ষা করে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো।

অতপর যদিও তাদের নিকট আমার রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছিল এরপরও তাদের মধ্যে অনেকেই সীমালঙ্ঘনকারীই থেকে গেল। " (৫:৩২) যারা সমাজে ফিতনা-ফ্যাসাদ করে তাদের কোন ভাবেই ফিতনা-ফ্যাসাদ করতে দেওয়া উচিৎ না। ফিতনা-ফ্যাসাদকারীদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেনঃ- ফিতনা-ফ্যাসাদ তৈরি করা মহান আল্লাহ পাক-এর কাছে খুবই অপছন্দের বিষয়। মহান আল্লাহ পাক বলেন, “ফিতনা-ফাসাদ করা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা আল্লাহ পাক-এর কাছে হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ। ” (সূরা বাক্বারা) মহান আল্লাহ পাক আরো বলেন, “পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না।

নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না। ” (সূরা ক্বাছাছ) তাই যারা সমাজে এখন ফিতনা-ফ্যাসাদ এবং মানুষ হত্যা করতেছে তাদের কোনভাবেই সমর্থন করা যাবে না। তাদেরকে সমাজের সবাই একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে । কারন আজ যারা এইসব কর্মকাণ্ড করতেছে তারা একটা বিশেষ লক্ষ্যে আছে। তাদের দ্বারা সমাজে কোন শান্তি আনয়ন সম্ভব না।

এবং সাথে সাথে যেকোন ধর্মের অবমাননার জন্য যেন সরকার শক্ত আইনের বিধান করে যাতে এই ব্যাপারে সরকারের প্রতি আহবান। বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ বিভিন্ন জায়গা থেকে সোর্স নিয়ে লেখাটা লিখেছি। কোন ভুল থাকলে ধরিয়ে দিলে খুশি হব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.