আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিনীর হরতাল, নারী অধিকার আইন ও আমাদের বুঝ

ছোট ছোট ভাবনাগুলো, কথায় প্রকাশের প্রয়াস....

দেশে সেদিন ফজলুল হক আমিনীর ডাকে হরতাল পালিত হলো। বিদেশে থাকার কারণে হরতাল এখন আর মনে তেমন আঁচর কাটে না। কিন্তু তারপরেও এই একটা হরতালের খবর অনেক আগ্রহ নিয়ে পরলাম। পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামী জঙ্গিবাদ গত কয়েক বছরে দানা বেঁধে উঠতে শুরু করেছে। মজার ব্যাপার এই যে এই জঙ্গিবাদ এর মূলমন্ত্রের সাথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এর একটা ঘোষণার অনেক মিল আছে. ৯/১১ এর পরে বুশ বলেছিলেন, "হয় তোমরা আমাদের সাথে, নয়তো তোমরা আমাদের বিপক্ষে"।

আজকের জঙ্গিবাদের মূলমন্ত্রও তাই: "হয় তুমি আমার মতন কট্টরপন্থী মুসলমান, নয়তো তুমি কাফের"। আমাদের দেশে এককালে হরতাল পালন করা হত। মহাত্মা গান্ধীর আমলে ব্রিটিশদের তাড়াতে দেশের মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে হরতাল পালন করেছে। পাকিস্তান আমলেও দেশের বেশিরভাগ মানুষ হরতাল পালন করেছে (বেশিরভাগ বলছি এই কারণে যে আমিনী, নিজামী, ও গোলাম আজমের অনুসারীরা হয়ত পালন করেননি)। কিন্তু আজকে আমাদের দেশে হরতাল আর "পালন" করা হয় না।

হরতাল দেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়. গুটিকতক মানুষ লাঠিসোঠা হাতে যদি রাস্তায় নামে, আমজনতা কিন্তু রাস্তা ছেড়ে দিয়েই দাড়াবে, তাদের পথ রুদ্ধ করবে না। আমি নিজেও বিদেশে থেকে দেশে আমার বাবা-মাকে বলি ঐদিন বাইরে যেন না যায়। ফজলুল হক আমিনীর ডাকা হরতাল ছিল ঠিক তেমনি একটি চাপিয়ে দেয়া হরতাল। পত্রিকায় ছবি দেখলাম ছোট-ছোট ছেলেরা মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে হরতাল এর পিকেটিং করছে। এই ছেলেগুলোকে কি বলা হয়েছে? বলা হয়েছে, এই সরকার দেশের থেকে ইসলাম বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

কিন্তু আসলে সরকার কি করেছে যে ইসলাম বিতাড়িত হবে দেশ থেকে? নারী আইন প্রনয়ন নিয়ে আসলে কি হয়েছে সেটা কি তাদেরকে বোঝানো হয়েছে? মাদ্রাসার ছাত্র বাদ দেই, আমাদের দেশের জনগণ কতখানি বুঝেছে যে আসলে কি পরিবর্তন করা হয়েছে? একজন শিক্ষক এর কাজ ছাত্রকে বোঝানো। সরকারেরও দায়িত্ব জনগণকে বোঝানো যে সে কি করছে অথবা কি করতে যাচ্ছে। এবং একটা নতুন ধারণা বোঝানোর সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে উদাহরণ দিয়ে বোঝানো। এখন এত টিভি চ্যানেল, কিন্তু কেউ কি একটা প্রোগ্রামে দুইটা উদাহরণ দিয়ে জনগণকে বুঝিয়েছেন যে আগের আইনে এইটা হত, প্রস্তাবিত আইনে এইটা হবে? আমি যতদুর জানি (ভুল হলে ব্লগার ভাইবোনরা ভুল ধরিয়ে দিবেন দয়া করে) নারী অধিকার আইনে বলা হয়েছে যে একজন ব্যক্তির উত্তরাধিকার প্রশ্নে তাঁর পুত্রসন্তান ও কন্যাসন্তান সমান অংশ পাবে। ইসলামী আইনে কন্যাসন্তান কম অংশ পায়।

কিন্তু আমাদের দেশের সবচেয়ে ধার্মিক পিতাকেও আপনি যখন এই ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিবেন, তখন তিনি তাঁর কন্যাসন্তান এর দিকে একবার তাঁকিয়ে সরকারের নীতির সাথে একমত পোষণ করবেন। জোর গলায় বলবেন "হ্যা, আমার মেয়েও আমার সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাক। " কিন্তু ব্যাপারটা তো আগে তাঁকে বোঝাতে হবে। এই কাজটাই কেউ কেন করেন না? টিভি চানেলগুলো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে অনেক ইনভেস্ট করে। এক চানেল থেকে সাংবাদিক ভাগিয়ে অন্য চানেলে নিয়ে যাবার জন্যও তাঁরা বেশ ত্ৎপর।

কিন্তু ভিজুয়াল এইড এর মাধ্যমে মানুষকে বোঝানোতে তাঁরা এখনো এত পিছিয়ে কেন আমি বুঝি না। এবং এইখানে সরকারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, কারণ গরজটা তাঁদের। তাঁদেরই দায়িত্ব নেয়া উচিত এই বিষয়ে। জনগণকে বুঝিয়ে বললেই কিন্তু জনগণ বোঝে। কিন্তু তাঁরা কোনো কিছু বুঝিয়ে বলতে পারেন না বা চান না।

কারণ কোনো কিছু বোঝাতে গেলেই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। এবং এইখানেই উনারা ভয় পান। সমস্যা হয়েছে এই যে জবাবদিহিতা না থাকার ফলে চুরি করতে সরকারের সুবিধা হয় ঠিকই কিন্তু মোটা বুদ্ধির রাজনীতিবিদরা এটা বুঝতে পারেননা যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতিটা তাঁরা যদি তৈরী করতে পারতেন, আখেরে তাদেরই সুবিধা হত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.