আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিসিদের বাসভবন যেন ফেরাউনের প্রাসাদ

নাজমুল ইসলাম মকবুল

ভিসিদের বাসভবন যেন ফেরাউনের প্রাসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (বিমক) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিলাসী জীবনযাপনের সমালোচনা করে বলেছেন, আমরা মাস্টারি থেকেই বিমকের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে এসেছি। আমরা বড় হব—আমাদের কর্মে এটাই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের প্রাসাদ দেখে অভিভূত হয়ে যাই, দেখে মনে হয় ওইসব প্রাসাদে ফেরাউন বাদশারা থাকেন। এদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান আজাদ চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেব।

এ নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। গতকাল বেলা ১১টায় বিমক মিলনায়তনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে নতুন চেয়ারম্যানের ওই দায়িত্ব গ্রহণ এবং বিদায়ী চেয়ারম্যান দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদ, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক হাফিজ জিএ সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি এবং বিমক সদস্যরা নতুন ও বিদায়ী চেয়ারম্যানকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়েছেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এ কে আজাদ বলেন, উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কোনো আপস নয়।

এক্ষেত্রে পাবলিক ও প্রাইভেট কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কেই ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, গুণগতমান নিশ্চিতের সঙ্গে গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ। তাই গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়া হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তবে উচ্চশিক্ষার প্রসারে সব শাখায় কাজ করবে বিমক।

তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নিশ্চিত ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই ২০২১ ভিশনকে সামনে রেখে এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ যাতে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারে, সেজন্য জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সে নির্দেশনা ও পরামর্শই দিয়েছেন। তাই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায়িক হলে জাতি লাভবান হবে না। শিক্ষার মান নিশ্চিত না হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো বিমাতাসুলভ আচরণ করা হবে না। অনেক ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেখব এ নিয়ে সমাজ কি চিন্তা করে। শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কী ভাবে—এসব মূল্যায়ন করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

বর্তমানে কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ কী—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুণগত শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার এবং জীবন-জীবিকার জন্য শিক্ষাকে গড়ে তোলা। বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. নজরুল ইসলাম বলেন, চার বছর কোনো রাজনৈতিক চাপ ছাড়াই সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সবার সহযোগিতায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আইনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। বিলাসিতা ত্যাগ ও অপচয় রোধ করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধানমন্ডিতে ২৩ কাঠা জমির ওপর বিমক চেয়ারম্যানের বিশাল বাসভবন। সেখানে আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছি।

আমার অফিসেও ছিল তাই। অর্থ অপচয়ের কথা চিন্তা করে আমি গত চার বছরে বাড়ি ও অফিসে কোনো সাজসজ্জা করিনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিলাসী প্রাসাদের অবস্থা দেখে আমি অভিভূত হয়ে যাই! দেখে যেন মনে হয় সেখানে ফেরাউন বাদশারা থাকেন। তারা অনেকেই ব্যবহার করেন পাজেরো গাড়ি। এ তো পাপ।

তিনি বলেন, আমরা মাস্টারি থেকে বিমক চেয়ারম্যান ও ভিসি পদে এসেছি। আমরা বড় হব আমাদের কর্মের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে আমরা ব্যক্তি যদি সম্মান না পেয়ে আমাদের গাড়ি-বাড়ি সম্মান পায়, তবে তা দুঃখজনক। তিনি বলেন, অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত—সেটা দোষের কিছু নয়। তবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার রাজনৈতিক পদে থাকা উচিত নয়।

আমরা আশা করব তিনি তার রাজনৈতিক পদ ছেড়ে দেবেন। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় এ কে আজাদ চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজ ইচ্ছায় অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন। এই প্রথম বিমকের কোনো চেয়ারম্যান প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেন। তবে বিমক চেয়ারম্যানের এ মর্যাদা স্থায়ী নয় বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই মর্যাদা শুধু আমাকেই দিয়েছেন।

এটা স্থায়ী নয় এবং পরবর্তী অন্য কোনো চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ মর্যাদা কেন শুধু তাকেই দেয়া হলো—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই টার্মে ৫ বছর ভিসি ছিলাম। সিনিয়র হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী হয়তো আমাকে এ মর্যাদা দিয়েছেন। তবে পরবর্তীতে অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা স্থায়ী করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়া হবে। সুত্র: আমার দেশ Click This Link



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।