আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘সহযোগীসহ ঘাতক ক্রসফায়ারেনিহত’

যুবলীগের নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যার ৪৫ ঘণ্টার মাথায় হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন যুবলীগের আরেক নেতা এস এম জাহিদ সিদ্দিকী ওরফে তারেক এবং শাহ আলম নামে আরেক ব্যক্তি র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দর সড়কের খিলক্ষেত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) গোয়েন্দা শাখার পরিচালক জিয়াউল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহিদকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের জন্য রাত সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার একটি হাসপাতাল থেকে গুলশান থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। র‌্যাবের গাড়িটি কুড়িল ফ্লাইওভারের কাছে আসার পর ১০-১২ জন সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি করে।

দুই পক্ষের গুলিতে জাহিদ ও শাহ আলম নামের আরেকজন নিহত হন। ’ তিনি বলেন, সন্ত্রাসী শাহ আলম যুবলীগের নেতা জাহিদকে র‌্যাবের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে এসে গুলিতে নিহত হন। এতে দুজন র‌্যাব সদস্যও আহত হন। গতকাল রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, র‌্যাবের মাইক্রোবাসের সামনে কিছুটা আড়াআড়ি দাঁড় করানো একটি টয়োটা কার। কারটির জানালা, সামনের কাচ গুলিতে ঝাঁঝরা।

তবে গাড়ির ভেতরে কোনো রক্ত চোখে পড়েনি। র‌্যাবের মাইক্রোবাসের দুই পাশের জানালার কাচেও গুলির চিহ্ন। ভেতরের আসনের তিন নম্বর সারির এক পাশে পড়ে আছে জাহিদের লাশ। সিটে বসা থাকলেও তাঁর মাথা গাড়ির মেঝেতে লুটিয়ে পড়া। এই দুই গাড়ি থেকে কয়েক গজ দূরে রাস্তার পাশে কাদার ওপর কাত হয়ে পড়ে আছে একটি নম্বরহীন মোটরসাইকেল।

মোটরসাইকেল থেকে একটু দূরে পড়ে ছিল শাহ আলমের গুলিবিদ্ধ লাশ। গত সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল (৪৩) গুলশান ১-এ ‘শপার্স ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি বিপণিবিতানে যান। বিপণিবিতানের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিপণিবিতানের সামনে আসামাত্র একজন হেঁটে এসে তাঁকে গুলি করেন। তিনি রাস্তায় পড়ে গিয়ে আবার ওঠার চেষ্টা করেন। তখন আবার তাঁকে গুলি করা হয়।

এরপর আরেকজন যোগ দেয়। হত্যাকারীরা খুব কাছ থেকে ছয়-সাতটি গুলি করে তাঁকে। এরপর অপেক্ষমাণ দুটি মোটরসাইকেলে উঠে চলে যায় হত্যাকারীরা। ঘটনার পর যুবলীগের নেতা এস এম জাহিদ সিদ্দিকীকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে উত্তরার ফরচুন ক্লিনিক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি জাহিদ এবং এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাখাওয়াত হোসেনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে।

জাহিদ গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত র‌্যাবের পাহারায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল রাতে ওই ক্লিনিকে গেলে এক কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ক্লিনিকে র‌্যাবের পাহারা ছিল। দুই দিন কোনো রোগী আসেননি। র‌্যাব সদস্যরা রাত ১০টার আগে জাহিদকে সেখান থেকে নিয়ে যান। এর পরও সেখানে সাতজন র‌্যাব সদস্যকে পাহারায় দেখা যায়।

 জিয়াউল আহসান গত রাত সাড়ে নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে যুবলীগের ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহিদ সিদ্দিকী ওরফে তারেককে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি গুলি চালিয়ে রিয়াজুলকে হত্যা করেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জন ঘটনাস্থলে ছিল কি না, তা ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এরাসহ আরও কয়েকজন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। র‌্যাবের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, নিহত হওয়ার আগে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদ জানান, এ হত্যাকাণ্ডের তিনিসহ সাত-আটজন অংশ নিয়েছিলেন।

তাঁদের কাছে অস্ত্র ছিল চারটি। একটি তাঁর হাতে, একটি যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন ওরফে চঞ্চলের দেহরক্ষী সোহেলের কাছে, একটি পাপ্পু নামে আরেক যুবকের কাছে, আরেকজনের নাম তিনি জানেন না। তাঁরা সবাই সেখানে আসেন দুটি মোটরসাইকেল ও একটি গাড়িতে করে। র‌্যাব জানায়, আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রিয়াজুলকে সেখানে ডেকে আনা হয়। সোহেল ফোন করে তাঁকে ডেকে আনেন।

এরপর পরিকল্পনামতো তিন দিক থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। তাঁরা মোট ১০টি গুলি ছোড়েন। এর আটটি গুলি রিয়াজুলের শরীরে লাগে। জাহিদ স্বীকার করেন, গুলি করার পরপরই তিনি রিয়াজুলের স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, ‘ভাবি, আপনি কামরাঙ্গীরচরে বাপের বাড়িতে চলে যান। রিয়াজুল মারা গেছে।

’ এ ঘটনায় তিনি নিজেও আহত হন। র‌্যাব জানায়, জাহিদ স্বীকার করেন, এ ঘটনার পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা অস্ত্রগুলো গুলশানে একটি নিরাপদ স্থানে রেখে তাঁরা উত্তরায় চলে যান। সেখানে ক্লিনিকে ভর্তি হলে তাঁর রক্তের প্রয়োজন পড়ে। সোহেল তাঁকে রক্ত দেন।  জাহিদ র‌্যাবকে জানান, সোমবার সন্ধ্যায় রিয়াজুলসহ তাঁরা একসঙ্গে ইফতার করেন।

রিয়াজুল রাত ১১টা পর্যন্ত গুলশানে এক নম্বর মার্কেটে কেনাকাটা করে বাসায় চলে যান। ওই সময় তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সুযোগ না থাকার কারণে সম্ভব হয়নি। রাত ১১টার পর সোহেল ফোন করে রিয়াজুলকে আবার ডেকে আনেন। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।