আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিডিজবস ডট কমের ইতি কথা



১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর হওয়ার পর কিছুদিনের জন্য একটা চাকরি করেছিলাম। কিন্তু বরাবরই আমার নতুন কিছু করার ইচ্ছা ছিল। ইচ্ছাটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর প্রবল হলো। তাই পরের বছরই আমরা আট বন্ধু মিলে ঠিক করলাম চাকরির ওয়েবসাইট করব। সে সময় ইন্টারনেটের ব্যবহার খুবই সীমিত ছিল।

তাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু করার বিষয়টাও বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু আমার মনে বিশ্বাস ছিল, আর যা-ই হোক চাকরির মতো বিষয়টি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজে পেঁৗছে দেওয়া গেলে এর ব্যবহার বাড়বেই। ১৯৯৯ সালে শুরু হলো ওয়েব পোর্টাল বিডিজবস ডট কম। আমরা তাড়াহুড়া না করে আস্তে আস্তে এগোনোর কৌশল নিলাম। তাই শুরুতেই বেশি বিনিয়োগ করিনি।

আমার মনে হয়, এই কৌশলটির কারণেই বিডিজবস আজকের এ অবস্থানে এসে পেঁৗছেছে। কারণ আমাদের দেশে ইন্টারনেট অবলম্বন করে কিছু করতে গেলে এর ১০টির মধ্যে আটটিই ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতাকে সব সময়ই ভয় পাই। শুরুতে পত্রিকায় যেসব চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, সেগুলো ওয়েবসাইটে আপলোড করতে শুরু করলাম। এর পাশাপাশি বিভিন্ন কম্পানির মানবসম্পদ বিভাগ বা পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করলাম।

শুরুতে কম্পানিগুলোকে তাদের চাকরির বিজ্ঞপ্তি ফ্রি আপলোড করার প্রস্তাব দিতাম। কারণ এর মাধ্যমে কী পরিমাণ সাড়া পাওয়া যায় সেটি বুঝানোর জন্য। আইডিয়াটা কাজেও দিল। তবে আমরা প্রথম থেকেই একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, চাকরিপ্রার্থী নয়, চাকরিদাতার কাছ থেকে আমরা বিজ্ঞপ্তি আপলোড বাবদ টাকা নেব। দু-তিন বছর এভাবে চলতে লাগল।

এর মধ্যে প্রতিদিনই ওয়েবসাইট পরিদর্শনকারীর সংখ্যা বাড়তে লাগল। আমাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়তে লাগল। ২০০৩ সাল থেকে আমরা বিভিন্ন কম্পানির কাছে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বাবদ টাকা নিতে শুরু করলাম। মূলত সে সময় থেকেই এটি লাভের মুখ দেখতে লাগল। কম্পানি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর কর্মীসংখ্যাও বাড়তে লাগল।

বর্তমানে এখানে ৪৫ জন কর্মী কাজ করছে। বর্তমানে অনেকগুলো চাকরির ওয়েবসাইট হয়েছে। ওয়েবসাইটের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। আর ভালো করার প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো থাকছেই। এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে সাড়ে তিন লাখ সিভি জমা পড়েছে।

কম্পানিগুলো যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়, আমরা নিজেরাই সিভিগুলো থেকে উপযুক্ত সিভি বাছাই করে কম্পানিতে পেঁৗছে দিই। যাঁরা সিভি জমা দেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রার্থীরা বানান যাচাই না করেই সিভি জমা দেন। ফলে ভুল বানান বা বাক্যসহ সিভি জমা পড়ে, যা চাকরিদাতার কাছে প্রার্থীর অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দেশে সবচেয়ে বেশি চাকরির বিজ্ঞপ্তি আসছে আইটি ও গার্মেন্টস-সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু এ দুটি ক্ষেত্রে চাকরির তুলনায় প্রার্থী খুব কম।

তাই আমার পরামর্শ, সাধারণ বিবিএ, এমবিএ না পড়ে আইটি এবং তৈরি পোশাক খাতসম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার জন্য। স্নাতক পাসের পর আমাদের দেশে প্রফেশনাল কোর্স করার জায়গা কম। এটি লক্ষ করে যেসব বিষয়ের চাহিদা বেশি সেগুলোর ওপর আমরা কোর্স করাই। প্রতি মাসে আমরা ১৫ থেকে ২০টি ট্রেনিং করাই, যেখানে প্রায় ৫০০ প্রার্থী অংশ নেন। প্রতিদিন গড়ে আমাদের ওয়েবে নতুন ১৫০টির মতো চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

আর ওয়েব পরিদর্শন করে গড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার চাকরিপ্রার্থী। আমরা বিডিজবসে যেসব চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করি, তার বেশির ভাগই স্নাতক উত্তীর্ণদের জন্য। আমরা এ ধারা ভেঙে আগামীতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন সাধারণ মানুষের চাকরি উপযোগী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চাই। এ জন্য কিছুদিন আগেই আমরা বাংলায় চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে শুরু করেছি। এ জায়গায় পিয়ন থেকে ঝাড়ুদার বা নিচের পদগুলোর চাকরির খবরও প্রকাশ করা হয়।

আগামীতে আমরা আইটি-সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করতে চাই। এ জন্য প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনাও চলছে। এখনই সেসব বিষয় নিয়ে বলতে চাই না। আর বেসিসের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার সুবাদে বলব, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা যারা দিচ্ছে, পরীক্ষার পরপরই দেশের বিভিন্ন জেলায় 'আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার নিয়ে' বেসিসের পক্ষ থেকে কর্মশালা করার পরিকল্পনা আছে। আর বাংলাদেশকে আক্ষরিক অর্থে ডিজিটাল করতে হলে সরকারিভাবে গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেটে পেঁৗছে দিতে হবে।

শুধু কম্পিউটার আর সংযোগ দিলেই হবে না, সবার আগে দরকার ইন্টারনেট সংযোগের দাম কমানো। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো আমরা অনেক বেশি দামে সংযোগ নিচ্ছি। বর্তমানে সরকার অনেকটা দাম কমালেও আইএসপি বা যারা সংযোগ দিচ্ছে তারা দাম কমাচ্ছে না। সরকারের এ দিকটিতে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। সুত্র: কা.ক.



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।