আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার পুলিশের নিষ্ঠুরতার শিকার লিমন

I hate everything

পা হারানো সেই লিমন র্যাবের পর এবার পুলিশের ‘নিষ্ঠুরতার’ শিকার হলো। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে র্যাবের করা মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে। অভিযোগপত্রে র্যাবের গুলিতে পঙ্গু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী লিমনকে ‘সন্ত্রাসী মোর্শেদের সহযোগী’ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক উল্লেখ করে কিশোর অপরাধ আইনে বিচারের জন্য আবেদন করেছে পুলিশ। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের আর্থিক সহায়তায় লিমন ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তার পক্ষের আইনজীবী নাসির উদ্দিন কবির জানান, রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম ঝালকাঠির কোর্ট পুলিশের জেনারেল রেজিস্ট্রার কর্মকর্তার (জিআরও) কাছে ২৪ এপ্রিল অভিযোগপত্র জমা দেন।

একই দিন জিআরও অভিযোগপত্রে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুসরাত জাহানের সই নেন, যা গতকাল আইনজীবীরা জানতে পারেন। আগামী ১৯ মে আদালতে অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হবে। আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, অভিযোগপত্রের কথা গোপন রেখে এর দুই দিন পর পুলিশ র্যাবের বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের করা মামলা না নিতে ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করে। তাতে র্যাবের করা মামলার সঙ্গে লিমনের মায়ের অভিযোগ সংযুক্ত করার অনুমতি চায় পুলিশ। কিন্তু আদালত তা নাকচ করেন।

এর আগে বিচারিক হাকিম আদালত লিমনের মায়ের করা মামলাটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ মামলা না নিতে নানা ফন্দি করেছিল। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক মো. নূর খান বলেন, অভিযোগপত্র দেওয়ার দুই দিন পর জজ আদালতে পুলিশের ওই আবেদনও ছিল কারসাজি। লিমনের মায়ের মামলা না নিতে আরেকটা ফন্দি। দরিদ্র ঘরের ছেলে লিমন র্যাবের পর এবার পুলিশের নিষ্ঠুরতার শিকার হলো।

তিনি বলেন, বিশেষ কোনো মহলকে বাঁচানোর জন্য পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আসক সন্দেহ করছে। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে আসক। পুলিশ জানায়, লিমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই দিনই (২৩ মার্চ) র্যাবের উপসহকারী পরিচালক লুৎফর রহমান বাদী হয়ে ঝালকাঠির রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করেন। এর একটি অস্ত্র আইনে, অন্যটি সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে। দুটি মামলাতেই লিমন হোসেন ও সন্ত্রাসী মোরশেদ জমাদ্দারসহ আটজনকে আসামি করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আরিফুল ইসলাম অস্ত্র আইনের মামলায় দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর একটিতে (অভিযোগপত্র নম্বর-৪৫) মোরশেদ জমাদ্দার, জামাল, মিজান, জাহাঙ্গীর, লাবু জমাদ্দার, হালিম ও সুমনকে এবং আরেকটিতে [অভিযোগপত্র নম্বর-৪৫ (ক)] শুধু লিমনকে আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রেও র্যাবের ‘গল্প’: তদন্ত কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, লিমন অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৬ বছর) হওয়ায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচারকাজ কিশোর অপরাধ আদালতে হবে। তাই তার বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্র পড়ে দেখা যায়, ঘটনার পর গণমাধ্যমে র্যাবের দেওয়া বক্তব্য এবং এজাহারের বক্তব্যই অনেকটা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে।

তাতে বলা হয়, গত ২৩ মার্চ সন্ত্রাসী মোরশেদ জমাদ্দার দলবল নিয়ে সাতুরিয়া গ্রামের শহীদ জমাদ্দারের বাড়ির কলাবাগানে বৈঠক করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব সেখানে অভিযান চালায়। উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা র্যাবের ওপর গুলি বর্ষণ করে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে লিমনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।

তার পাশেই পাওয়া যায় আমেরিকার তৈরি একটি পিস্তল ও একটি গুলির খোসা। অভিযোগপত্রে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে, যাঁদের ১৪ জনই র্যাব ও পুলিশের সদস্য। বাকি পাঁচজন রাজাপুরের সাতুরিয়া ও নৈকাঠি গ্রামের বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে একজন সাক্ষী সাতুরিয়া গ্রামের মো. নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিমনের নামে চার্জশিটে আমাকে যে সাক্ষী করা হয়েছে, তা জানি না। ঘটনার দিন সন্ধ্যার সময় র্যাব আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে দুটি খালি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল।

সেখান থেকে দু-তিনটি দা ও ছেনি উদ্ধার করে র্যাব জব্দ তালিকা হিসেবে সাদা কাগজে আমার সই নিয়েছিল। এর বাইরে আর কিছু আমি জানি না। ’ লিমনের আইনজীবী নাসির উদ্দিন কবির বলেন, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান ১১ এপ্রিল ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, লিমন সন্ত্রাসী নয়, ঘটনার শিকার। তবুও পুলিশ লিমনকে সন্ত্রাসী উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দাখিল করল। তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছিলেন, লিমনের ঘটনায় ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের আগে এই অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ’ লিমনের মা হেনোয়ারা বেগমের নিযুক্ত আইনজীবী নাসিমুল হাসান বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২৬ এপ্রিল লিমনের মায়ের নালিশি অভিযোগ এজাহার হিসেবে না নিতে জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেছিলেন। তাতে অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়টি গোপন করে গেছে পুলিশ। এই অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে গত রাতে ঝালকাঠির সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অভিযোগপত্রের বিষয়টা জানি না। তবে অস্ত্র মামলার নিয়ম হলো ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া।

আমি আগামীকাল বিষয়টা সম্বন্ধে বলতে পারব। ’ লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘পুলিশ আমার মামলা নিতে কত টালবাহানা করল। লিমনের নামে যদি চার্জশিটই দেওয়া হবে, তাহলে সরকার এতগুলো তদন্ত কমিটি গঠন করল কেন?’ তাঁর অভিযোগ, লিমন সম্পর্কে র্যাবের দেওয়া মিথ্যা অপবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পুলিশ তড়িঘড়ি করে চার্জশিট দিয়েছে। এসব কি হচ্ছে আমাদের সাথে? আমাদের কি মুক্তি নেই এই বরবর সরকার ও প্রশাসনের হাত থেকে? সূত্র: প্রথম আলো

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.