আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফকনারের মিসিসিপি বিলিভ ইট

i would like to read and write

নন্দনতাত্ত্বিকতার প্রয়াস যার লেখনীতে অতুলনীয় তিনি কে? উইলিয়াম ফকনার। আমেরিকান সাহিত্যজগতে যাদের সামান্যতম বিচরণ আছে, তাদের কাছে ফকনার পরিচিত জন। আধুনিক আমেরিকান সাহিত্যের অগ্রগণ্য এই লেখক স্নায়ু যুদ্ধের প্রথমদিকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। তার পথ ধরে হেঁটে এগিয়েছেন টনি মরিসন। যাকে ফকনারের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে কেউ কেউ এমনটিও বলেন যে, মরিসন কি ফকনারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে গেছেন? মরিসন আরেক আমেরিকান ঔপন্যাসিক, যিনি ফকনারের ব্যক্তিবাদের ধারণা এবং অভিজাত নন্দনতাত্ত্বিক আচারপ্রিয়তার প্রতিনিধিত্ব করছেন।

তার লেখার কেন্দ্রবিন্দু ব্যক্তির মুক্তি ও সুন্দর আগামীর। রিক লুজারের কথা শুনে মনে পড়ে গেল এসব কথা, ফকনারের কথা। সিলোর প্রেসিডেন্ট রিক বলছেন ফকনারকে নিয়ে তাদের গর্বের কথা। মিসিসিপির কথা। মিসিসিপিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে একটি প্রচার কাজ হাতে নিয়েছে সিলো নামের প্রতিষ্ঠানটি।

এই প্রচারের নাম-মিসিসিপি, বিলিভ ইট ক্যাম্পেইন। দক্ষিণের এই রাজ্যকে সারাবিশ্বের কাছে তুলে ধরতে নেয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। প্রচারেই প্রসার, তাই মিসিসিপির প্রচারের মাধ্যমে পর্যটক আকর্ষণ এই প্রচারাভিযানের মূল লক্ষ্য। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন অর্থনীতিতে শুভ যোগ করবে। এই রাজ্যকে তুলে ধরতে পণ্যের মত প্রচারের কাজ দেখে অবাকই হলাম।

ধনী দেশের অঙ্গরাজ্য হয়েও তারা থেমে থাকেনি। এজন্য ফকনার থেকে শুরু করে বিখ্যাতদের নামও ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বাড়তি কিছু নয়, যা আছে সে কথাই বলা হচ্ছে। আর সামান্য ঘুরে দেখার পর এটাই মনে হয়েছে যে মিসিসিপি পর্যটকদের ভাল লাগবেই। আমার ভাল লেগেছে।

ফকনার ও প্রকৃতির টানে কি না জানি না। তবে যারা প্রকৃতি প্রেমিক, নিরিবিলি মাছ শিকার করতে পছন্দ করে, কিংবা নির্জনে কোন হোটেল কক্ষে বসে ভাবনার জগতে প্রবেশ করতে যাদের ভাল লাগে তাদের জন্য উত্তম জায়গা মিসিসিপি। নৌকায় দলবেঁধে নদীতে ঘোরা কিংবা জুয়া খেলতে খেলতে রাত পার করে দিতেও অনেকে আসেন এখানে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রোগ্রামে গিয়ে যে কয়টি রাজ্য ঘুরেছি তারমধ্যে মিসিসিপি অন্যতম। জ্যাকসন এভার ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামতেই দেখি চোখ ধাঁধানো সবুজ।

রাস্তাঘাট সুশৃঙ্খল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এখানে রয়েছে কৃষি, শিল্প-কারখানা। আমেরিকা ক্যাটফিস উৎপাদনের তালিকায় মিসিসিপির অবস্থান এক নম্বরে। এর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে মিসিসিপি ডেল্টা নামে একটি এলাকা আছে। যেখানে ক্যাটফিস, তুলা, সয়াবিনের চাষ হয়।

৪৭ হাজার ৭১৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে রয়েছে পাহাড়, উপত্যকা, বন, প্রেইরী, ক্রিকস, নদী, লেকসহ কৃষিজমি। ভ্রমণ পিয়াসু হিসাবে যাই দেখছি ভাল লাগছে। এখানে ঐতিহাসিক ঘটনার নিদর্শনও আছে। মিসিসিপি নদীর তীরে অবস্থিত ভিকসবার্গ। এই নগরীতে ১৮৬২ সালে গৃহযুদ্ধ হয়েছিল।

দেখলাম তখনকার ব্যবহৃত কিছু কামান রাখা আছে। ছোট্ট একটি মিউজিয়ামও আছে। এখানে ১৮ মিনিটের একটি ছবি দেখানো হয় অভ্যাগতদের। ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস প্রোগ্রামে আমেরিকা আসার পর বলা হয়েছে দক্ষিণের চিত্র একটু ভিন্ন। এখানকার মানুষের উচ্চারণও ভিন্ন।

যদিও আমার কাছে ভালই লেগেছে। তবে এখানে এসে আলমগীর ভাইকে পেয়ে যাব একটা ভাবিনি। আমাদের টীমের অন্যরাতো বলেই ফেলল ইউ আর লাকী। মানে এই রাজ্যেও তোমাদের লোক আছে! জ্যাকসন স্টেট ইউনিভার্সিটি সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন। ইউনিভার্সিটির এক প্রোগ্রামে তার সঙ্গে পরিচয় হয়।

তারপরতো মিসিসিপি ঘুরে দেখানোর দায়িত্ব নিতে চাইলেন। বললাম, ২২ এপ্রিল (০৭) ফ্রি ডে। ঐদিন একসঙ্গে ঘুরবো। আলমগীর ভাই এগারটার দিকে হোটেলে এলেন। বেরুলাম লং ড্রাইভে।

বাইরের প্রকৃতি দেখতে দেখতে এগুচ্ছি। এখানে ততটা ঠান্ডা নেই এখন। ওয়াশিংটন কিংবা নিউইয়র্কে স্প্রিং-এ যতো ঠান্ডা, এখানে ঠিক তার উল্টোটাই মনে হল। গাড়ি চালাতে চালাতে আশপাশের বর্ণনা দিচ্ছেন তিনি। মিসিসিপি যে একটি শান্ত, নিরিবিলি এবং সুন্দর শহর তার চাক্ষুস প্রমাণ দেখাতে চান তিনি।

এরই মধ্যে কথা হচ্ছে নানান বিষয়ে। যাপিত জীবনের নানা দিক নিয়ে। এখানে যেভাবে জীবন-যাপন চলছে, বাংলাদেশে সেটা সম্ভব নয়। এখানেও অপরাধ কাজ সংঘটিত হয়। কিন্তু সেটার ধরনও ভিন্ন।

বাংলাদেশে রাত বিরাতে মানুষ চলাফেরা করতে ভয় পায়। এখানে এই স্বাধীনতা আছে। মাস শেষে উপার্জিত টাকা দিয়ে দিব্যি সংসার খরচ মেটানো যায়। কিন্তু ঢাকায় কি তা সম্ভব? আলমগীর ভাই এখানে দুটো গাড়ি চালাচ্ছেন। ছেলেদের ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল।

গাড়ির চাকা ঘুরছে বনের ভেতর দিয়ে। বনের ভেতরে একটি চার্চে আমরা গেলাম। দেখলাম চার্চ থেকে একজোড়া তরুণ-তরুণী বেরিয়ে আসছে। খুবই নিরিবিলি। পর্যটকরা এখানে আসে।

অবসরে স্থানীয়রাও আসে। নিভৃতে কিছু সময় কাটানোর জন্য।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।