আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেফাক নেতৃবৃন্দের ব্যাখ্যা প্রদান নারীনীতি যেসব কারণে ইসলাম বিরোধী

সবুক্তগিন

নারী নীতিমালা নিয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বাজারে লিফলেট ভুল ও অসামঞ্জস্য তথ্যের ভিত্তিতে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)এর নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, ইসলামের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে কুরআন, সুন্নাহ ধ্বংসের কাজে অপব্যবহারের পরিণতি শুভ হবে না। নেতৃবৃন্দ নারীনীতি গভীর অধ্যয়ন করে কুরআন সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা উল্লেখ করে সরকারকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে এভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, এই নীতিমালা সিডও সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার কৌশল হিসেবে প্রণয়ন করা হয়েছে। সিডও সনদের ২, ৩, ৯, ১৩, ১৬ ধারায় ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিকতা মুসলিম রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক স্বীকৃত। যার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে অথচ নারীনীতিতে সিডও বাস্তবায়নের অঙ্কীকার স্পষ্ট ভাষায় বারবার ব্যক্ত করা হয়েছে।

(দ্রষ্টব্য নারী উন্নয়ন নীতিমালা ৪নং ধারার শেষ প্যারা ৪..১৭.২)। এই নীতিমালায় সিডও এরই প্রতিধ্বনি করা হয়েছে মাত্র। সিডিও সনদে নারীকে উপস্থাপন করা হয়েছে ইউরোপীয় জীবনধারা ও সংস্কৃতির আলোকে। ফলে এই নীতিমালায় মুসলিম নারীর জীবনধারা ও ইসলামী সংস্কৃতির মোটেই প্রতিফলন ঘটেনি। যে কারণে এই নীতিমালা ৯০% মুসলমানের দেশের জীবনাচারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

আমাদের বিশ্বাস এই নীতিমালার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে মুসলিম সংস্কৃতি বর্জন করে ইউরোপীয় সংস্কৃতি অবলম্বনে বাধ্য করার নীরব কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। ইসলাম নারী উন্নয়নে ও নারী অধিকারের সর্বোচ্চ প্রবক্তা হলেও বা নারী নির্যাতনের রোধে সর্বাধিক বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করলেও পুরুষপ্রধান সমাজব্যবস্থার সপক্ষে। পরামর্শের সকল পর্যায়ে নারীকে সমঅধিকার প্রদান করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকার পুরুষকেই প্রদান করা। আল কুরআনে এই মর্মে স্পষ্টতই উল্লেখ আছে, নারীদেরও ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও দায় দায়িত্ব রয়েছে পুরুষের প্রতি যেমন পুরুষের রয়েছে নারীদের ওপর, তবে পুরুষের নারীদের উপর একপর্যায়ের প্রাধান্য রয়েছে। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানময়।

(সুরাঃ বাকারা, আয়াতঃ ২২৮)। আরো ইরশাদ হয়েছে, পুরুষগণ নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল হবে। যেহেতু আল্লাহ তাদের কতিপয়কে কতিপয়ের ওপর মর্যাদাবান করেছেন। আর এজন্যও যে পুরুষরা নারীদের জন্য তাদের অর্থ সম্পদ ব্যয় করে। (সুরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৩৪)।

বুখারী ও মুসলিম শরীফের এক হাদীসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, শুনঃ তোমরা সবাই (কোন না কোন পর্যায়ে) দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেকই আপন দায়িত্বাধীন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধান দায়িত্বশীল, সে জিজ্ঞাসিত হবে আপন দায়িত্বাধীন নাগরিকদের ব্যাপারে। পুরুষ আপন পরিজনের দায়িত্বশীল, সে জিজ্ঞাসিত হবে আপন দায়িত্বাধীনদের ব্যাপারে, রমনী দায়িত্বশীল তার স্বামীর সংসারের। সে জিজ্ঞাসিত হবে আপন দায়িত্বাধীন বিষয়ে।

(বুখারী, খন্ড-২, পৃষ্ঠা ১০৫৭ মুসলিম খন্ড-২, পৃঃ ১২২)। এই হাদীস থেকেও পরিষ্কার ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, নারীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পুরুষের। সুতরাং কর্তৃত্বের প্রশ্নে নারীকে সমানাধিকার প্রদান করা হলে তা হবে সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহর পরিপন্থী। অথচ নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিভিন্ন ধারায় তা সুস্পষ্টই উল্লেখ করা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য ১৯.৯, ৩২.৯, ৩৩.৭ নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১)।

নারী উন্নয়ন নীতিমালা যেহেতু ইউরোপীয় নারীর কল্পচিত্রকে সামনে রেখে প্রণীত হয়েছে। অতএব নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ইসলামের অলঙ্ঘনীয় বিধান পর্দার বিষয়টির প্রতি মোটেও লক্ষ্য রাখা হয়নি। ফলে এর অধিকাংশ ধারা পর্দার বিধান লংঘন না করে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। ফলে উন্নয়ন পরিকল্পনা হিসেবে উপস্থাপিত বিষয়গুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ প্রকাশ পেয়েছে এবং পর্দার বিধান লংঘন হওয়ার কারণে তা কুরআন বিরোধী বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। ইসলাম মূলত নারী পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পারিবারিক জীবন গড়ে তুলতে চেয়েছে, নারীনীতি বাস্তবায়ন হলে তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে।

অধিকারের টানাটানিতে পারিবারিক জীবন এক সংঘাতময় কুরুক্ষেত্রে পরিণত হবে। পারিবারিক সৌহার্দ্য শেষ হয়ে যাবে। যা এখন ইউরোপের সমাজব্যবস্থায় নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং এদিক থেকে এই নীতিমালা ইসলামের পরিবারিক নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। ইসলাম পৈত্রিক উত্তরাধিকার নারীকে পুরুষের তুলনায় অর্ধেক প্রদান করেছে।

এই বিধান সুরা নিসার ১১২ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (উত্তরাধিকার প্রাপ্তির) ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, পুত্র সন্তান পাবে দুই কন্যা সন্তানের সমান, এ হল আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা ও প্রজ্ঞাময়। (সুরাঃ ৪ নিসাঃ আয়াতঃ ১১)। সুতরাং উত্তরাধিকারে যদি নারীকে পুরুষের সমান অংশ প্রদানের সুযোগ রাখা হয় তাহলে এটি হবে সুস্পষ্ট কুরআন বিরোধী।

তাছাড়া নারীনীতির ভূমিকা ২য় লাইন ৪, ৪.১, ১৬.১, ১৬.৮, ১৬.১২, ১৭.১, ১৭.৪, ২৩.৫ ধারাসমূহ যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তাতে যেকোন ব্যক্তি দ্বারা উত্তরাধিকারে নারী পুরুষের সমান পাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবে। সিডও বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে আবদ্ধ সরকার পরে সেই ধারাগুলোকে পুঁজি করে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রেও সমতার ব্যাখ্যা করবেন না এর নিশ্চয়তা কে দিবে? সরকারের সামনে সোজা পথ খোলা আছে নারীনীতি স্থগিত করে সংশোধনের ব্যবস্থা করা। না হয় এ দেশের ছাত্র, জনতা ও তৌহিদি জনগণ এর জবাব ভালভাবে দিতে চান। বিবৃতি প্রদানকারী আলেমগণ হলেন, চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক, বেফাকের সভাপতি আল্লামা শাহ আহমেদ শফি, বেফাকের সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আনোয়ার নূর হোসেন কাসেমী, মাওলানা মোস্তফা আজাদ, বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জববার, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল ফাতাহ মোঃ ইয়াহিয়া, ফরিদাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল ইসলাম প্রমুখ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।