আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুল সংশোধন। (একটি রোমান্টিক গল্প)


চৈত্র্যর এক দুপুরে বাইরে থেকে ফিরে খুব ক্লান্ত লাগতে ছিল। গায়ের র্শাট ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেগে গিয়েছে। শার্ট খুলে আলনায় রাখলাম। চেয়ারে বসতেই চোখ পড়লো বিছানায়। অবাক হয়ে দেখি আমার বিছানায় সাদা পরীর মত একটি মেয়ে ঘুমিয়ে আছে।

ভারি সুন্দর তার চেহারা। বাড়ীতে এই রুম টা আমার একান্ত পারসোনাল এখানে প্রবেশ অধিকার সংরক্ষিত। এই রুমে সচারাচর কেউ আসে না আর এই মেয়েটা কিনা ঘুমিয়ে আছে। ব্রেন র্সাচ করে কোন কিনারা করতে পারলামনা। আমি আবার তার দিকে তাকালাম, নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিলনা আমার! এত সুন্দরী কাউকে এ জীবনে দেখিনি।

অনেকক্ষন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। মন বললো ওবায়দুর তুই মনে মনে যাকে এতো দিন খুজেছিস এই হলো সেই অপ্সরী। আমার বাইস বছরের এই জীবনে কোন মেয়েকেই এতটা ভালো লাগেনী। ইতিপূর্বে বন্ধুরা যখন প্রেম করতো আমি তখন সিকিউরিটি গার্ডের মতন পাহারা দিতাম। ওদের হাত ধরাধরি করে পথ চলা, হুট ফেলা রিকসায় কাধে হাত দিয়ে ফিস ফিসিয়ে কথা বলা! আহা ঈর্ষা হত খুব।

মনে মনে তাই শপথ নিয়েই ফেললাম যে এই মেয়েকে আমার চাই। রান্না ঘড়ে গিয়ে আরেক দফা অবাক হলাম। অপরুপ এক সুন্দরী মহিলা চেয়ারে বসে আছে। মা পরিচয় করিয়ে দিলেন বললেন এই হচেছ তোর রফিক মামার বউ। রফিক মামা হলো মায়ের চাচাতো ভাই।

আমি তাকে সালাম দিয়ে বললাম মামানি কেমন আছেন? সে উত্তর দিয়ে বললো তুমি ঢাকায় থাকো আমাদের বাসায় যাবে। এরপর ডায়নীং টেবিলে খাবার সময় দেখি সেই মেয়েটি প্লেট সামনে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে আমার গলা দিয় যেন ভাত নামতে চাইতে ছিলনা। মামা আমার চাকুরীর সহ সব খোজ খবর নিলেন। মেয়েটার দিকে যতবারই চোখ পড়ল দেখি সে শুধু হাসছে।

আমাদের বাড়ীর দক্ষিণ দিকে নারিকেল গাছের বাগান। বাগানের সামনে বিশাল খোলা মাঠ। শুপারী গাছের কাঠের তৈরী বেঞ্ছ, আমি সেখানে বসে উদাশ নয়নে তাকিয়ে ছিলাম এমন সময় সে এসে আমার সামনে দাড়ালো। বললো কি করেন একা একা? আমি তার দিকে তাকালাম সে তার সাদা থ্রী পিস বদলে এখন পরেছে হলুদ রংয়ের থ্রী পিস। তাকে হলুদ ড্রেসে আরো বেশি সুন্দর লাগছিল।

আমার পাশে বশে বললো আপনাদের বাড়ি টা নাকি আগে কোন জমিদারের বাড়ি ছিল? আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। আমি আবার এখানে বেড়াতে আসবো। আপনি ঢাকায় কোথায় থাকেন? -গুলশান এক নাম্বারে। Ñআমরা থাকি মিরপুরে। আমাদের বাসায় অবশ্যই যাবেন।

-ঠিক আছে যাবো। ঢাকায় আমার রিলেটিভ কেউ তেমন একটা নাই। বুয়ার আজেবাজে রান্না খেয়ে প্রায়ই হাপিয়ে উঠি। তখন নাহয় তোমাদের বাসায় গিয়ে একেবেলা ভালো করে পেট ভরে ভাত খেয়ে আসবো। আমার কথা শুনে হি: হি: করে হাসলো সে।

আমি বিস্ময় ভরা দৃষ্টি নিয়ে তার হাসি দেখতে ছিলাম,কোন মেয়ের হাসি যে এত সুন্দর হতে পারে আমি তা ভাবতে পারিনি। -কি হলো কথা বলছেন না যে? আমি তার উত্তর না দিয়ে দৈাড়ে গিয়ে আমার নিজ হাতে গড়া বাগান থেকে পাচ টি গোলাপ ফুল এনে তার হাতে দিলাম। সে ফুল দেখে বিস্ময় ভরা কÚে বললো - থ্যাঙ্ক ইউ মামা! মামা ? আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বললাম“ মামা! মানে কি বললে?” সে হেসে বললো আপনার শফিক মামাতো আমার দুলা ভাই। আমি যেন মুর্হূতেই সাত আসমান থেকে জমিনে পড়লাম। কাচের টুকরোর মত আমার হ^দয়টাও টুকরো হয়ে বেঞ্চের চার পাশে ছড়িয়ে পড়লো।

মনকে প্রবোধ দেবার ভাষা খুজে পাচ্ছিলামনা। ভালোবাসার চারা গাছটার উপর এভাবে মেয়েটা বুলড্রেজার চালিয়ে দিবে ভাবতে পারিনী। সে আবার বলে আপনার বাগানে দখলাম সাইনবোর্ড লাগানো আছে ফুল ছেড়া নিষেদ,আপনী নিষেদ অমান্য করলেন কেন?হিঃ হিঃ। আমি তার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললাম তুমি কারনে অকারনে এতো হাসো কেন? সে হিঃ হিঃ করে আবার হেসে বললো- আপনাকে মামা ডাকতে ইচ্ছে করেনা। এতো ইয়ং একজনকে মামা ডাকা সম্ভব না।

হিঃ হিঃ । আমি যেন প্রান ফিরে পেলাম, ডাংগায় উঠে যাওয়া মাছ আবার পানি পেলে যেমন শ্বাস নেয় আমি তেমনী করে শ্বাস নিয়ে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকালাম। সে বললো আপনিতো আমার নামটাই জানতে চাইলেন না। আমি নীলিমা। -শোন নীলিমা তোমার মতন এমন সুন্দরী কেউ আমাকে মামা ডাকুক আমিও তা চাই না।

তাহলে কি বলে ডাকবো? নাম ধরে ডাকো বলো ওবায়দুর। -এতো বড় নাম আমি বলতে পারবোনা। আমি বলবো বাদুর হিঃ হিঃ ! গোলাপ আমার প্রিয় ফুল। উত্তরে হেসে বলি আমিও একদিন তোমার প্রিয় কেউ হবো। ওর সাথে এভাবেই আমার অন্যরকম একটা বন্ধুত হয়।

এবং এক সময় তা ভালোবাসাতে গড়ায়। নীলিমার ভালোবাসায় নিমজ্জিত আমি নিজেকে নিয়ে ভাবনা বোধ করি ছেড়েই দিলাম। আমার সকল ভাবনা কেবল তাকে নিয়েই। দিন গুলো কাটতে ছিল স্বপ্নের মত। নীলিমাকে নিয়ে ঢাকা শহরের দর্শনীয় সব জায়গা গুলো ঘুরে বেড়ালাম।

ও পাশে থাকলে আমি ভুলে য়েতাম যে আমি স্বল্প বেতনের একজন অফিসার। নীলিমার সকল পাগলামী খাম খেয়ালী আচরন আমি মেনে নিতাম। রিকসায় বসে ওর গলা জড়িয়ে ধরা, র্পাকের বেঞ্চিতে বশে কিস করা। আমার ব্যাচেলর বাসায় এসে ওর রান্না করে খাওয়নো। অদ্ভুদ ভালোলাগা আর্চ্ছন্য করে রাখতো আমায়।

ভালোবাসা নিয়ে দুঃখ ছিল সত্যি কিন্ত এখন মাঝে মধ্যি মনে হয় বেশি হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই তিন বছর কেটে গেল। ওদের বাসায় এখন আর আগের মতন যাইনা পাছে ওর কোন আচরনে সবার সামনে এই অসম প্রেম ধরা খাই। তারপরও সেদিন বিকেলে গেলাম ওদের বাসায়। গিয়ে দেখি মহা ধুম-ধাম।

নীলিমাকে দেখলাম মহা বাস্ত্য। শোফায় বসে ছিলাম ও একজন সুদশর্ন ছেলের হাত ধরে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো এটা হচ্ছে আমার সবচেয়ে ভালো মামাতো ভাই মামুন। কিছুকক্ষন কথা বলো দেখবা তুমি ওর প্রেমে পড়ে গেছো, অসাধারন মানুষ মামুন ভাই! নীলিমা এত হাওয়া দিস না ফেটে যাবো। মামুন সাহেব প্রতিবাদ করে। নীলিমা আমাদের রেখে ভেতরে যায়।

মামুন সাহেব কথায় অনেক কথা বললেন তিনি জানালেন ইটালী থেকে এসেছেন বিয়ে করতে। আমি বললাম মেয়ে দেখেছেন? সে হেসে বলে মেয়ে কি দেখবো? মেয়েতো দেখাই। মানে? প্রশ্ন করি আমি। মামুন সাহেব লাজুক হেসে বলেন নীলিমার সাথেতো আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। ১১০০০ ভোল্টেজের শক খেলাম যেন।

নির্বাক নিশ্চুব হয়ে গেলাম। হ^দয় নহরটা যেন হটাৎ শুকিয়ে বালুচর হয়ে গেল। কাউকে কিছু না বলে বাসায় চলে এলাম। তিন দিন অফিসে গেলাম না। চতুর্থ দিন বিগ বসের জরুরি ফোন পেয়ে অফিসে গেলাম।

অভিমানে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল, কিন্তু কি আশ্চর্য্য নীলিমা আমাকে একটাবার ফোন করেও তো সরি‌্য বলতে পারতো! যেই মেয়ে দিনে পাচ বার ফোন দিতো সে কিনা একটা বার ও ফোন করলো না? প্রতিজ্ঞা করলাম ঠিক আছে না দিক, আমিও ফোন করবো না। প্রতারক বেঈমানের সাথে আর নয়। মুখে এসব প্রতিজ্ঞা করলাম বটে কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন ছিলো। ওর পাগল করা ভালোবাসা ভুলতে পারতে পাছিলাম না। গন্ধম না খেয়েও বিনা দোষে স্বর্গ থেকে নরকে এসে পরলাম।

নীলিমাকে ভুলে থাকতে প্রথম দিকে খুবেই কষ্ট হয়েছে। তারপর ধিরে ধিরে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসলো। পাচ মাস পরের ঘটনা। মায়ের জরুরি ফোনে বাড়িতে গেলাম, বোনের জামাইরা প্রায় জোর করে আমাকে পাত্রী দেখাতে নিয়ে গেলো। পাত্রী সুন্দরী বলে দুলাভাইরা রাজী হয়ে গেলেন।

তাদের কাছে সময় চেয়ে ঢাকায় চলে এলাম। নীলিমাকে ভুলতে হয়ত কোন দিনই পারবো না। সমস্ত হ^দয় জুড়ে ওরেই অনুভব করছি। তখন তিনটার মত বাজে রুমে শুয়ে শুয়ে এসব ভাবতে ছিলাম, এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে উঠে দরজা খুলতেই ব্যাগ হাতে পাগলের মত আমার রুমে ঢুকলো নীলিমা। আমি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।

ব্যাগ ফ্লোরে ফেলে ও আমার সামনে দাড়িয়ে বলল বেঈমান ইতর তুই নাকি দেশে গিয়ে মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছিস? -তাতে তোমার কি? -আমার কি মানে? তুমি প্রেম করবা আমার সাথে আর বিয়ে করবে অন্যজনকে? আমি বেচে থাকতে তা স¤ভব নয়। -কেন তোমার তো মামুন সাহেব এর সাথে বিয়ে ঠিক। -বিয়ে ঠিক শুনেই ভয়ে পালিয়েছো না? তোমার জন্য সবার মাইর খাইছি। ওরা অমানুষের মত আচরন করে আমার মোবাইল নিয়ে গেছে। আমাকে রুমে আটকে রেখে সবাই গালাগাল দিয়েছে।

কাপুরুষ! একবার খোজতো নিলোই না এখন আবার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছে? ছোটলোক! ওর চোখে জ্বলের স্রোত বয়ে যায়। ভাষাহীন নির্বাক আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও ঝাপিয়ে পড়লো আমার বুকের উপর। শার্ট ভিজিয়ে ফেললো চোখর পানি দিয়ে। টব থেকে দুটো গোলাপ নিয়ে ওর হাতে দিয়ে বললাম সরি‌্য, আমার বড় ভুল হয়ে গেছে।

এমন সময় আমার মোবাইলে রিং বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই মা বললো ওবায়দুর বিয়ের ডেট কবে দিবো তোর বোন জামাইরাতো চাপচাপি শুরু করছে। নীলিমা ফোন টা নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিলো। ১১৫০০ টাকা দামের সেটের জন্য একটু ও দুঃখ হলনা। বরং হাসি পেল যখন দেখলাম নীলিমাকে দেয়া বাসি গোলাপটা দুটোর পাপড়ি ঝরে পড়ছে।

বোটা দুটো নিয়ে নীলিমা দাড়িয়ে আছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম তাহলে দেরি কেন চল কাজী অফিসে যাই। গল্পটি আজকের মৌচাকে ঢিলের ৩৭পৃষ্টায় ছাপা হয়েছে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।