আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিনীকে গ্রেফতারে সকালে পরোয়ানা দুপুরে বাতিল[/si। গ্রেফতার করলেই কি সত্যের মুখ বন্ধ করা যায়???

পাখি উড়ে যায় রেখে যায় ছায়া, মানুষ মরে যায় রেখে যায় মায়া।

ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীর বিরুদ্ধে গতকাল সকালে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা দায়েরের পর আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সমন জারি করেন। পরে অবশ্য দুই ঘণ্টার মাথায় আদালত এ আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়ে আগামী ২৫ এপ্রিল মামলার শুনানি ও আদেশ প্রদানের তারিখ ধার্য করেন। আদালতের এ নাটকীয়তায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। বাদীপক্ষের আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, আদালত প্রকাশ্যে আদেশ দিয়েছেন।

পরে কী কারণে তা প্রত্যাহার করে নিলেন বুঝতে পারলাম না। মুফতি আমিনীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সর্বস্তরের আলেম-ওলামরা। কোনো কোনো স্থানে তাত্ক্ষণিক সভা-সমাবেশ করে আলেমরা দেশ অচল করে দেয়ারও হুমকি দেন। তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুফতি আমিনী বলেন, আমাকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষায় জীবন দিতে যারা প্রস্তুত, তারা গ্রেফতারকে ভয় পায় না।

এটা এ জালেম সরকারের জানা উচিত। তিনি বলেন, সারাদেশে অসংখ্য আমিনী ইসলামের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। ইসলাম ও মুসলমানদের সমাজব্যবস্থা রক্ষার তাগিদে প্রয়োজনে দেশ অচল করে দেয়া হবে। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, মুফতি আমিনীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার অভিযোগ এনে সকাল ১০টায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি দায়ের করেন সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসান। ঢাকা মহানগর আদালতে দণ্ডবিধির ১২৪/১২৪ক ও ৫০৬ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেন তিনি।

মামলায় ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেলকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলায় বাদীপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ হেমায়েত হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী নজীব উল্লাহ হীরু, গাজী শাহ আলম ও একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম হারুন-অর-রশীদ প্রকাশ্য আদালতে আমিনীর বিরুদ্ধে সমন জারি করে ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক অপরাধ কণ্ঠের তিন রিপোর্টার, ঢাকা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম পিয়াস, অ্যাডভোকেট মুক্তাদির ফরিদী ও অ্যাডভোকেট শামসুল আলমকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২১ মার্চ রাজধানীর পল্টনের বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্র মোর্চা আয়োজিত সঙ্কটে ইসলাম ও ছাত্র সমাজের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় আমিনী নারীনীতির সমালোচনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনাশূন্য হবে দেশ মর্মে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেন।

যা পরের দিন বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, এ বক্তব্যের আগের দিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইসলামিক আইন সংরক্ষণ কমিটি আয়োজিত নারীর সমঅধিকার বনাম ন্যায্য অধিকার শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সরকার উত্খাতের হুমকি দিয়েছিলেন আমিনী। আমিনীর ওই বক্তব্য ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল ‘দেশ হাসিনাশূন্য হতে পারে’ মর্মে তার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় পাঠান। এ কারণে তাকেও এ মামলায় আসামি করা হয়। অভিযোগ করা হয়, এই বক্তব্যের মাধ্যমে আমিনী প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন।

একই আদালতে মানহানির মামলাটি দায়ের করেন বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিক। আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান। বিচারক শুনানি শেষে এ মামলায় আমিনীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) একেএম এনামুল হক সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে তার খাস কামরায় ডেকে পাঠান। সিএমএম সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে তার আদেশ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) একেএম এনামুল হকের সঙ্গে কথা বললে তিনি আদেশ পরিবর্তনের কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট নতুন এসেছেন। তিনি বিষয়টি বুঝতে না পেরে ভুল করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান। আদালতের এ নাটকীয়তায় গোটা আদালত পাড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আদালতের এ আদেশের সংবাদ পাওয়ার পরপরই নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ মাদ্রাসা মসজিদ প্রাঙ্গণে সংগঠনের জেলা শাখা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আমিনী বলেন, সরকারের কোনো ছলচাতুরীই আগামী ৪ এপ্রিলের হরতাল কর্মসূচি বানচাল করতে পারবে না।

দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ কর্মসূচি পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের কর্মসূচির সূচনা হয়েছে মাত্র। নারী নীতিমালা বাতিল না হলে ভবিষ্যতে সরকারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেন। ৪ এপ্রিলের হরতালের পরও সরকার কোরআনবিরোধী নারী নীতিমালা বাতিল না করলে লাগাতার হরতাল ও আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ অচল করে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। তাত্ক্ষণিক বিক্ষোভ : ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা, সমন ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে তাত্ক্ষণিক এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তাত্ক্ষণিক এক প্রতিবাদ সমাবেশে নেতারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মুফতি আমিনীর কিছু হলে সারাদেশে আগুন জ্বলে উঠবে। মুফতি আমিনীকে গ্রেফতার করে আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না। ৪ এপ্রিলের হরতালসহ সব কর্মসূচি যে কোনো মূল্যে সফল করা হবে। ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুফতি মুহাম্মদ তৈয়্যেব, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা আলতাফ হোসাইন, মাওলানা আবদুল আযীয প্রমুখ। আজ বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন তারা।

সূত্র: দৈনিক আমার দেশ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।