আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লেগুনায় ৩৫ মিনিট (আজাইড়া পোস্ট )

I realized it doesn't really matter whether I exist or not.

মাত্র কয়েক বছর আগেই লেগুনা শব্দটির সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত ছিলাম না। অবশ্য এর আগে আদৌ লেগুনা নামে কিছু ছিল না সেই সন্দেহও আছে আমার এখনো। তবে এটা মনে আছে যে, প্রথমবার লেগুনা শব্দটা শোনার পর শব্দটা চেনা চেনা লাগছিল। অনেক চিন্তা-ভাবনার পর আবিষ্কার করলাম লেগুনা না, আমি যেই শব্দটা শুনেছিলাম সেটা হলো ইগুয়ানা। সোর্স তিন গোয়েন্দা।

তখন লেগুনার আকৃতির যানগুলোর নাম ছিল টেম্পু। কালের বিবর্তনে কালো ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে টেম্পুর সংস্কার করা হলো এবং এর নামকরণ হয়ে গেল লেগুনা। আজকে সেই লেগুনারই একটা ঘটনা বলছি। সকালে আলসেমি করে ঘর থেকে বের হয়েছি সাড়ে নয়টায়। গন্তব্য মহাখালী।

স্টার্টিং পয়েন্ট মিরপুর ১। তো এখান থেকে যাবার সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত উপায় হচ্ছে মিরপুর ১ টু মহাখালী লেগুনা। যেহেতু মিরপুর এক নম্বরই প্রথম স্টেশন, তাই গাড়ি পেতে ঝামেলা হবে না ভেবে দেরি করেই বের হলাম। কিন্তু বের হয়ে দেখি এ কী! রাস্তায় তো যেন মহাসমাবেশ হচ্ছে। লেগুনার কোনো খবর নেই।

দু'একটা যাই কোত্থেকে যেন আসে পুরো ভর্তি হয়ে। পরে উল্টোদিকে হাঁটা ধরলাম। স্টপেজে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। উঠতে হলে আগেই উঠতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

সবকিছু আগেভাগেই হয়ে যায়। কিন্তু সনি সিনেমা হলের সামনেও কোনো লেগুনা পেলাম না। একটু খোঁজাখোঁজির পর একটা লেগুনা পাওয়া গেল, কিন্তু সেটা নাকি আধা ঘণ্টা পর যাবে। আগে ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হবে, মোবিল ঢালা হবে, তারপর যাবে। কী আর করা, উঠে বসে রইলাম।

ড্রাইভারের সাথের সিট। পেছনে বসলে জান বের হয়ে যায় তাই ড্রাইভারের সাথের সিটে বসবো ঠিক করেই বের হয়েছি। লেগুনা এনে কলওয়ালাপাড়ার ভেতরের দিকে রাখলো। গাড়ির সবাই নেমে এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি শুরু করলো। আমি সিট হারানোর ভয়ে নামলাম না।

একটু পরে ড্রাইভার চলে গেল। জানালো, ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হলে মোবিল ঢেলে..... আমি চুপচাপ বসে আছি। ব্যস্ত রাস্তা। পাশেই ছোট্ট একটি দোকান। মোবাইল রিচার্জ করা হয়।

তার পাশে দু'টো প্রেস। প্রথমটায় বয়স্কমতো একটা লোক অলস বসে আছে। হাতে কাজকর্ম নেই বোধহয়। অথবা কাজ থাকলেও কর্মচারীরা তখনো পৌঁছেনি। তার পাশের প্রেসে কাজ শুরু হয়ে গেছে।

কর্মচারীদের ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে বাইরে বসেই। উপরে একটা দেয়াল ঘড়ি ঝোলানো। ঘড়িটা চারকোণা আকৃতির। কিছুটা লম্বাটে ধরণের। কাঁটাগুলো যেসব অবস্থানে ছিল তা দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে তা ৯টা ৪০ মিনিট নির্দেশ করছিল।

আমার পাশের রাস্তাটায় তখন ব্যস্ততা। আমি সময় কাটানোর জন্য মনে মনে আমার আশেপাশে কী ঘটছে তা ব্যাখ্যা করতে থাকলাম। একবার মনে হলো খাতায় লিখি বসে বসে। ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার হবে। কিন্তু পরে আর কষ্ট করে লিখতে ইচ্ছে করলো না।

আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আছি। অনেকটা নিজেকেই ড্রাইভার মনে হচ্ছে। আমার ঠিক সামনেই লাল রঙের গ্রামীণ চেকের শার্ট পড়া এক লোক অনেকগুলো টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা বোধহয় কন্ডাক্টর। একবার ভাবলাম ডাক দেই।

ডাক দিয়ে দোকান থেকে কিছু আনাই। ভাঙতি করা দরকার। দরকার হয় লোকটাকে সিগারেটের জন্য দু'চার টাকা দিয়ে দিব। কিন্তু পরে আর ডাকতে ইচ্ছে হলো না। আমার পাশ দিয়ে অনেক মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে।

তাদের কারো গন্তব্য আমি যেদিকে ফিরে বসে আছি সেদিকে, কারোর বা আবার ঠিক উল্টো দিকে। কে কোথায় যাচ্ছে তা আমি জানি না। বুড়োমতো একটা লোক ছোট একটা বস্তা মাথায় করে হেঁটে গেল। অল্পবয়সী থেকে মধ্যবয়সী বিভিন্ন মানুষ যার যার কর্মদিবস শুরুর লক্ষ্যে এগোচ্ছে তা তাদের দেখেই বলে দেয়া যায়। অন্যদিনের চেয়ে আজকের পার্থক্য একটাই।

আজ তাদের কেউ একজন লক্ষ্য করছে। এতে অবশ্য তাদের কিছু যায় আসে না। আমার পেছনে আরও দু'টো লেগুনা দাঁড়িয়ে আছে। ড্রাইভার-হেল্পাররা আড্ডা মারছে ভেতরে বসে। প্রত্যেকের হাতে একটা করে সিগারেট।

কিছুক্ষণ পর অল্পবয়সী একটা ছেলে এগিয়ে গেল তাদের দিকে। হাতাকাটা গেঞ্জি পড়া। সাদা রঙের এখানে-সেখানে ছেঁড়া গেঞ্জিটা কখনো ধোয়ার প্রয়োজন মনে করেনি বোধহয় সে। অথবা ধোয়ার ফুরসৎ পায়নি। তার হাতে একটা প্লেট।

স্টিলের প্লেটে বেশ কয়েকটি চায়ের কাপ। প্রত্যেকটি কাপই অর্ধেক চায়ে ভরা। তার উপর দিয়ে ধোঁয়া উড়ে জানান দিচ্ছে এটি এখনো সুস্বাদু পানীয়। চা আড্ডারত লোকগুলোর মাঝে বিলিয়ে দিয়ে ছেলেটি তার গন্তব্যে চলে গেল। না দেখেও বুঝতে পারলাম ছেলেটি হোটেলে কাজ করে।

একদল পোলাপান পাশ কাটালো আমাকে। স্কুল ড্রেস পড়া। সাদা শার্ট আর হাফ প্যান্ট। কী রঙের প্যান্ট তা মনে করতে পারছি না। গল্প করতে করতে তারা পাশ কাটিয়ে গেল।

জীবনের নিষ্ঠুরতা হয়তো তাদের এখনো ছুঁয়ে যেতে পারেনি। এতক্ষণে একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি। সামনে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে সে কন্ডাক্টর নয়। পাশেই একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। সেই টয়লেটে যারা ব্যবহার করছে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়াই লোকটার কাজ।

ভালোই হলো। তাকে সিগারেট খাওয়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করা বুদ্ধিমানের কাজ ছিল। ইতিমধ্যে ড্রাইভার চলে এসেছে। ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ড্রাইভার প্যাসেঞ্জার সিট দিয়ে উঠে ঢাকনা সরিয়ে মোবিল ভরতে শুরু করলো।

তার হাতে সিগারেট। আমি কিছু স্বস্তি নিয়ে বসলাম। রওনা হতে বেশি দেরি নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই রওনা হয়ে গেলাম। চক্ষু হাসপাতালের পাশ দিয়ে বের হয়ে লেগুনা নেমে গেল অসম্ভব জ্যামের রাস্তায়।

হঠাৎই মনে পড়লো, সিগারেটের আগায় আগুন থাকে। আর মোবিল বোধহয় দাহ্য পদার্থ। সিগারেটটা যদি দুর্ঘটনাবশতঃ মোবিলের মধ্যে পড়ে যেত? মনে হচ্ছে বড্ড বাঁচা বেঁচেছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।