আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বল্টু ভাইয়ের ব্যায়াম



সকাল সকাল চোখটা চড়ক গাছে উঠে গেল আমার । একি ! একি দেখছি আমি । সূর্যতো ঠিকই আছে । পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাটি উল্টে যায়নি তো ? হাতে বার দুয়েক চিপটি কেটে দেখলাম স্বপ্ন দেখছি কিনা ! না ঠিকই তো আছে । তবে ? একি সত্যি ? আমাদের চেনাজানা ,পাড়ার 'শুটকি' খ্যাত বল্টু ভাই ইয়া বড় বড় দুটি পাথরকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ছাদে দাড়িয়ে একবার উপরে তুলছেন আবার নামাচ্ছেন ।

তুলছেন তো বটে ,তাও আবার অবলীলায় । : একি বল্টু ভাই ? তাকালেন তিনি । তবে তার ব্যায়াম থামলনা । : বল কি বলবি ? স্বাভাবিক গলা । ব্যাপারটা কি ? খপ করে একটা পাথরে ধরে ফেললাম ।

ধরেই চোখ এবার উঠল ডবল চড়ক গাছে । শোলা ! পাতলা শোলাকে ওনি পাথরের মত কেঁটে ব্যায়াম করছেন । : একি একি করছিস কি ? ছাড় ! ভয় পেয়ে ছেড়ে দিলাম ! : বল্টু ভা... : বুঝলিনা ! কথা শেষ হবার আগেই কথা পাড়লেন ওনি । সাথে একটা চোখ টিপ । : এত শো .. : আরে বুঝলিনা .. আরেকটা চোখ টিপ ।

সেইসাথে পাশের ছাদে ইশারা । হুম বুঝা গেল ব্যাপারটা । একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ওখানে । : ও ,এই ব্যাপার ! বল্টু ভাইয়ের ব্যায়াম ততখনে আবার শুরু হয়ে গেছে । : বুঝলিরে পল্টু ! আমাকে তো আজকাল অনেকেই 'শুটকি' বাদ দিয়ে 'ইবনে সীনা' ডাকছে ! চেচিয়ে বলতে লাগলেন ।

যেন আমাকে নয় ছাদের কোনে দাড়ানো মেয়েটাকাকে শুনাচ্ছে ! : ইবনে সীনা ? : হুম !চিনিসনি তো ? তোই তো ঐ গ্যাদার মার মতো সারাক্ষন ,ঐ কি বাংলা ছবি দেখিস ! রেসলিং ! নাম শুনিছিস তো !দেখতি যদি তবেই চিনতে পারতি । ইয়া ইয়া হাত পা ! : কিন্তু বল্টু ভাই ,ওতো 'জন সীনা' ! মিন মিন করে বললাম আমি । : জন সীনা না তোর মাথা ! ইবনে সীনা !তুই কি আমার থেকে বেশি জানিস ? তারপর কন্ঠটা একটু কমে এলো । : হ্যারে সত্যিই কি জনসীনা নাকি ? : তাই তো শুনেছি । আমাদের পাড়ার যে জিকু ,পান্তু ? এরা তো হরদমই খালি রেসলিং দেখে !ওদের কাছেই তো শুনেছি ।

আমারও মিনমিনে গলায় বললাম । : হোক তো জনসীনা ! আবার চেচালেন বল্টু ভাই । : তুই না পল্টু !খালি ঐ পুচকেদের কথা বলিস । আমি বলছি জনসীনা দাদা ইবনে সীনার কথা । : জনসীনার দাদা ইবনে সীনা !জিকুদের কাছে তো ওনাম শুনিনি ? শুনেই বাংলা ছবির জাম্বুর মতো হেসে উঠলেন বল্টু ভাই ।

তবে আমার কাছে যেন কোথাও কোথাও থাকে আনোয়ার হোসেনের মত লাগল । বিশেষ করে বিখ্যাত হার্ট অযাটাকের সিনের মত ! : জানবি কিরে তুই ? দুদিনের ছোড়া । শোন .. শোন তবে বলছি ইতিহাস !খোলেই বলছি তোকে ! হাত থেকে পাথর থুড়ি শোলাগুলো নামিয়ে রাখলেন পাশে । : জনসীনার দাদার নাম ছিল ইবনে সীনা । সেকি স্বাস্থ তার ছিল !আমার চেয়েও তাগড়া !তার নামে তো একটা হাসপাতালও আছে ।

তার ছেলে হলে 'ই' বাদ দিয়ে নাম রাখল ,বনে সীনা । সেই এক মহা পালোয়ান । এরপর হল দুঃখের দশা ! আর কি বলব !তারহল এক রোগা পটকা ছেলে । সেই না তোদের ঐ কি যেন ছোড়াটার নাম ? : জনসীনা ? : হুম । ওর নামতো আগে ছিল জনে সীনা ।

তোর মুখ্য লোক । বিকৃত করে ডাকিস জনসীনা । আমি মুখ শিটকালাম । : আর ! তোর তো সাহস কমনা ,আমাকে কিনা ঐ পুচকে জনসীনার সাথে তুলনা করিস ! বলেই একটা পাথরে থাবড়া দিয়ে বসলেন ওনি । ওমনি ঐটা ভেঙ্গে শোলা বাতাসে উড়তে লাগল ! এই ফাঁকে আমি পালালাম ।

কখন না আবার দ্বিতীয় ছোলাটা মাথায় ছুড়ে মারেন ? মাথা ফাঁটার ভয়ে নয় ,শোলাটা গুড়িয়ে যাবার ভয়ে । কারন মেয়েটা তখনও ছাদের কোনে ঠায় দাড়িয়ে মিটিমিটি হাসছিল !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.