আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

''ধর্ষকের প্রতি কোনো কোনো ভিকটিমের মাঝে মধ্যে আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়'' (কপি-পেষ্ট পোস্ট)

জনারণ্যে নির্জনতায় আক্রান্ত। নির্জনতাই বেশী পছন্দ, নিজের ভেতরে ডুবে থাকতেই ভাল লাগে। কিছুটা নার্সিসিস্টও।

'নিজ দেশে খেললে দর্শকরা তাদের দলকে সমর্থন দেবেন এটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমাদের খেলা হলেও গ্যালারি থেকে আমাদের পতাকা উড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়।

' এ বক্তব্য পাকিস্তানি ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাকের। 'বাংলাদেশ প্রতিদিন'-এ ২৩ মার্চে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশিরা খেলার মাঠে নিজ দেশের বিরুদ্ধেও পাকিস্তানিদের সমর্থন দেন। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য_ এটাও কি সম্ভব? বিচিত্র এই দেশে সবকিছুই হয়তো সম্ভব। আমরা দাবি করি আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, আমরা বলি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা এদেশের স্বাধীনতা এনেছি। এ রক্ত কে নিয়েছিল, কে ৩০ লক্ষ লোককে হত্যা করেছিল এবং দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল? উত্তর হচ্ছে_ পাকিস্তান।

তবে কি নিজ দেশের বিরুদ্ধে ক্রিকেটযুদ্ধে পাকিস্তানিদের আমরা তাদের পতাকা দেখিয়ে উৎসাহিত করি? রাজ্জকের পরের বক্তব্য_ 'আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছাড়া লোকাল ক্রিকেটে আমি ঢাকার আবাহনীর পক্ষে খেলেছি। সেখানেও একই অবস্থা। গত বছর মোহামেডানের কাছে হেরে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তারপরও আমার প্রতি দলীয় সমর্থকদের ভালোবাসা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। এ দেশের লোক অন্য ক্ষেত্রে না হোক, ক্রিকেটে তারা যে পাকভক্ত তার প্রমাণ আমি বারবার পেয়েছি।

' অনেকে বলবেন, ব্যাপারটা নিছক ক্রীড়াবিষয়ক! ক্রিকেটের মধ্যে রাজনীতি আসার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে পাক-ভারত বা দেশ-বিদেশের প্রশ্ন অবান্তর। খেলাকে বিনোদনের অংশ হিসেবেই দেখতে হবে। ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? আমাদের কিছু ছেলে-মেয়ের শুধু পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের প্রতি এত উৎসাহ বা দুর্বলতা কেন? অন্য কোনো দেশের ক্রিকেট টিম বা ব্যক্তিগত কোনো খেলোয়াড়ের প্রতি এত বেশি আগ্রহ নেই যতটা রয়েছে পাকিস্তানিদের প্রতি। যদি ক্রিকেটই মুখ্য বিষয় হয় তাহলে বিশ্বের অন্যান্য সেরা টিম_ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি এত অনাগ্রহ কেন? ২৪ মার্চ, বাংলাদেশ প্রতিদিন 'দেশপ্রেম না পাকপ্রেম' নামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদক লিখেছেন- 'মহান স্বাধীনতার মাসে কেউ যদি ঢাকায় বসে পাকিস্তানি পতাকায় চুমু খান বা স্যালুট দেন তখন প্রশ্ন জাগে এরা কি পাগল না পাকপাগল? দেশের শীর্ষস্থানীয় এক ক্লাব কর্মকর্তা গতকাল পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে শিশুর মতো নাচানাচি করলেন। ' উপরের কর্মকাণ্ডগুলো রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে কিনা পাঠক বিবেচনা করতে পারেন। মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে কি বলবেন জানি না। কেউ কেউ বলেন, কোনো কোনো দেশে কিছু লোকের মধ্যে দাসত্বসুলভ মনোভাব কাজ করে। পুরনো মণিবের প্রতি একটা সম্মান ও সমীহ থাকার কারণে Inferiority Complex এ ভোগে।

২৩ বছর আমরা পাকিস্তানের কলোনি ছিলাম, ছিলাম তাদের অধীনস্থ প্রজা। আমরা অনেকেই তাদের সেবা করে কৃতার্থ হয়েছি, ধন্য হয়েছি ভাঙ্গা উর্দু কথা বলে। কালো রংয়ের অনেক খর্বাকৃতি বাঙালি দীর্ঘদেহী গৌরবর্ণ পাঞ্জাবিদের গা ঘেঁষতে পেরে পুলকিত হয়েছেন। জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক সম্প্রতি একটি লেখায় বলেছেন_ আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলে তারাই শুধু জেতে, জয়ের ফল ভোগ করে। আওয়ামী লীগ হেরে গেলে সারা জাতি হেরে যায়, সবাই এ পরাজয়ের দুর্ভোগ পোহায়।

একইভাবে ক্রিকেটের 'টিম বাংলাদেশ' জিতলে সারাদেশই জিতে, এ জয়ের গৌরববোধ করে আনন্দ উল্লাস করে। ক্রিকেট টিমটি যখন হেরে যায় সেদিন শুধু সাকিব আর তার ১১ জন টিম সদস্যই হারে, দেশ তার দায়দায়িত্ব নিতে চায় না। কিন্তু রাজ্জাকের দল আবাহনী হেরে গেলেও দলীয় বাঙালি সমর্থকদের ভালোবাসা এই পাকিস্তানিকে অভিভূত করেছে। হেরে যাওয়ার পর সাকিবকে আমাদের দেশের তথাকথিত ক্রিকেটপ্রেমীরা এই ভালোবাসা কি দেখিয়েছেন? ব্রিটিশরা ভারতে দুইশ' বছর রাজত্ব করেছে। এর মধ্যে দুইশ' জন ভারতীয় নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে জানা যায় না।

দু'একটি অঘটনের ব্যাপারে যখন খবর রটেছে, সেগুলো নিয়ে প্রকাশ্য তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানিরা মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনা ঘটিয়েছে। এরপরেও এ দেশের দুই একজন মেয়ে কিভাবে ধর্ষণকারী পাকিস্তানি গোষ্ঠীর কোনো পুরুষকে কামনা করতে পারে? আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, কয়েক বছর আগে ঢাকা স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে একটি মেয়ে প্লাকার্ড নিয়ে বসে আছে, তাতে লেখা 'Afridi, please marry me.' সম্প্রতি 'বাংলাদেশ প্রতিদিন'-এর খবরে প্রকাশ_ এক বাঙালি সুন্দরী আফ্রিদির সঙ্গ পাওয়ার জন্য এখনো হন্যে হয়ে ঘুরছে। হীনমন্যতা, নির্লজ্জতা, দেশপ্রেমের অভাবের অনেক দৃষ্টান্ত আমরা ক্রিকেট খেলার কারণে দেখতে পাচ্ছি। পাশ্চাত্যের একটি টিভি টক শো দেখছিলাম; একজন মনোবিজ্ঞানী আলোচনা করছেন দর্শকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে।

এক প্রশ্নের উত্তরে অতিথি বক্তা জানালেন, ধর্ষকের প্রতি কোনো কোনো ভিকটিমের মাঝে মধ্যে আকর্ষণ লক্ষ করা যায়। খুন ও ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্ত পাকিস্তানিদের প্রতি কোনো বাঙালির কি এ ধরনের আগ্রহ বা আকর্ষণ রয়েছে? এই বিকৃতির ব্যাখ্যা কি আমাদের জানা নেই। অনেক ভারতীয়র মধ্যেও এ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। পুরনো মনিব শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের দেখলে ভারতীয়রা যেভাবে মাতামাতি করে সেটিও খুবই দৃষ্টিকটু। (ঈষৎ সংক্ষেপিত) আজকের বাংলাদেশ-প্রতিদিন এর সম্পাদকীয় পাতা থেকে- মূল লিখাটির লেখক : সৈয়দ রেজাউল হায়াত।

সাবেক সচিব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.