আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবাণুনাশকের অকার্যকারিতা ও এর বিশ্বব্যাপী বিস্তার

ইচ্ছে করে হারিয়ে যাই তোমার সীমানায়
আজ ৭ই এপ্রিল। বিশ্বস্বাস্থ্য দিবস। এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- “জীবাণুনাশকের অকার্যকারিতা ও এর বিশ্বব্যাপী বিস্তার”। চারপাশ থেকে আমাদের শরীরে প্রতিনিয়তই জীবাণুর আক্রমণ চলছে- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবি ও ফাঙ্গাস দ্বারা। কিন্তু শরীরের নিজস্ব সহজাত ক্ষমতা তা প্রতিরোধ করে।

আর যখন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তখনই লাগে নির্দিষ্ট ঔষধ দিয়ে জীবাণু মারার প্রচেষ্টা চালানো। যখন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্নভাবে ভেঙ্গে পড়ে তখন সর্দি, কাশি বা ফ্লু-র মত সাধারন সংক্রমণেও মানুষ মারা যেতে পারে। যেমনটি এইডস এর ক্ষেত্রে ঘটে। তাই এখনই প্রয়োজন জীবন বাঁচাতে অ্যান্টিবায়োটিকের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিতকরন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকাতে প্রতি বছর সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরন করে।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা পাচ্ছে, রোগের বিস্তার কমছে। কিন্তু বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা অনেক জীবাণু নিয়ন্ত্রনকে অসাধ্য করে তুলেছে। ইচ্ছামত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে যক্ষা, এইচআইভি এইডস, যৌনবাহিত রোগ, কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড ও নিউমোনিয়ার মত রোগ প্রতিরোধে অনেক প্রচলিত ঔষধ ঠিকমত কাজ করছে না। তাই এব্যাপারে আমাদের দ্রুত অধিকতর সচেতন হতে হবে এবং সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। কারন দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক দশক আগে যে ঔষধ রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটিয়েছিলো, আজ তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না।

তাছাড়া অনেক সময় জীবাণুর বিরুদ্ধে ঔষধসমূহ কাজ করে না নানাকারনে। এর প্রধান কারন মূলতঃ অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার, প্রাকৃতিক নিয়মেই জীবাণুদের ঔষধের বিরুদ্ধে আরো অপ্রতিরোধ্য হওয়া ও উক্ত গুণ তাদের বংশ পরস্পরায় বয়ে নিয়ে যাওয়া, প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্পমাত্রার ডোজ ব্যবহার করা, নিম্নমানের ঔষধে সঠিক পরিমানে ঔষধ না থাকা, নির্দিষ্ট রোগের জন্যে সঠিক ঔষধ সেবন ও তার পুরো কোর্স সম্পন্ন না করা। সংক্রমণ প্রতিরোধে দূর্বল নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা, হাঁস-মুরগী, পশু পালন ও মৎস্য চাষে নিম্নমাত্রা ও বিধি বহির্ভূত ঔষধ ব্যবহার, অপ্রতুল রিসার্চের মাধ্যমে নতুন ঔষধ আসতে দেরী হওয়া ও অপ্রতিরোধ্য জীবাণু চিহ্নিত করতে না পারা, হাসপাতালে রোগীর দীর্ঘদিন অবস্থান ইত্যাদি। এসব থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োটিক-এর পরিমিত ব্যবহারের উন্নতিকরন ও অপ্রতিরোধ্য জীবাণুর পরিবাহিত হওয়ায় বাধাদান। আসলে অ্যান্টিবায়োটিকের এমন অবিবেচনাপ্রসূত ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ছে।

সহজে রোগ সারছে না, দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হচ্ছে, মৃত্যুর হার বাড়ছে ও দামী ওষুধের প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। তাই এর অকার্যকারিতা রোধে প্রয়োজন একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োগে চিকিৎসক, ফার্মাসিস্টদেরকে ও সংশ্লিষ্ট অন্যদেরকে দক্ষ করে তোলা। হাসপাতালে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রনে কমিটি গঠন ও এর কার্যক্রম নিশ্চিত করা।

মানসম্মত ঔষধ উৎপাদন, বাজারজাতকরন ও বিধিবদ্ধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রয়োগ করা। তা না হলে কোন পার্থক্য থাকবে না পৌরণিক কাল ও ভবিষ্যতের মাঝে। বহু বছর আগে মানুষ মারা যেত অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ছিল না বলে অতি সাধারন রোগে ভুগে । আর ভবিষ্যতে মানুষ মরবে এর অপব্যবহারের ফলে অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও জীবাণুর বিরুদ্ধে কোন কাজ হবে না বলে। অতএব সাধু সাবধান! এখনই সময় সমাজের সবাইকে সচেতন করার।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.