আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশিতে সূচিত্রা সেন

বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
বাংলা চলচ্চিত্র সম্ভারে তার অভিনীত ছবির সংখ্যা তেপ্পান্ন। আর হিন্দিতে সাত। সব মিলিয়ে ষাট। চরিত্র রূপায়নে তার সাবলীলতা ও নৈপুণ্য যুগ যুগ ধরে দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করে গেছে। কাহিনীর বৈচিত্র্যে, অভিনয় পারদর্শিতায় সময় ও কাল ছাপিয়ে তিনি অর্জন করেছেন কিংবদন্তীর স্থান।

আজও তাই অধরা চির প্রেয়সীর আসনে তাঁর ঠাঁই। তিনি চির যৌবনা, স্বপ্নকাতর বাঙ্গালির স্বপ্নের রানী। তিনি রমা দাশগুপ্তা। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যিনি সুচিত্রা সেন নামেই পরিচিত। রমা আমাদের বাংলাদেশের মেয়ে।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনার তৎকালীন সিরাজগঞ্জ মহুকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে নানীর বাড়িতে তার জন্ম। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ও মা ইন্দিরা দেবী। বাবা ছিলেন পাবনার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে রমা তৃতীয়। পাবনার ওই বাড়িতেই রমার শৈশব ও কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে।

তিনি পড়তেন পাবনা টাউন গার্লস স্কুলে। দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন রমা পরিবারের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমান। দিবাণাথ সেনের সঙ্গে বিয়ের সুবাদে রমা দাশগুপ্তা হয়ে যান রমা সেন। তখন তাঁরা থাকতেন বালিগঞ্জে। রমার শ্বশুরের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ভাই বিমল রায়।

তিনিই প্রথম রমাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু শ্বশুর আদিণাথ সেনের অনমুতি ছাড়া অভিনয়ে আসা সম্ভব ছিল না। রমা নিজ থেকেই একদিন শ্বশুরকে নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন। শ্বশুরও মত দিলেন। আর বাংলা সিনেমা আজীবনের জন্য ঋণী হয়ে থাকলো অদিণাথ সেনের কাছে।

শ্বশুরের মত পেয়ে রমা যাত্রা শুরু করেন স্টুডিও পাড়ায়। সিনেমায় এসে রমা সেন হয়ে গেলেন সুচিত্রা সেন। 'সাত নম্বর কয়েদি' ছবির পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারী নীতিশ রায় রমার নাম দেন সুচিত্রা। ১৯৫৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত 'সাত নম্বর কয়েদি' তার প্রথম ছবি। তবে সুচিত্রা সেন প্রথম অভিনয় করেন ১৯৫২ সালে বীরেশ্বর বসুর 'শেষ কোথায়' চলচ্চিত্রে।

বিভিন্ন জটিলতার কারণে ছবিটি তখন মুক্তি পায়নি। এর প্রায় ২২ বছর পর ১৯৭৪ সালের ২৫ জানুয়ারি 'শ্রাবণ সন্ধ্যা' নামে ছবিটি মুক্তি পায়। ততদিনে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রে কিংবদন্তির আসনে। 'সাত নম্বর কয়েদি'র পর ওই বছরই তিনি আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। সে বছরই 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছবির মধ্য দিয়েই জন্ম হয় কিংবদন্তি উত্তম-সুচিত্রা জুটির।

বাংলা ছবির রোমান্টিক মেলোড্রামার আইকনে পরিণত হওয়া এখন পর্যন্ত সর্বাধিক জনপ্রিয় এ জুটি বাংলা ছবিকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। উত্তম-সুচিত্রার একগাদা হিট ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম 'সাড়ে চুয়াত্তর', 'ওরা থাকে ওধারে', 'মরনের পরে', 'গৃহ প্রবেশ', 'শাপমোচন', 'হারানো সুর', 'সবার উপরে', 'সপ্তপদী', 'সাগরিকা', 'সাথীহারা', 'আলো আমার আলো', 'হার মানা হার', 'ইন্দ্রানী' প্রভৃতি। এর মধ্যে 'সপ্তপদী' ছবিতে উত্তম-সুচিত্রার কালজয়ী অভিনয় আজও দর্শক ভোলেনি। বাংলা ছবির সর্বকালের অন্যতম সেরা রোমান্টিক ছবির তালিকায় 'সপ্তপদী'র স্থান ওপরের দিকেই থাকবে। সুচিত্রা যখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিকাশ রায়, বসন্ত চৌধুরী, অশোক কুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তখনও দর্শক তাকে সমান আগ্রহে গ্রহণ করেছে।

'সাত পাকে বাঁধা' [১৯৬৩, সৌমিত্র], 'উত্তর ফাল্গুনী] [১৯৬৩, বিকাশ], 'দ্বীপ জ্বেলে যাই' [১৯৫৯, বসন্ত], 'হসপিটাল' [১৯৬০, অশোক কুমার) ছবিগুলো তার উলেল্গখযোগ্য উদাহরণ। দিলীপ কুমারের সঙ্গে 'দেবদাস' [হিন্দি, ১৯৫৫] চলচ্চিত্রের অভিনয় করেছেন পার্বতী চরিত্রে। সুচিত্রা সেনের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ১৯৭৮ সালে পরিচালক মঙ্গল চক্রবর্তীর 'প্রণয় পাশা'। ১৯৬৩ সালে অজয় করের 'সাত পাকে বাঁধা' ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। এটাই ভারতীয় কোনো চলচ্চিত্র শিল্পীর আন্তর্জাতিক আসরে পাওয়া প্রথম স্বীকৃতি।

এছাড়া দীর্ঘ ২৫ বছরের অভিনয় জীবনে নানা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। বর্তমানে বাইরের জগত থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা এ কিংবদন্তীতুল্য অভিনেত্রীর আজ আশিতম জন্মদিন। তাঁর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। (তথ্যসূত্র ওয়েবসাইট এবং দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা) (৩১ মার্চ ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত) *** আমার মুভিবিষয়ক যত পোস্ট***
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।