আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফুকুশিমা পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরন, আতংক নয় প্রয়োজন সচেতনতা

ধুমপানে বিষপান

জাপানের ফুকুশিমা পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরনের পর টোকিও ও এর আশেপাশের মানুষদের এখন দিন কাটছে রেডিয়েশন আতংকে। আমরা হুজুগে বাংগালীদের মধ্যে এই আতংক আরো বেশি, অনেকেই দেশ ছেড়েছেন, অনেকে ছাড়বেন। অথচ কেউই প্রকৃত অবস্থা বুঝা বা জানার চেস্টা করছেন না। এই রেডিয়েশনের যাত্রা আর মাত্রা নিয়েই আমার এই পোস্ট। ইদানিং আমরা আকাশে বাতাসে যত রেডিয়েশনই খুজে পাই না কেন, আসল বাস্তবতা হলো প্রকৃতির যত্রতত্রই এই জিনিসের ছড়াছড়ি।

আমাদের যা জানা দরকার তা হলো এই রেডিয়েশনের শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ প্রকৃতিই তৈরি করে (World Nuclear Association এর মতে)। আর সমগ্র রেডিয়েশনের মাধ্যে মানুষের তৈরি রেডিয়েশন (পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, ঔষধ শিল্প, দালানকোঠা ইত্যাদি) এর পরিমান হলো শতকরা মাত্র ১ ভাগ। রেডিয়েশন মূলত ছড়ায় কিছু রেডিওএকটিভ পার্টিকেল থেকে। শরীরে যখন এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায় তখন এর থেকে যে এনার্জী তৈরি হয় তা DNA এর Molecular bonds গুলোকে ভেংগে ফেলতে পারে যার কারনে ক্যন্সার এর ঝুকি বেড়ে যেতে পারে। এখন আসি টোকিও ও এর আশেপাশের এলাকার রেডিয়েশনের মাত্রা কতটুকু বিপজ্জনক।

টোকিওর শিন্জুকো এলাকায় আজকের (১লা এপ্রিল) রেডিয়েশন এর মাত্রা হলো ০.১০৯ microsieverts per hour আর টোকিওর পাশেই আমার এলাকা সাইতামায় এই মূহুর্তে রেডিয়েশন হলো ০.০৭৮। এখন আসল বিষয়টা হলো টোকিও ও এর আশেপাশের এলাকার এই রেডিয়েশনের লেভেল হলো অন্য অনেক দেশের প্রাকৃতিক রেডিয়েশনের চেয়েও অনেক অনেক কম। যেমন ভারতের চেন্নাইয়ের কেরালায় মানুষ গড়ে ৩.৪২ microsieverts per hour রেডিয়েশনের মাঝে বাস করে যেটা টোকিওর বর্তমান রেডিয়েশনের চেয়ে ৩১ গুন বেশি। একইভাবে ব্রাজিল আর সুদানের মানুষ গড়ে ৪.৫৭ microsieverts per hour প্রাকৃতিক রেডিয়েশনের মাঝে থাকে যা টোকিওর আজকের রেডিয়েশনের চেয়ে প্রায় ৪১ গুন বেশি। গত সাত দিনে নিউইয়র্কের গড় রেডিয়েশন ছিল০.০৯৫ microsieverts per hour যা বর্তমান টোকিওর গড় রেডিয়শনের প্রায় কাছাকাছি।

তাহলে চারদিকে টোকিওর রেডিয়েশন বেড়ে যাওয়ার যেসব খবর তার কারনটা কি? আসল ব্যপার হলো ফুকুশিমার পাওয়ার প্লান্টে বিস্ফোরনের আগে টোকিওতে গড় রেডিয়েশন ছিল ০.০৩৩৮ microsieverts per hour. গতকাল সিংগাপুর আর লন্ডনে রেডিয়শনের মাত্রা ছিল যথাক্রমে 0.0৯ microsieverts per hour ও ০.০৮ microsieverts per hour. সুতরাং টোকিওর রেডিয়েশন নিয়ে আতংকিত হওয়ার কি আদৌ কোন যুক্তি আছে? উপরের ছবিটি খেয়াল করলে বুঝা যাবে কি পরিমান রেডিয়েশন পর্যন্ত আমাদের কোন স্বাস্থ্যঝুকি থাকে না। বছরে ১০০ milisieverts বা ঘন্টায় প্রায় ১১.৪২ microsieverts রেডিয়েশনের নীচে হলে কোন প্রকার ক্যন্সারের ঝুকি বা কোন প্রকার স্বাস্থ্যঝুকি থাকে না। টোকিওর বর্তমান রেডিয়েশন যদি আরো একবছরও থাকে তবু বছর শেষে এর পরিমান হবে ১ milisieverts যা বছরের গ্রহনযোগ্য মাত্রার ১০০ ভাগের এক ভাগ। কোন কোন তথ্য মতে মাত্র একটা সিগারেট পান করলে ১৪০ microsieverts (14 mrem) রেডিয়েশন পেটের মধ্যে ঢুকে (বেশি বাড়াবাড়ি, আমি দিনে কতগুলা খাই!)। Click This Link আবার অন্য তথ্যমতে দিনে ১/২ প্যাক সিগারেট পানে বছরে ৮০,০০০ microsieverts (৮০০০ mrem) রেডিয়েশন পেটের মধ্যে ঢুকে।

সিগারেটের মধ্যকারLead-210 এবং Polonium-210 এই রেডিয়েশনের উৎস। এমনি করে এক্স-রে থেকে শুরু করে আমাদের দেশের গাড়ীর কালো ধোয়া-সবকিছুতেই রেডিয়েশনের ছড়াছড়ি। এর মধ্যেই আমাদের বাস, তাই হঠাৎ করেই না বুঝে এর ভয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নাই। বাতাসের সাথে সাথে পানিতে রেডিয়শন নিয়েও মানুষ ভয়াভহ আতংকিত। টোকিও ও এর আশেপাশের এলাকার টেপের পানিতে রেডিওএকটিভ আয়োডিন ও সিজিয়াম পাওয়া যাচ্ছে।

আসলে গরু ছাগল হাস মুরগির মাংশ থেকে শুরু করে শাক সব্জি ফলমূল খাবার পানি এবং প্রকৃতির প্রায় সব খাদ্যদ্রব্যেই কিছু রেডিয়েশন থাকে যা আমরা প্রতিনিয়ত খাই। এমনকি কিছু দেশ তাদের ফলমূল ও অন্য খাদ্যদ্রব্যে পরিমিত মাত্রার রেডিয়েশন দিয়ে ব্যক্টেরিয়ামুক্ত করে। গত পরশু জাপানের শিন্জুকো ওয়ার্ডের টেপের পানিতে রেডিওএকটিভ আয়োডিন ও সিজিয়াম ছিল যথাক্রমে ৫.১ Bq/kg ও ০.৯০ Bq/kg. Euratom guideline অনুযায়ী রেডিওএকটিভ আয়োডিনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য মাত্রা হলো 150 Bq/kg or Bq/l for infant food; 500 Bq/kg or Bq/l for dairy products; 2,000 Bq/kg or Bq/l for other foods and 500 Bq/l for liquids intended for consumption. আর জাপান Nuclear Safety Commission এর সেফটি স্ট্যন্ডার্ড আরো নীচে সেট করা যেমন ১০০ Bq/kg or Bq/l for infant food; ৩০০ Bq/kg or Bq/l for এডাল্ট। সুতরাং খাবার দাবার ও টেপের পানি এই লেভেলের ধারেকাছেও এখনও পৌছায়নি, যদিও টোকিওর কানামাচি পাওয়ার প্লান্টে ২১০ Bq/l আয়োডিন পাওয়া গিয়েছিল যা এখন কমে বিপদসীমার নিচে চলে এসেছে। অনেকে বলে অল্প পরিমান রেডিয়েশন লাগলেও এর এফেক্ট থাকতে পারে।

এটা একেবারেই ভুল কথা। আসলে রেডিয়েশন লেভেলটা কি পরিমান বাড়লে পরিস্হিতির ভয়ভহতা কতটুকু হবে তা বুঝতে চেরোনোবিল দুর্ঘটনার একটা উদাহরন টানা যায়। ১৯৯৩ সালে IAEA এর এক গবেষনায় দেখা গেছে চেরোনোবিল দুর্ঘটনার ছয় বছর পরেও দূর্ঘটনা স্হল থেকে ১০০০ কি মি (৬০০ মাইল) দূরে দক্ষিন নরওয়েতে বন্য হরিনের মাংশে ২০,০০০ Bq/kg ও ভেড়ার মাংশে ১০,০০০Bq/kg মাত্রার রেডিয়শনের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। সুতরাং এখন পর্যন্ত জাপানে যে পরিমান রেডিয়েশন পাওয়া যাচ্ছে তা চেরোনোবিল দুর্ঘটনার তুলনায় কিছুই না এবং বিশেষ করে যারা টোকিও বা তার আশেপাশের এলাকায় থাকেন, তাদের আতংকিত হওয়ার খুব বড় কারন এখনো তৈরি হয়নি বলেই ধরে নেয়া যায়। সবশেষে একটাই কথা, নিজেও আতংকিত হবেন না, আর অন্যের মাঝেও আতংক ছড়াবেন না।

তথ্যগুলো বিভিন্ন সুত্র থেকে নেয়া- http://www.mext.go.jp/english/ Click This Link Click This Link Click This Link Click This Link Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।