আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা গানের বরেণ্য শিল্পী সুরের স্বজন নীলুফার ইয়াসমীনের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই "আগুন জ্বলেরে", "জীবন সেতো পদ্ম পাতার শিশির বিন্দু", "তোমাকে পাবার আগে জ্বলে জ্বলে বুঝতাম", " এক বরর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে"' "এতো সুখ সইবো কেমন করে", "পথের শেষে অবশেষে বন্ধু তুমি", "যদি আপনার লয়ে এ মাধুরী", "এতো কান্নাই লিখা ছিলো ভাগ্যে আমার", "যে মায়েরে মা বলে কেউ ডাকে না"... ষাট/সত্তর দশকের পুরোটা সময় এমনি আরো অজস্র শ্রোতানন্দিত গানে যার কন্ঠ মাধুর্য শ্রোতাদের সম্মোহীত করে রাখতো তিনি হলেন আমাদের বাংলা সংগীতের এক গুনী কন্ঠশিল্পী নীলুফর ইয়াসমীন ৷ নীলুফার ইয়াসমিন বাংলা গানের জগতে এক উজ্জল নক্ষত্র। সৃজনশীল বাংলা গান যখন ভেসে যাচ্ছিল তখন গুটিকয় শিল্পী ভালোবাসা দিয়ে উজ্জীবিত করেছেন আমাদের নিজস্ব গীতি, নিঃসন্দেহে নীলুফার ইয়াসমীন তাঁদের অন্যতম। তাঁর অসাধারণ গায়কী, সুরেলা কন্ঠ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। প্রধানত তিনি ছিলেন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী। নজরুল গীতি ছাড়াও তিনি অসংখ্য আধুনিক গান গেয়েছেন।

ষাট-সত্তর দশকের জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে নীলুফার ইয়াসমিন ছিলেন অন্যতম। বাংলা চলচ্চিত্রেও তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গানে কন্ঠ দিয়েছেন। ২০০৩ সালের ১০ মার্চ এই গুনী কন্ঠশিল্পী মৃত্যবরন করেন। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়। ১৯৪৮ সনের ১৬ই ফেব্রুয়ারি কলকাতার ১৩০/অ পার্ক স্ট্রীটে জন্মগ্রহণ করেন নিলূফার ইয়াসমিন।

তার পিতা বিসিএস ক্যাডার (সিভিল সার্ভিস অফিসার) লুত্‍ফর রহমান ও মাতা মৌলুদা খাতুন। নানা মুর্শিদাবাদের এষ্টেটের এডভোকেট এবং নানি বেগম জয়তুননেছা। পাঁচ বোনের মধ্যে নীলুফার ইয়াসমীন ছিলেন চতুর্থ তাঁদের কোন ভাই নেই ৷ বড় বোন ফরিদা ইয়াসমীন ও মেজো বোন ফওজিয়া খান প্রতিষ্ঠিত সংগীত শিল্পী ৷ সেজো বোন শিক্ষা বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রীধারী নাজমা ইয়াসমীন হক সংগীতের চর্চা না-করলেও একজন ভালো শ্রোতা ও বোদ্ধা ৷ তিনি ধানমন্ডি রেডিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ (ইংলিশ মিডিয়াম)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ৷ ছোট বোন সাবিনা ইয়াসমীন প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী ৷ তত্‍কালীন গোড়া সমাজে বারবার কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার যন্ত্রনা সচরাচর বইতে হতো মাকে ৷ সেই ঘূনেধরা সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে লুত্‍ফর রহমান কোলে তুলে নিলেন নীলা অর্থাত্‍ নীলুফার ইয়াসমীনকে ৷ নিলুফার ইয়াসি আদমজী কটন মিল স্কুল, বাংলাবাজার গার্লস স্কুল, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ ও সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এ অধ্যয়ন করেন ৷ নীলুফার ইয়াসমীন ১৯৬৩ সালে এস এস সি, ১৯৬৫ সালে এইচ এস সি, ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে বি এ (অনার্স) এবং ১৯৭০ সালে ২য় শ্রেনীতে প্রথম হয়ে এম এ পাশ করেন ৷ নীলুফার ইয়াসমীনের পিতা ছিলেন অবিভক্ত বাংলার একজন সিভিল সার্ভিস অফিসার ৷ সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও সংগীতের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল প্রবল ৷ পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি গান গাইতেন ৷ আর নীলুফার ইয়াসমীনের মা হারমোনিয়াম বাজাতেন ৷ পিতার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার মুকুন্দপুর গ্রামে ৷ মুকুন্দপুরের 'পন্ডিত বাড়ি' বললে ঐতিহ্যবাহী এ পরিবারটিকে সবাই চেনেন ৷ বহু আগে থেকেই এ বাড়ির লোকজন শিক্ষা-দীক্ষায় ছিল অগ্রগামী ৷ নীলুফারের মা মুর্শিদাবাদের স্বনামধন্য ওস্তাদ কাদের বখশের ছাত্রী ছিলেন ৷ তিনি ভালো গান গাওয়া ছাড়াও ভালো হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন ৷ মায়ের কাছে সংগীতে হাতেখড়ি নীলুফার ইয়াসমিনের ৷ বাসায় গ্রামোফোন রেকর্ড প্লেয়ার ছিল ৷ পিতা নতুন নতুন রেকর্ড কিনে আনতেন আর বোনেরা সবাই মিলে সে সব রেকর্ডের গান বারবার বাজিয়ে শুনে শিখে ফেলতেন ৷ আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, কমলা ঝরিয়া, হরিমতী, কে মল্লিক, জ্ঞান গোস্বামী, শচীনদেব বর্মন, মৃণালকান্তি ঘোষ, কমল দাশগুপ্ত, আব্বাসউদ্দীনসহ আরো বিখ্যাত সব শিল্পীদের গাওয়া রেকর্ড থেকে তাঁর মা গান তুলে গাইতেন এবং তাঁর গাওয়া থেকেই নীলুফার গান শিখে ফেলতেন ৷ তাঁর মা-ই তাঁকে বলতেন যে এ-সব গানগুলির রচয়িতা কাজী নজরুল ইসলাম ৷ তখন থেকেই নজরুল-সংগীতের প্রতি তাঁর আকর্ষন দূর্বার, যা আমৃত্যু জাগ্রত ছিল ৷ নারায়নগঞ্জের দুর্গাদাস-এর কাছে বড় বোনেরা গান শিখতেন, নীলুফার তাঁদের পাশে বসে থাকতেন ৷ দুর্গা দাস বাংলাদেশ বেতারের ঢাকা কেন্দ্রে সেতার (উচ্চঙ্গ-সংগীত) বাজাতেন ৷ মূলত তাঁর উচ্চাঙ্গ সংগীত শেখা শুরু হয় ওস্তাদ পি সি গোমেজ এর কাছে ১৯৬৪ সালে ৷ একাধারে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শেখেন ৷ তারপর উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ-র সুযোগ্যা ছাত্রী মীরা ব্যানার্জীর কাছে তালিম নেন ৷ এরপর প্রখ্যাত সারেঙ্গীবাদক ওস্তাদ সগীরউদ্দীন খাঁ ও মুরশিদাবাদের স্বনামধন্য ওস্তাদ এ দাউদ সাহেব, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দীর্ঘকাল তালিম গ্রহণ করেন ৷ তিনি নজরুল-সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছেন স্বরলিপিগ্রন্থ থেকে ৷ স্বরলিপি অনুসরণ করেই প্রথম দিকে বেতার-টেলিভিশনে নজরুল-সংগীত গেয়েছেন ৷ পরবর্তীতে তিনি প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী, নজরুল-সংগীত স্বরলিপিকার ও বিশেষজ্ঞ শেখ লুত্‍ফর রহমান ও সুধিন দাশ-এর কাছে নজরুল-সংগীত শিখেছেন ৷ নীলুফার ইয়াসমীন বাংলাদেশ বেতারের ছোটদের অনুষ্ঠান খেলাঘরের মাধ্যমে শিল্পী জীবনের শুরু করেন ৷ পরবর্তীতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের শুরু থেকে অংশগ্রহণ করে আমৃত্যু একজন নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান গেয়েছেন ৷ শুধু নজরুল সংগীতই নয়, বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ বাংলা গানের বিভিন্ন ধারায় নীলুফার সাবলীল বিচরণ ছিল সত্যিই বিস্ময়কর ৷ নীলুফার ইয়াসমীন উচ্চাঙ্গ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, টপ্পা, ঠুমরি, কীর্তন, রাগপ্রধান, আধুনিক গান, মোট কথা গানের ভুবনের প্রায় সবগুলো শাখাতেই অবাধ বিচরণ করতেন ৷ রাগপ্রধান গানে অসাধারণ দখল থাকলেও নীলুফার ইয়াসমীন নজরুল-সংগীতশিল্পী হিসেবেই বেশি পরিচিত ৷ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এই গুণী শিল্পীর কন্ঠে ধারনকৃত ৫ টি সিডি ও ক্যাসেট প্রকাশ করেছে ৷ এর মধ্যে ৩ টি নজরুল সংগীতের, ১টি পুরোনো দিনের গানের এবং অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান নিয়ে ১টি সিডি। এ ছাড়াও নীলুফার ইয়াসমীনের জীবন ও কর্ম নিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রকাশ করছে স্মৃতিচারণামূলক বই 'কণ্ঠশিল্পী নীলুফার ইয়াসমীন' এবং ভিডিও ডকুমেন্টারি 'সুরের স্বজন'। শিল্পী হিসেবে নীলুফার ইয়াসমীনের জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র দেশের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, বিদেশেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন ৷ ১৯৮৪ সালে কলকাতার ''অগ্নিবীনা'-র আমন্ত্রণে ঢাকাস্থ নজরুল একাডেমীর সাংস্কৃতিক দলের সংগে কলকাতা গমন করেন ৷ বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের আমন্ত্রণে দিল্লী ও কলকাতায় সংগীত পরিবেশন করেন ৷ এছাড়াও তিনি পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, পাকিস্তান ভ্রমণ করেন এবং সংগীত পরিবেশন করে প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেন ৷ নীলুফার ইয়াসমীন বেশ কয়েকটি ছায়াছবিতে কন্ঠ দিয়েছে ৷ যেমন- শুভদা, অরুণ-বরুন-কিরণমালা, জোয়ার ভাটা, আবার তোরা মানুষ হ, সুজন সখী , যে আগুনে পুড়ি, জীবন-তৃষ্ণা , জলছবি ইত্যাদি ৷ সুদীর্ঘ শিল্পী জীবনে তিনি 'সুজন সুখী' চলচ্চিত্রে কন্ঠপ্রদানের জন্য ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার পুরস্কার, ''শুভদা' চলচ্চিত্রে কন্ঠ প্রদানের জন্য ১৯৮৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার পুরস্কার, সংগীত বিষয়ে অনন্য অবদানের জন্য ২০০৪ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় "একুশে পদক'' এবং নজরুল সংগীতে তার অবদানের জন্য ১৪১০ বাংলা সালে "নজরুল পদক'' সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন ৷ শিল্পী নীলুফার ইয়াসমীন ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের নজরুল সংগীত বিষয়ের প্রভাষক হিসাবে আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগ নজরুল সংগীত বিষয়ে তাঁর অবদানের কথা চিরস্মরণীয় করে রাখতে সম্প্রতি তাঁর নামে নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে একটি পাঠাগার স্থাপন করেছে ৷ নীলুফার ইয়াসমীন ছিলেন ব্যবহারে বিনম্র ও চাল-চলনে অতিশয় শালীন ৷ অহংকারের লেশমাত্র তাঁর ছিল না ৷ ঈর্ষা, বিদ্বেষ, প্রতিযোগিতার উর্ধ্বে উঠে তিনি সবার প্রিয় হওয়ার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ৷ অসাধারণ সংগীত-প্রতিভার অধিকারী নীলুফার ইয়াসমীনের তুলনা শুধুই নীলুফার ইয়াসমীন ৷ ব্যাক্তিগত জীবনে নিলুফার ইয়াসমীন প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানের সঙ্গে ১৯৬৯ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ৷ তার স্বামী খান আতাউর রহমান ছিলেন এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গণের এক পুরোধাব্যক্তিত্ব ৷ সংস্কৃতির যে শাখায়ই তিনি হাত রেখেছেন সেখানেই ফলিয়েছেন সোনা ৷ নিজের অতুলনীয় প্রতিভা, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং গুণী স্বামীর তত্ত্বাবধানে নীলুফার ইয়াসমীন সংগীতে তৈরি করে নেন নিজস্ব একটি অবস্থান ৷ তাদের একমাত্র পুত্র আগুন বর্তমান প্রজন্মের একজন প্রতিষ্ঠিত কন্ঠশিল্পী ৷ নিরবে নিঃশব্দে এই শিল্পী অনেকটা অগোচরেই অনেকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন ৷ কিন্তু যতটা দরদ ও খেয়াল রেখে গান করতেন তিনি তার কিঞ্চিত্‍ পরিমানও খেয়াল ও দরদ ছিলনা নিজের প্রতি ৷ তাই অগোচরে কখন যে তার শরীরে স্থায়ীভাবে বাসা বেধেছে একটি জটিল রোগ তা শুধু বিধাতাই জানতেন ৷ ২০০১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ধরা পড়ল টিউমার ৷ অপারেশনের পর আবার ফিরে এসেছিলেন সংগীত ভূবনে ৷ কিন্তু ততদিনে অন্য ভূবন থেকে বিধাতার ডাক এসে গিয়েছিল ৷ নীলুফার ইয়াসমীন তার ডাকে সাড়া দিলেন ৷ ২০০৩ সালের ১০ই মার্চ বারডেম হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন ওপারের পথে যেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসেনা ৷ মাত্র ৫৫ (পঞ্চান্ন) বত্‍সর বয়সে তার অকাল প্রয়াণ আমাদের কে বিপর্যস্ত করেছে ৷ সঙ্গীত জগতের এ অপূরণীয় ক্ষতি মেনে-নেয়া কঠিন, কষ্টকর ৷ বাংলাগানের বরেণ্য শিল্পী সুরের স্বজন নীলুফার ইয়াসমীনের আজ মৃত্যুদিন, মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালো্বাসায়।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.