আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডেসটিনির আরেক প্রতারণা

ডেসটিনির আরেকটি প্রতারণা ধরা পড়েছে। ফরিদপুরের নিহাজ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের ৭৫ শতাংশ শেয়ার ডেসটিনি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কিনে নিয়েছে।
ডেসটিনির এই জালিয়াতির ফলে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। সোনালী ব্যাংক তার পাওনা ১৯ কোটি টাকা আদায়ের জন্য প্রকৃত ব্যক্তি খুঁজে পাচ্ছে না। প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে নিহাজ জুট স্পিনার্স চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।


প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বিক্রি হয়েছে জালিয়াতির মাধ্যমে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর আদালত নিহাজ জুট স্পিনার্সের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন, যার একাংশের মালিক আবার ডেসটিনি নয়। ফলে বিপাকে পড়েছে নিহাজ জুট কর্তৃপক্ষ।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সোনালী ব্যাংক এবং নিহাজ জুট স্পিনার্সের মধ্যকার চিঠি চালাচালি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০০৪ সালে কোম্পানি গঠনের পর ২০০৭ সাল থেকে উৎপাদন ও রপ্তানি শুরু করে নিহাজ। ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ায় সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুর শাখার কাছে প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় সম্পত্তি বন্ধক ছিল।
শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ: ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে অংশীদার খুঁজতে থাকেন নিহাজ জুটের চেয়ারম্যান এস সহিদুজ্জামান চয়ন। ডেসটিনি গ্রুপের পরিচালক শেখ তৈয়েবুর রহমানের শ্যালক মিজানুল ইসলামের মাধ্যমে সহিদুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় হয় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আমীনের। একই বছরের আগস্টে রফিকুল আমীনসহ ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের কোষাধ্যক্ষ আকবর হোসেন ও সচিব জাকির হোসেন নিহাজ জুট স্পিনার্স পরিদর্শন করেন।


২০১০ সালের অক্টোবরে সহিদুজ্জামানের কাছ থেকে নিহাজ জুটের ৭৫ শতাংশ শেয়ার কেনার চুক্তি হয় ডেসটিনির, যার সাক্ষী ডেসটিনি গ্রুপের কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান এবং ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মিজানুর রহমান। মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। শর্ত থাকে, সোনালী ব্যাংকের দেনা পরিশোধের পর মালিকানা হস্তান্তর হবে।
অবৈধভাবে শেয়ার হস্তান্তর: নিয়মানুযায়ী সোনালী ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নিয়ে ৭৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর হওয়ার কথা। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ে (রেজসকো) ২০১০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শেয়ার হস্তান্তর হয়।

রেজসকোর চাওয়া অনুযায়ী সংস্থাটিতে জমা দেওয়া হয় সোনালী ব্যাংকের এনওসি।
যোগাযোগ করলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক এ ব্যাপারে কখনোই কোনো এনওসি দেয়নি। নিহাজের চেয়ারম্যান যদি প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেও থাকেন, তা অবৈধ। ’
নিহাজ জুটের চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও জানান, তাঁকে ফাঁকি দিয়ে সোনালী ব্যাংকের নকল প্যাডে ভুয়া এনওসি তৈরি করে ডেসটিনি, যে সময় তিনি দেশে ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ঋণ আনুপাতিক হারে পরিশোধের কথা থাকলেও ডেসটিনি তা না করেই শেয়ার হস্তান্তর করে নিয়ে গেছে।


নিহাজকে সোনালী ব্যাংকের চিঠি: ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিহাজকে চিঠি দেয় সোনালী ব্যাংক। এতে বলা হয়, ‘ঋণ হিসাব অনিয়মিত থাকায় ও চলতি পাট মৌসুমে ঋণসীমা নবায়ন না করায় কোম্পানির শেয়ার ডেসটিনি গ্রুপ বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নামে হস্তান্তরের অনুমোদনের কোনো অবকাশ নেই। ’
এই চিঠির আগেই ৭৫ শতাংশ শেয়ার ডেসটিনির নামে হস্তান্তর হয়ে যায় এবং পাল্টে যায় প্রতিষ্ঠানের নাম। নিহাজ জুট স্পিনার্স লি. হয়ে যায় ডেসটিনি নিহাজ জুট স্পিনার্স লি.।
নিহাজের চেয়ারম্যানকে আবার চিঠি পাঠায় সোনালী ব্যাংক।

এতে উল্লেখ করা হয়, ঋণচুক্তির বরখেলাপ করে প্রতিষ্ঠানের সামনে ‘ডেসটিনি নিহাজ জুট স্পিনার্স লি.’ সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। অবিলম্বে ‘নিহাজ জুট স্পিনার্স লি.’ এবং ‘অর্থায়নে সোনালী ব্যাংক’—এই শব্দগুলো উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টানাতে হবে।
একই বছরের ২৫ আগস্ট এ বিষয়ে আবারও তাগাদা দেয় সোনালী ব্যাংক। ২০১২ সালের ২৪ মার্চ সোনালী ব্যাংক আবারও চিঠি পাঠায় নিহাজের চেয়ারম্যানকে। এতে বলা হয়, ‘আপনাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ও শেয়ার হস্তান্তর ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখনো অনুমোদন করেনি।

এ অবস্থায় নাম পরিবর্তন শুধু অবৈধ নয় বরং প্রবঞ্চনামূলক। ’
প্রতারণা ডেসটিনির, দায় নিহাজের: নিহাজ জুটের কাছে সোনালী ব্যাংক বর্তমানে সুদাসলে ১৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ বিষয়ে এস সহিদুজ্জামান বলেন, বেতন, মজুরি, কাঁচামাল কেনাসহ মাসে খরচ হয় এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অথচ ডেসটিনির প্রতারণার কারণে প্রতিষ্ঠানের এক কোটি ৫০ লাখ টাকা জব্দ হয়ে আছে। আদালতের রায়ের বিপরীতে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, বিষয়টি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।


ডেসটিনি গ্রুপের কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কোনো জালিয়াতি করেননি এবং ব্যাংকের এনওসির মাধ্যমেই শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে।
রেজসকো নিবন্ধক বিজন কুমার বৈশ্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকলে ওই ব্যাংকের এনওসি ছাড়া শেয়ার হস্তান্তর হয় না, এ ক্ষেত্রেও হয়নি। ’ ভুয়া এনওসি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিবন্ধক বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক বা কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেতে পারে। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.