আমার আমিকে চিনতে চাই । এখনো পেরে উঠছি না ।
আমরা যারা থ্রিলার পড়তে ভালবাসি তারা এতদিন বাইরের দেশের বই পরতাম । এখানে আমি আমাদের দেশের থ্রিলার নিয়ে কথা বলব । প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি পেশাদার নই ।
সে হিসেবে আমার মুল্যায়ন নিয়ে ভুল ভাবার কিছু নেই । আমি শুধুই একজন পাঠক । থ্রিলার আমার প্রিয় সাহিত্য শাখা । সে হিসেবে একজন সাধারণ পাঠকের মুল্যায়ন হিসেবে এ লেখাকে নিলে প্রীত হব ।
প্রথমেই কিছু কথা বলে নেয়া প্রয়োজন ।
আমরা যে সব কারণে থ্রিলার পড়ি - থ্রিলার বইগুলোতে সাসপেন্স থাকে । চরিত্রগুলোর ব্যাপ্তি থাকে । আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এখানকার চরিত্রগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য থাকে, সেগুলো তাদের একই সঙ্গে আকর্ষণীয় এবং ভয়ঙ্কর করে তুলে । পড়তে পরতে বাঁক নেয়াও একটা আদর্শ থ্রিলারের অবশ্য বৈশিষ্ট্য । আমি এখানে একটি দেশি থ্রিলারের ব্যবচ্ছেদ না করে বরং তার প্রাপ্য কিছু মতামত তুলে ধরার চেষ্টা করব ।
আজকে থ্রিলারের কথা বলবো টা হল মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের দ্বিতীয় থ্রিলার 'কন্ট্রাক্ট', যেখানে মূল চরিত্র আগের বইয়ের মতই দুইটি - বাস্টার্ড ওরফে বাবলু এবং ইন্সপেক্টর জেফরি বেগ । আগের বইয়ে বাস্টার্ড একটা খুন করে ভারতে পালিয়ে যায় । বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ একজনের সহায়তায় সে ওখানে থাকে । ওখানকার সবাই তাকে বাংলাদেশের কর্মকর্তাই ভাবে । যা হোক কাহিনির শুরু ওখান থেকেই ।
মূলত দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিগ্রস্থ স্বামী দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার জন্য একটা ষড়যন্ত্র করেন। উনি দেশে মিঃ টেন পারসেণ্ট নামে পরিচিত থাকে । উনার জন্যই মূলত দল গত নির্বাচনে হেরে যায় । জেলে বসেই উনি এই পরিকল্পনা করেন । কিন্তু অমূল্য বাবু নামে সেই ক্ষমতাধর ব্যক্তি সেই খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন ।
প্রধানমন্ত্রী যে কোন মূল্যে এটা ঠেকানোর উপায় বের করতে বলেন । তখন অমূল্য বাবু বাস্টার্ডের কথা বলেন । প্রধানমন্ত্রী খুব গোপনে এটা করতে বলেন । হোমিসাইডের চৌকস কর্মকর্তা জেফরি বেগ এটা অনেক পড়ে জানে । এই নিয়ে টানাপোড়ন এবং গল্প আগাতে থাকে।
ব্ল্যাক রঞ্জুর ফেরত আসাটা অনেকটাই নাটকীয় । যা হোক প্রথমে এই কাহিনি উপলব্ধি করা সহজ নয় । সে হিসেবে গল্পের বাঁক আছে । বেশ ভালো ভাবেই আছে । নতুন নতুন টানাপোড়ন গল্পকে বেশ উপভোগ্য করে তুলে সন্দেহ নেই ।
চরিত্রগুলোর মাঝে বাস্টার্ড এবং জেফরি বেগ যতটা বিকশিত বাকিগুলো ততটা নয় । উমার বাস্টার্ডের জীবনে আসাটা ভালো লাগে । বাস্টার্ডের জীবন কাহিনি ব্যাখ্যা করা হয়েছে । কীভাবে ঢাকা শহরে একজন ক্রিমিনাল হয়ে উঠে তার ব্যাখ্যা । এখানে একটা জিনিস খুব লক্ষণীয় ।
গত বইয়ে জেফরিকে যেমন ক্রিমিনালের সাথে সাথে নির্দয় হিসেবে দেখান হয়েছে এখানে সেটা না করে লেখক তাকে বরং 'মানুষ' হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন ।
গল্পের আরেক প্রধান চরিত্র জেফরি বেগের গল্পে প্রবেশ একটু পরে । কিন্তু নিজের জায়গা নিতে এই চরিত্র এতটুকু সময় নেয় নি । তার প্রেয়সী রেবা এবং অফিসে তার সাথে খুনসুটি করা এডলিন ডি কস্টা মাঝে মাঝে আপনার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি দিবেই ।
সে তুলনায় জেফরি বেগের সহকারি জামান, কামাল কিংবা বাস্টার্ডের ডাক্তার জিলানি, গল্পের শুরুতে লেডি গিয়াস, সুলতান প্রমুখ গল্পে ততটা গুরুতপায় নি ।
জামান, কামাল সারা গল্প জুড়ে থাকলেও তেমন প্রভাব বিস্তার করে নি । বাকি চরিত্রগুলো প্রয়োজনে এসে আবার প্রয়োজন শেষে চলে গেছে । অমূল্য বাবুর সময়ে আমার বারবার ভিটো করলিওনির কথা মনে পড়েছে ।
পুরনো ঢাকাকে গুরুত্ব দিয়ে লেখা এই লেখকের একটি বৈশিষ্ট্য । এটা আমার ভালই লেগেছে ।
সত্যিকার অর্থে উনি জায়গার বর্ণনা বেশ ভালই দেন । এক্ষেত্রে উনি প্রশংশার দাবি রাখে । প্রথম বইয়ে গল্প বলার প্রক্রিয়ায় উনি সরাসরি ফ্রেড্ররিক ফরসাইথ কে অনুসরণ করলেও এই বইয়ে তা করেননি । স্বকীয়তা ছিল । তবে অস্ত্র বা খুনের বর্ণনায় মিঃ ফরসাইথের প্রভাব এখনো থেকে গেছে ।
তবে আবার বলছি দ্বিতীয় বই হিসেবে এটা মার্জনীয় । তাছাড়া উনি এতদিন অনুবাদ করেছেন । তাই ঐ বইগুলোর প্রভাব থাকাটা দোষের কিছু নয় । উনি অনুবাদ খুবই ভালো করেন । নিজস্ব বইয়ের ক্ষেত্রেও এতটা ভালো এত দ্রুত করবেন ভাবা যায়নি ।
যা হোক উনি নিজের একটা ক্ষেত্র থ্রিলার সাহিত্যে করবেন এটা নিসন্দেহে বলা যায় । আমি উনাকে ব্যক্তিগত ভাবে এই বইটা ইংরেজি অনুবাগ করতে বলবো ।
বইয়ের প্রকাশক লেখকের প্রকাশনী 'বাতিঘর', এই প্রকাশনীর বইগুলোর মান ভালো । পৃষ্ঠা ভালো । মুদ্রণে উন্নতির সুযোগ আছে ।
তবে প্রচ্ছদ আরও ভালো হতে পারত । ইংরেজি অনুবাদ করা হলে আমি তাকে বেশ জোর দিয়েই প্রচ্ছদ পরিবর্তন করতে বলবো ।
আর যারা বিদেশি লেখকের থ্রিলার পড়েন তাদের উদ্দেশ্যে একটাই পরামর্শ, বইটা পড়ে দেখতে পারেন । যথেষ্ট ভালো গল্প, চরিত্র, প্লট এবং বাঁক রয়েছে । বাংলা সাহিত্যে আধুনিক থ্রিলার আমি নাজিম উদ্দিনের আগে কাউকে লিখতে দেখেছি বলে মনে হয় না ।
আমাদের সমাজ, রাজনীতির খারাপ দিক, রাজধানীর পুরনো অংশ এবং মানসিক মূল্যবোধ স্থান পেয়েছে এই থ্রিলারে । পড়ে দেখুন । নিজেদের থ্রিলারের উপর আস্থা রাখুন । থিলারটি সত্যি উপভোগ্য ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।