আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেব্বি লাগছে.....

হেব্বি লাগছে। যাকে বলে ফাটাফাটি। বছর শেষে শীতের উঞ্চতায় জনা পঞ্চাশেক তরুণী ধর্ষণ। মৃত্যুর সঙ্গে ফিফটি-ফিফটি ম্যাচ। টুয়েন্টি-টুয়েন্টি উত্তেজনা।

হেব্বি লাগছে...বাসা বাড়ি,অফিসের কোনা-কানছি,রাস্তার গলি-ঘুপচি...কোন জায়গাই বাদ নেই। ট্রেন তো বটেই....চলন্ত বাসেও ধর্ষণ হচ্ছে। জওয়ানি জিন্দাবাদ। হেব্বি লাগছে...। ধর্ষণ সিরিজে একের পর মাথা ঘুরিয়ে দেয়া আইডিয়া।

এক টিকেটে দুই ছবি কিংবা নীল ছবির হাতছানিকে সপাটে চপেটঘাত করছে সৃষ্টিশীল শার্দুলেরা। মাল-মশলার সঙ্গে পারফম্যান্স নিয়েও চোখধাঁধানো পরীক্ষা-নিরীক্ষা। হেব্বি লাগছে..। বছর শেষের রাত থেকেই টগবগে উত্তেজনা। সবাই যেন নব্যযুগের নবনায়ক।

একেবারে আজ কি অর্জুন। থার্টি ফার্ষ্টে শরীর হিট করা রাত। টিএসসি থেকে নাইটকাবের প্রতিটি মঞ্চে আমরা সবাই রাজা। রানীরা মঞ্চে আসেন। এলে-বেলে পর্বত দুলিয়ে চেংড়ি ড্যান্স নাচেন।

তার সাথে দাদা নাচেন,ভাই নাচেন। খইয়ের মতো ওড়ে টাকা। চামড়া সুখের বিনিময়ে তাই আঁকড়ে ধরে রাণীরা। হেব্বি লাগছে তো ?.......আমার মতো এক শার্দুলের প্রশ্ন। জবাব দেব কি, যৌবনের প্রতিষ্ঠাতা দিবস বলে কথা।

কত স্বপ্নের বিনিময়ে পাতলুন ছেড়ে প্যান্ট আঁকড়ে ধরা বাঙ্গালীর ইজ্জতের বির্বতন। ক্ষুদিরামের মতো শহীদ হওয়া ‘ইজ্জতগুলো'র স্মরণে বছর শেষে একটু মৌতাতই যদি না জমে,তাহলে চলে ?চলে না। সাকী ও সুরার পাত্রের কোনটাই তাই খালি থাকে না। বিজয় দিবসে আর্মি স্টেডিয়ামে সামরিক কায়দায় বসে জলসা। তারই ফাঁকে চামে-চিকনে চলে লেনা-দেনা।

ক্ষমতায় আছেন দুই নেত্রী......তো ভয় কি ? পঙ্গপালের মতো ছুটে আসে কামীনিকাঞ্চনেরা। শেষ গানটির পর তছনছ হয়ে বাড়ি ফেরা। আপনারা না বড্ড ইয়ে আছেন। কথায় কথায় শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সতের ঢাকায় টিভি পর্দায় উপস্থিত হওয়া সংস্কৃতির খুড়ো-পিসীদের বলছি,এই জিনিষ কি শুধু আপনারাই বোঝেন ? আসলে হিংসা।

মনে শখ ষোল আনা, কিন্তু বুকে লাজের লেবাস ঠাসা। এস, ভাই ময়দানে নাম। দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে। এতো রবীঠাকুরই বলে গেছেন। তবে আর লজ্জা কী।

সঙ্গে এটাও বলেছেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে.....। তাই আমরা চলছি সম্মুখ পানে। চিত্রগুপ্তের (নরকের হিসাবরক) খাতায় নাম লেখাতে। কে আমাদের রুখবে ভাই....এইবার নিস্তার নাই। হেব্বি লাগছে...।

বস্তি পুড়ে ছাই। সীসায় ফ্যাকাসে শহর। তবু প্রিয় নীল রঙটা কামিজে ঢেউ হয়ে ফুটছে পথচারীনির পেছনের নিন্দেয়। দেখলেই মনে আসে, নীলাঞ্জনা ওই নীল নীল... হেব্বি লাগছে। পেনশন বন্ধ।

দুর্বিপাকে ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধ। কৃষকের প্রতিবাদ। বীজ নেই, সারের দাম বেড়েছে। ওই কৃষকেরই ঘরের ছোট মেয়েটির হঠাৎ আত্নহত্যা। কারণটা অজানা ...স্খলিত বসন,কালশিটে পরা শরীর।

হেব্বি লাগছে...। কাঁদো দেশ কাঁদো। কেঁদে তোমাদের আবেগের নদীতে প্রতিবাদের প্লাকার্ডগুলো ফেলে দাও। ধর্ষণ এখন দৈনিকের হেডলাইনেই নেই। সাইডলাইনে চলে এসেছে।

এক কলমে সেরে দেওয়া হয়েছে। ইস্যু বদলে গেছে। নেতায়-নেতায় ইয়ে হচ্ছে, জীবন বয়ে যাচ্ছে। ধর্ষিতারা পুলিশের কাছে গিয়ে ফের হেস্তন্যাস্ত হচ্ছে। ময়না তদন্তে ময়নার গায়ে শার্দুলের গন্ধ খোঁজা হচ্ছে।

কিন্তু নেই ! ওদিকে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ধর্ষিতা ময়নাকে বাক্যবাণে ফের আরেক দফা.....করছে দুঁদে উকিল। ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে,...এবার ধর্ষিতাই ভ্রষ্ঠা। মসলা মাখিয়ে পরিবেশন করছে লাইভ টিভি পর্দা। তাই দেখে বাড়ির শিশুটি ফিডার রেখে মায়ের কাছে আব্দার ধরেছে-মাম্মি.....আমি দর্ষন কাবো ? সত্যি....শুনে মন জুড়িয়ে যায়...হেব্বি লাগে। ইসলামে আছে-মায়ের পায়ের নীচেই সন্তানের বেহেশত।

মহাভারত বলছে-ওই মাকেই গড়তেই নাকি লেগে গেছে একশতসহস্র বছরের স্নিগ্ধতার নির্যাস। তবে কেন, কড়ে আঙ্গুলের চেয়েও ছোট ভ্রুন থাকা অবস্থায় জঠরে বসেই সে হত্যাকান্ডের শিকার হয় ? ধনীর পুত্রসন্তানলোভ, দরিদ্রের কন্যাদায় আর মধ্যবিত্তের চাওয়া-না-চাওয়ার ত্রিশুল তাকে পৃথীবির আলো দেখতে দেয় না.....পরম করুনাময়ের এই সুবিচার দেখে............হেব্বি না লেগে উপায় আছে ? অসস্তিতে পড়ে আমার মুন্ডুপাত করছেন কেন ? আরও পার্থিব লেভেলে ভাবুন দেখি। ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে গেলে কাঁচি-আঠা-সেলোটেপ-আর্ট পেপারের ব্যবসাটা ধাঁ করে চড়ে যায়। মোমবাতি বিত্রেক্রতারা হঠাৎ সুখের আলো দেখে। দেশ জুড়ে প্রতিবাদী জটলা-জমায়েতের পাশে হকারদের বিক্রি-বাট্টাও বাড়ে।

এই ফাঁকে টিভি চ্যানেলগুলোতে অদৃশ্য ঈশারায় ‘হিরো’ কনডমের বিজ্ঞাপন হাতে হাজির হয় আরো স্বল্পবসনা নারী......বুকে হাত দিয়ে বলুন তো...দেখতে হেব্বি লাগে না ? দিনপঞ্জির পাতায় ওল্টাতেই দেখি আজ ৮ই মার্চ। সর্বনাশ ! ছন্দার সঙ্গে তো আজই দেখা হওয়ার কথা। ইচ্ছেটা আসলে-রুম ডেটিং করা। ভাবতেই মনটা হেব্বি ধাক্কা খেলো। ছুটে গেলাম ঔষুধের দোকানে।

মুচকি হাসবেন না....ওসব আপনারাও কেনেন। সাত ঘাটের পানি খাওয়া দোকানীটাও আপনাদের মতো.......কিছু না বলতেই হাতে ‌বাঘমামার একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল। আমার চোখ তখন...... শোকেসের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত, কর্ণার টু কর্নার জাপান-থেকে-আনানো-বাংলাদেশিয়-ভেষজে-বানানো তেলের শিশিতে। স্থান-কাল-পাত্র ভুলে দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম, এত তেল!! বিগলিত নয়নে দোকানদার বললেন, খুব চাহিদা ভাই। প্যাকেট আর কটা বিক্রি হয়... বুড়ো থেকে খোকা পর্যন্ত এখন সবাই এটা কিনছে...।

প্যাকেট ফেরত দিয়ে তেলের শিশি হাতে উঠতেই....হেব্বি লাগলো। বাসায় ফেরার পথে দেখি মিছিল ! না,লটকে দেয়ার দাবি নয়,নারী দিবসের মিছিল-‘অর্ধেক আকাশের ভাগ চাই। ’ ভাগাভাগি আমার কোনকালেই ভাল লাগেনি। তাই এবার আর হেব্বি লাগা নয়......মনটা বিষিয়ে উঠলো। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।