আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘বিয়েপাগলা’ নুরুল আটক সিলেটে তোলপাড় (কপি পেষ্ট)



একটি নয়, দু’টি নয়, পাঁচ-পাঁচটি বিয়ের পর সিলেটের বিয়েপাগলা নুরুল ইসলাম ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। একাধিক বউয়ের অভিযোগের পর শুক্রবার রাতে পুলিশ তাকে আটক করে। কয়েক দিন পলাতক থাকার পর শুক্রবার রাতে বাড়ি ফেরার পর পরই পুলিশ তাকে আটক করে। আর তাকে গ্রেপ্তারের পর সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে একাধিক বিয়ের কথা স্বীকার করেছে সে।

তার তৃতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রত্নার মামলায় গতকাল হাজির করা হলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। এদিকে গ্রেপ্তারের পর নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। গ্রামের বেশির ভাগ লোকজন তাকে আগাগোড়া ধান্দাবাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার ধান্দার হাত থেকে রেহাই পায়নি আপন ভাইও। তিনটি নাম ব্যবহার করে তিনটি পাসপোর্ট, একাধিক ব্যাংক একাউন্ট খুলেছে সে।

ভোটার আইডিতেও মিথ্যা নাম ঠিকানা ব্যবহার করেছে। নুরুল ইসলাম সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত ইসরাইল মিয়ার ছেলে। তার বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। সে এ পর্যন্ত পাঁচটি বিয়ে করেছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। তবে নুরুল ইসলাম শনিবার সকালে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনটি বিয়ের কথা স্বীকার করেছে।

এলাকায় গড়ে ওঠা একটি চক্র সবসময় তাকে নিরাপদে রেখে বিয়ের আয়োজন করতো। গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, বিয়েপাগলা নুরুলের চক্রান্তের শিকার হয়েছেন তার ভাই ফরিদ আহমদও। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সে তার ভাইয়ের কাছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় মাস দুই আগে সে ফরিদ আহমদকে গ্রেপ্তারও করায়। পরে অবশ্য এলাকাবাসীর সহায়তায় ফরিদ তার চক্রান্ত থেকে মুক্তি পান।

আগে লুকিয়ে বিয়ে করলেও ১৯৯৮ সালে প্রথমে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করে জালালপুরের মৃত কুদ্দুস মেম্বারের মেয়ে ছইফা বিবিকে। বিয়ের কিছুদিন পর সে ছইফার কাছে যৌতুক দাবি করে। এক পর্যায়ে ছইফা বেগম টাকা দিলেও ওই টাকা দিয়ে সে দু’টি গাড়ি কেনে। দু’টি গাড়ির একটি তার নামে ও অপরটি ছইফার নামে কেনে। এক পর্যায়ে সে ছইফার দু’টি গাড়িই বিক্রি করে তার কাছে ফের যৌতুক দাবি করে।

এ নিয়ে সে ছইফাকে মারধর করে। বেদম মারধরে আহত ছইফা শেষ মুহূর্তে তার বাড়ি চলে যায়। ৫ লাখ টাকা কাবিন থাকলেও মাত্র দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ছইফা তার হাত থেকে রেহাই পায়। নুরুল এ বিয়ের কথা গোপন রেখে ২০০৬ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর আরও একটি বিয়ে করে। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ছোটদেশ গ্রামের হাজী রফিক উদ্দিনের মেয়ে রোমানা বেগমকে ১০ লাখ টাকা মোহরানায় সে বিয়ে করে।

কিন্তু তার ওই বিয়েও টিকেনি। এ নিয়ে রোমানা বেগম সিলেটের পারিবারিক আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি নুরুল ইসলামকে একজন প্রতারক হিসেবে উল্লেখ করেন। এ মামলায় রোমানা বেগম জানান, বিয়ের পর ২০০৭ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নুরুল তার কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুকের দাবিতে তাকে মারধর শুরু করলে অনেক কষ্টে রোমানা তার সংসার টিকিয়ে রাখতে পিতার বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা এনে দেন।

পরে সে আরও টাকা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় পরে মোহরানা হিসেবে দেয়া জমি জোরপূর্বক দস্তখত করে নুরুল তার নিজের নামে নেয়। এর কিছুদিন পর আরও সাড়ে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে রোমানাকে নির্যাতন করে। এ টাকা না দেয়ায় ২০০৮ সালের ৩০শে আগস্ট রোমানার সব স্বর্ণালঙ্কার রেখে একটি কন্যাসন্তানসহ তাকে পিতার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। আদালতে দায়ের করা রোমানা তার আর্জিতে আরও জানান, নুরুল ইসলাম একজন প্রতারক।

তার তিন নামে তিনটি পাসপোর্ট আছে। এর মধ্যে একটি আছে সোহেল, অন্যটি জাহিদ ও আরেকটি নুরুল ইসলাম নামে। ব্যাংকেও তার বিভিন্ন নামে একাউন্ট আছে। জিন্দাবাজারের ইউনাইটেড ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকে নুরুল ইসলাম নামে একাউন্ট রয়েছে। আল-আরাফাহ ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকে জাহিদ হোসেন নামে একাধিক একাউন্ট রয়েছে।

ব্যাংকের একাউন্টে তার পিতার ভুয়া নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া জাহিদ হোসেন নামে তার একটি ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে। ভোটার আইডি কার্ডে নগরীর ঝেরঝেরি পাড়া ৩৭-সি এভারগ্রীন ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি লুকিয়ে রেখে ২০০৯ সালের ১১ই জানুয়ারি আবার বিয়ে করে নুরুল ইসলাম। সিলেট নগরীর ঘাষিটুলা আবাসিক এলাকার সবুজসেনা ২২/এ, বাসার মো. শফিক মিয়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রতনাকে সে বিয়ে করে।

২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর ঠিক করে এ বিয়ে করে। তার এই স্ত্রী-ও গত ১১ই জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। জান্নাতুল ফেরদৌস রতনা তার আরজিতে জানান, বিয়ের পর বুঝতে পারি নুরুল ধূর্ত, প্রতারক ও ধান্দাবাজ। বিয়ের পরপরই সে আমার কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। টাকা না দেয়ায় সে অকথ্য নির্যাতন করে।

পরে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। রতনা আরও অভিযোগ করেন, নুরুলের ঘরে থাকা অবস্থায় তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। পরে যখন তিনি পিত্রালয়ে অবস্থান করছিলেন তখন একদিন নুরুল পিত্রালয়ে এসে তলপেটে লাথি মেরে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয়। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, নুরুল লুকিয়ে আরও কয়েকটি বিয়ে করেছে। সর্বশেষ সে ঢাকায় বিয়ে করেছে।

ঢাকায় বিয়ে করা স্ত্রী তার আগের এক সন্তানসহ নুরুলের বাড়িতেই বসবাস করতো। বেশ কিছুদিন ধরে আগের স্ত্রীদের মামলায় নুরুল লুকিয়ে থাকতো। শুক্রবার বাড়ি ফিরলে পুলিশ তাকে আটক করে। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল হান্নান জানান, নুরুল পাঁচটি বিয়ে করেছে বলে এলাকার লোকজন জানেন। সে বিয়েপাগলা হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

এ ছাড়া ধান্দা করে সে জীবিকা নির্বাহ করে বলেও তিনি জানান। সিলেটের কোতোয়ালি থানার এসআই আশরাফুজ্জামান জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে একাধিক বিয়ের কথা স্বীকার করেছে নুরুল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.