আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাঈদী সহ আটক জামায়েত নেতাদের ২০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ



মানবতা বিরোধী অপরাধে আটক জামায়েত ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ২০ই এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পুনরায় হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন । একই সময়ে ঐ তারিখে জামায়েতের অন্য অভিযুক্ত বন্দিদেরকেও আদালতে হাজির করা নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দেলুর বিরুদ্ধে করা সকল মামলার তদন্ত রিপোর্ট যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার এবং সেটি যেনও ৩০ দিনের বেশি না হয়। ৩০ দিনের বেশি হলে রাষ্ট্রপক্ষকে বিলম্বের উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালের পরবর্তী নির্দেশনা নিতে বলেছে আদালত। আজ সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে জামায়েত ইসলামীর নেতা নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ওরফে দেলুকে হাজির করা হয়।

কাঠগড়ায় একটি চেয়ারের মধ্যে বসে দেলু রাষ্ট্র পক্ষ ও তার পক্ষের আইনজীবীর যুক্তি তর্ক শুনছিলো। প্রথম দফায় কিছুক্ষণ শুনানি হয়ে আদালত ১ ঘণ্টার জন্য মুলতবি হয়ে গেলে ১১.৩৭ মিনিটে পুনরায় আদালত বসে। শুরুতেই তিন সদস্যর সমন্বয়ে গড়া আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এর প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “প্লিজ সাবমিট সামথিং মোর মি. হায়দার” অর্থাৎ আরও কিছু দলিল দস্তাবেজ আদালতে পেশ করুন। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী দেলুর বিরুদ্ধে আনা ৫ টি মামলার পূর্নাঙ্গ পুলিশি তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেন। আরেকটি মামলা তদন্ত এখনো বাকি আছে বলে তিনি আদালতকে জানান।

সেটি শেষ করেই দেলুর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগের বিচার শুরু করতে চান বলে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান। আদালত রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীদের এই বিলম্ব হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেন। উত্তরে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী বলেন, সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থেই এই বিলম্ব মাননীয় আদালত। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট বহু মেটেরিয়ালস(আলামত) পাওয়া গেছে। যা আমরা কেস ডায়েরিতে অন্তর্ভুক্ত করে আপনার কাছে জমা দিয়েছি।

রাষ্ট্র পক্ষের বক্তব্য শেষ হলে সাঈদীর আইনজীবী এম তাজুল ইসলামকে আদালত তার শুনানি পেশ করতে বলেন। তিনি আদালতে সাঈদীকে শর্তাধীনে জামিন দেয়ার আবেদন করেন। ছয়টি বিশেষ কারণ দেখিয়ে তিনি সাঈদীর জামিন চান । সাঈদীর আইনজীবী বলেন, মি লর্ড, অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন ৭০ ঊর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তি, তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, কারাগারে তার সুগার ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। , তিনি আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত।

তাকে নিয়মিত ফিজিও থেরাপি নিতে হয় কিন্তু তিনি নিতে পারছেন না। তিনি একজন হৃদরোগী। তার হৃদযন্ত্রে দুইটি রিং পরানো আছে। এনজিও-গ্রাম পরীক্ষায় তার দুটি আর্ট্রিতে( ধমনীতে) ব্লকেজ ধরা পড়েছে। যার একটিতে ৭৪% অন্যটি ৮৫% এর মতো ব্লকেজ পাওয়া গেছে।

জরুরী ভিত্তিতে সেগুলোর অপারেশন করতে হবে। তিনি তার পাসপোর্ট পুলিশের কাছে জমা দিয়ে, তার জেলায় না গিয়ে, প্রতিদিন তার শহীদ বাগস্খ বাসভবনের নিকটস্থ থানায় হাজিরা দিয়ে এবং ২৪ ঘণ্টা তাকে নজর বন্দি করে রাখার শর্তাধীনে অভিযুক্তকে জামিন দেয়া আর্জি পেশ করেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এতটুকু প্রতিকার অভিযুক্ত ব্যক্তি পেতে পারেন। অত:পর সাঈদীর আইনজীবী আন্তর্জাতিক আইনের কিছু ধারা উল্লেখ করেন। ।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেই সকল আইনের বিধান মানার অন্যতম স্বাক্ষর কারী দেশ। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি বহুবার দেশের বাইরে গিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন, তিনি একজন সম্মানিত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামিক স্কলার, তিনি বাংলাদেশে দুইবারের নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পর তিনি কোনও সাক্ষীকে হুমকি প্রদর্শন করেন নাই। তিনি আন্তর্জাতিক বা অভ্যন্তরীণ কোনও সন্ত্রাসবাদের বা সন্ত্রাসবাদী কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত নন। তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ গঠন ছাড়াই তাকে দীর্ঘ সাড়ে আটমাস কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।

অভিযোগ গঠন ছাড়াই তাকে দীর্ঘ সময় আটক রাখা বেআইনি। সাইদই আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর প্রসিকিউশনকে( রাষ্ট্র পক্ষকে) এর জবাব দিতে বলে আদালত। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী বলেন, মি লর্ড( মাননীয় আদালত) সাঈদী সাহেবকে আমরা সাড়ে আট মাস আটক করে রাখি নাই। আমাদের জানা তথ্য মতে তাকে ৬ মাস পুলিশি হেফাজতে আটক রাখা হয়েছে। তিনি একজন ইসলামিক স্কলার সেটা আমরা জানি ।

তার ক্যাসেট সিডি আছে সেটা আমরা জানি। তার ক্যাসেট আমি নিজেও শুনি। তিনি মানুষকে খুব দ্রুত কাছে টানতে পারেন। মি: লর্ড তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ কোনও একজন ব্যক্তিকে খুন করার নয়। গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে মানুষকে জ্যান্ত পুরিয়ে হত্যার করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

আন্তর্জাদিক আইন সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন মি লর্ড আমরা নিজের দেশের অনেক বাধ্যকর আইনমানতে পারি না আবার আন্তজাতির্কক আইন । এই বলে তিনি দেলুর আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অভিযুক্ত বলছেন, তিনি পালিয়ে যাবেন না, তিনি এই করবেন না , সেই করবেন নাা ইত্যাদি” তিনি সেই সকল স্থানে যাবেন না যেখানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। "তিনি যাবেন না, তিনি করবেন না” এসব তো ভবিষ্যতের কথা । এগুলো যে তিনি মানবেন তার কি নিশ্চয়তা আছে? বরং আমরা বলতে পারি তিনি এসব মানবেন না। তিনি এসব করবেন ও করেছেনও।

আমাদের কাছে পুলিশের রিপোর্ট আছে তিনি সাক্ষীদেরকে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। এটা ঠিক তিনি নিজে তা করেন না। কিন্তু তার হয়ে অন্যে সেসব করে। কারণ তিনি জামায়াতের একজন প্রভাবশালী নেতা। তিনি নায়েবে আমীর।

তার মর্যাদা তার দলে অনেক ওপরে। তাকে মুক্তি দিলে মামলার সাক্ষীরা দেশে থাকতে পারবে না। এসব শোনার পর সাঈদীর আইনজীবী বলেন মি: লর্ড আজ অনেক দিন ধরে অভিযুক্ত ব্যক্তির নামে কল্পকাহিনী শোনানো হচ্ছে। লোক দেখানো বিচার করা হচ্ছে। কিছু মিডিয়া কর্মী নিয়ে ভিডিও দেখিয়ে বলা হয় এই যে সাক্ষ্য প্রমাণ অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাওয়া গেলো।

এই সব বলে পুনরায় সাঈদীর আইনজীবী উপরোক্ত কারণ গুলো দেখিয়ে শর্তাধীনে জামিন প্রার্থনা করেন। উভয় পক্ষের যুক্তি তর্ক শুনে আদালত বলেন তাকে যে অপরাধের কারণে ধরা হয়েছে সে অপরাধের বিচার করার জন্য যে আইন প্রণীত হয়েছে তাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনও অবস্থায় জামিন পান না। তবে আদালত তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে শারীরিক সকল সমস্যার চিকিৎসা বিধান করার নির্দেশ দেয়। আদালত আটক জামায়েতের অন্য নেতাদের আগামী ২০ এ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের সম্মুখে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। সূত্র. ঢাকা িনউজ২৪ডটকম


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।