আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মমত্ববোধ ও দায়িত্ব

সুখীমানুষ

অনেকদিন পর কালের কণ্ঠ পত্রিকায় একটা লেখা পাঠিয়েছিলাম, আজ ছাপাও হলো। আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। ----------- মমত্ববোধ ও দায়িত্ব স্বাভাবিক কাজকর্ম বা চিন্তা করতে যাদের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাদেরই প্রতিবন্ধী বলা হয়। এই হিসাবে বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। একবার কি ভেবে দেখেছেন প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতা ঠেলে ঠেলে এগোচ্ছে।

কিংবা থেমে আছে স্থির হয়ে। রাস্তায় ভিক্ষুক হিসেবে যত প্রতিবন্ধী দেখেন এ তুলনায় আপনার বন্ধু, সহপাঠী বা সহকর্মীর সংখ্যাটা কি নগণ্য? তার মানে কি এই নয় যে শিক্ষা এবং সুযোগের অভাবে প্রতিবন্ধীরা অনেক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন? একজন প্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়ানো যেখানে আমাদের অবশ্য কর্তব্য, সেখানে তারা পাচ্ছে করুণা। একটি সূত্র মতে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে মাত্র চার শতাংশ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। অনেক সচ্ছল পরিবারের প্রতিবন্ধী শিশুটিকেও সামাজিক কারণে দেওয়া হচ্ছে না পাঠশালায়। ফলে আত্ম-উন্নয়নের কোনো সুযোগই পাচ্ছেন না তাঁরা।

হয়তো কোনো একজন স্টিফেন হকিংসকে শিশু অবস্থায়ই অশিক্ষার অন্ধকারে কবর দিয়ে দিচ্ছি আমরা নিজের অগোচরেই। প্রতিবন্ধীদের পাশে এমনভাবে দাঁড়াতে হবে যেন কোনোভাবেই তারা বুঝতে না পারেন যে তাদের আমরা করুণা করছি। কারণ এ আমাদের করুণা নয়, অবশ্যই নয়; এ আমাদের দায়িত্ব। বাবা হয়তো চশমা খুঁজে পাচ্ছেন না, আমার হাতের কাছে চশমাটা ছিল, আমি বাবার হাতে চশমাটা দিয়ে বললাম 'বাবা নাও'। ঠিক তেমনি হয়তো কোনো প্রতিবন্ধী বাসে উঠলেন, আপনি দাঁড়িয়ে বললেন 'ভাই বসেন'।

এর মধ্যে বাড়তি কোনো আদিখ্যেতা যেন না থাকে। এর মধ্যে যেন জড়িয়ে থাকে অসীম মমত্ববোধের আঁচলে বোনা এক মহতী দায়িত্ববোধ। বিশ্ব নেতারা একসঙ্গে এই প্রতিবন্ধীদের নিয়ে প্রথম ভাবা শুরু করেন ১৯৮১ সালে। ১৯৮১ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী বর্ষ উদ্যাপন শেষে ১৯৮২ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৩৭/৫২ নং রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে পৃথিবীর সব প্রতিবন্ধীর পূর্ণ অংশগ্রহণ, সামাজিক সাম্য ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক বিশ্ব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতে বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সব দেশ সমর্থন প্রদান করে।

প্লেনারি সভায় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব নির্ধারণ করে ২২ দফা স্ট্যান্ডার্ড রুলস গৃহীত হয়। পরে ১৯৮৩-১৯৯২ সালকে 'আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দশক' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯২ সালের ১৪ অক্টোবর ৪৭তম অধিবেশনের সিদ্ধান্ত নং ৪৭/৩-এর মাধ্যমে ৩ ডিসেম্বরকে 'আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ২৯ নং ধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমসুযোগ, সম-অংশগ্রহণ ও সম-অধিকারের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীবিষয়ক জাতীয় নীতিমালা, ১৯৯৫ প্রণয়ন করে।

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে এমন ২৫৯টি সংগঠনের সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের প্রস্তাব সাপেক্ষে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার এপ্রিল মাসের প্রথম বুধবারকে জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। ২০০৮ সাল থেকে এ দেশে জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবন্ধীদের শুধু শিক্ষা, যানবাহনে চলাচল ইত্যাদি নিশ্চিত করলেই যে হবে তা নয়। অবশ্যই চাকরির ক্ষেত্রেও দিতে হবে সমান, ক্ষেত্রবিশেষে একটু বেশিই সুযোগ। মো. জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।