আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ আমি মারা যাব!

বালক জানে না তো কতটা পথ গেলে, ফেরার পথ আর থাকে না কোনো কালে...

-ডাক্তারসাহেব আমি আজ মারা যাব । -আত্মহত্যা করবেন ? - না ,আত্মহত্যা করব কেন? -তাহলে কিভাবে বুঝলেন আপনি মারা যাবেন?বলে ডাক্তার আমার দিকে এমন ভাবে তাকালেন যেন আমার দুষ্টামি উনি ধরে ফেলেছেন। তারপর আমার দিকে একটু ঝুকে এসে বললেন , অযথা রসিকতা করে কেন সময় নষ্ট করছেন? যান, বাড়ি যান। -আমি রসিকতা করছিনা । ডাক্তার সিরাজুল কবিরের(মনোরোগবিশেষজ্ঞ) হাসি হাসি মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল।

আমার দিকে কতক্ষন তাকিয়ে রইলেন । ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকা। চোখ দেখে উনার মনের ভাব বোঝা যাচ্ছেন। মাছের চোখের মত পলকহীন দৃষ্টি। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার মুখটকে হাসি হাসি করে ফেললেন।

তারপর হাসতে হাসতে বলেন , চা খাবেন। প্রসংগের এই নব্বুই ডিগ্রী বাকে আমি খেই হারিয়ে ফেলতে পারতাম, ভদ্রলোকের ইচ্ছেও হয়তো তাইছিল। কিন্তু আমি তার ইচ্ছায় বাদ সাধলাম। -না চা খাবনা । -মরার দিন চা খাওয়া যায়না ? -না তা নয় ।

চা খেতে ইচ্ছে করছেনা । -ইচ্ছে না করলে থাক। এবার বলুন কি যেন বলছিলেন? -আমি আজ মার যাব। - প্রতিদিন সকালে উঠেই মনে হয় আজ আপনি মারা যাবেন । তাই না ? -না তো।

প্রতিদিন মনে হবে কেন ? -তাহলে তো ভাই আপনার কোন অসুবিদাই নাই । আমারতো প্রতিদিনই সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হয় আজ আমি মারা যাব। দেশের যে অবস্থা তাতে বেচে থাকাই আশ্চার্য্য। তবুও আমি বেচে আছি। বুঝতেই পারছেন একদিনের মনে হওয়াতে আপনি মরবেন না ।

বলে ঠা ঠা করে হাসলেন উনি। আমি মিনমিনে গলায় বলতে চেষ্টা করলাম,আপনার মনে হওয়া আর আমার মনে হওয়া এক নয়। -তা ঠিক । আপনার বৌ আর আমার বৌ কি এক? বৌ এক না, চিন্তা ভাবনা এক হবে কি করে? হা হা হা । -আমি বিয়ে করিনি।

-ভাল করেছেন । না করাই ভাল। এবার বলুন তো আপনি যে আজ মারা যাবেন এটা কাকে কাকে বলেছেন? -কাউকে বলিনি। মৃত্যু সংবাদ তো বলে বেড়ানোর মত ঘটনা না । -তা ঠিক ।

না বলেই ভাল করেছেন ,কে আবার কি মনেকরে। ঐ যে বললেন সবার চিন্তা ভাব না তো আর এক নয়। তা এবার যে একটু উঠতে হয় ভাই। আমি ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলাম । বুঝতে পারছি ডাক্তার বিশ্বাস করেন নি আমার কথা ।

আমি হলেও বিশ্বাস করতাম না । আমরা সবাই জানি একদিন মারা যাব কিন্তু সেই দিন টা আজ হোক তাকেউ চাইনা । কিন্তু আমি জানি আজ আমি মারা যাব। কয়টায় মারা যাব তাও জানি, ঠিক সাড়ে ছয়টায়। ডাক্তার কে বলা হয়নি সেই কথা ।

আমি মারা যাচ্ছি একথা তমা কেও বলা হয়নি । মেয়েটা কষ্ট পাবে ;কি দরকার মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে, মেয়েটা আমাকে একটু বেশিই ভালবাসে । হয়তো আমার এই ধরণের কথা শুনে কেদেই দিবে। ওর কান্না সহ্য করা কঠিন আমার জন্য । আমি মরে গেলে হয়তো কাদবে ,সেটাতো আর আমাকে দেখতে হবেনা ।

আমি মারা যাব সড়ে ছয়টায় এখনও এক ঘন্টা বাকি । আচ্ছা মৃত্যুকে কাচকলা দেখালে কেমন হয় । আমি যদি এখন মরে যাই । ঐতো একটা ট্রাক আসছে ,আমি ঝাপ দেই না কেন? আমি ঝাপ দিলাম। তারপর? আমি কি মরে গেছি ? নাতো ,মরিনি ।

টায়ার পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। তারমানে আমি মরবোনা । আমি উঠে দাড়ালাম,ট্রাক ড্রাইভার বল্লো ,ভাই মরার শখ হইছে নাকি ? আরেকটু হইলেই তো গেছিলেন। আমি মৃদু হাসলাম । ড্রাইবারের ধারনা উনি আমার জীবন বাচিয়েছেন ।

উনি তো আর জানেন না মৃত্যু আমাকে নিয়ে খেলছে। হে মৃত্যু তুমি আসো। আমি তোমাকে আর ভয় পাইনা। ২। ।

ডাক্তার সিরাজুল কবির প্রতিদিনের মত আয়নার সমনে দাড়িয়ে টাই বাধছিলেন। মনে মনে ভাবছেন , আজ ক্লিনিকের বিলটা আদায় করতে হবে । উত্তরায় যে প্লটটা কেনা হয়েছে কিছুদিন আগে সেটার এই মাসের কিস্তিটা দেওয়া হয়নি। আজ দিতে হবে। টাই লাগানো শেষ করে আয়নায় নিজের চেহারাটা ভাল করে দেখেনিলেন।

আয়নার সিরাজুল কবিরের চোখে চোখ পরতেই তিনি হঠাত ভীষন ভয় পেয়ে গেলেন। তার মনে হলো আজ তিনি মারা যাবেন। এই মনে হওয়ার সাথে অন্যদিনের মনের হওয়ার কোন মিল নেই । তার স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছেন আজ সাড়ে ছয়টায় তিনি মারা যাবেন। হঠাত তার কিছুদিন আগের কথামনে পড়ে গেল ।

একটা লোক তাকে এই ধরনের কথা বলেছিল না চেম্বারে? আচ্ছা কি যেন নাম ছিল লোকটার?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।