আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দৌড়া, আটান্ন আইলো। দৌড়া বাঘ আইলো।

কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন।

লেখা যে কোথা থেকে শুরু করব সেটাও বুঝতেছিনা। প্রথমত, বিশ্বকাপ চলাকালীন এই প্রথম কোন ম্যাচ যেটা গ্যালারীতে না দেখে টিভিতে দেখতে হয়েছে।

তবে সেটা নিয়ে কোনো আফসোস নেই। বাংলাদেশের জয়ের থেকে বড় আর কি হতে পারে বলুন!! আশাবাদী মানুষ আমি সবসময়। কিন্তু সেই আমার মধ্যেও কালকে নৈরাশ্য চলে এসেছিল। এক পর্যায়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়ে দিয়েছিলাম " আমাদের বিশ্বকাপ শেষ এবং তার জন্য আমরাই দায়ী"। ইমরুল কায়েসের রান আউট তখনও চোখে ভাসছে।

ঐ একটা রান আউট যে প্রায় শেষ করে দিচ্ছিল। গতকাল সে উইকেটে খেলা হয়েছিল সেখানে ব্যাটিং করা কঠিন। এটা সে ধরনের উইকেট নয় যেখানে চাইলেই স্ট্রোক খেলা যায় কিংবা টাইমিং করা যায়। এখানে তাই শিল্পের থেকে পরিশ্রমের মূল্য অনেক বেশি। সেই পরিশ্রমটা পুরাটাই ঢেলে দিচ্ছিল ইমরুল কায়েস আর সাকিব আল হাসান।

এরপর যখন ইমরুল কায়েস সেভাবে রান আউট হল ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে একজন দুধ ডিম দিয়ে অনেক কষ্ট করে পুডিং রান্না করার পর সেটার উপর নিজেই ভুল করে বসে পড়ল। পুডিং খাওয়ার জিনিস। বসে পড়ার জিনিস না। তামিম ইকবাল সম্ভবত চট্টগ্রামে খেলা একমাত্র ব্যাটসম্যান যে অনায়াসে সেখানে টাইমিং করতে পারেন। এর আগেও দেখেছি অন্য ব্যাটসম্যানরা টাইমিং করতে পারেনা কিন্তু সে ৬ টা ৬ মেরে ৯৫ বলে ৯৫ করার পর ছিল, সিঙ্গেল নেওয়ার থেকে এখানে ৬ মারা সহজ।

(গত বছর জিম্বাবুয়ের সাথে)। নিজের ঘরের পাশের মাঠ। তার থেকে ভাল আর কে জানবে। কালকেও শুরু করে ছিল। ব্যাটটাকে তরবারি বানিয়ে কচুকাটা করতে।

তবে তিনি যেই বলটিতে আউট হলেন সেটা একটা ভাল বল। সিম মুভিমেন্ট ছিল, নিচু হয়ে আসা বল ছিল। ক্রিকেটে ব্যাটিং কোন সহজ ব্যাপার নয়। ব্যাটিং যদি এত সহজ হত তাহলে শচীন টেন্ডুলকারের প্যাড, গার্ড পরে মাঠে নামা লাগত না। শুধু ব্যাট নিয়েই যেতেন।

এটা এ কারনে বললাম যে শচীনও আউট হন। তবে প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যানের নিজের উইকেটকে জীবনের সমান মূল্য দেওয়া উচিত। বোলাররা উইকেট নিতে পারে কিন্তু আমি আমার উইকেট দিবনা। আয়ারল্যান্ডের সাথে জুনায়েদ সিদ্দিকীর রান আউটের কারন ছিল ডাইভ না দেওয়া। কালকেও তিনি ডাইভ দিলেননা।

ডাইভ দেওয়াটা ক্রিকেটের বেসিকের মধ্যে পড়ে। ইমরুল কায়েসের আউটটাতে ডাইভ দিয়ে লাভ হয়নি কিন্তু জুনায়েদ সিদ্দিকী ডাইভ দিলে বেঁচে যেতেন। এরকম উইকেটে ১২ বলে ১২ করার পর এভাবে আউট হওয়াটা দুঃখজনক। স্টুয়ার্ট ব্রডের জায়গায় এসেছিলেন আজমাল শেহজাদ। কেভিন পিটারসনের জায়গায় মরগান।

দু'জনেই প্রায় ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। কেভিন পিটারসন কখনই আমাদের স্পিনারদের বিরুদ্ধে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননা। মরগান স্পিন খুব ভাল খেলেন এবং তার প্রমান দিলেন। আজমাল শেহজাদ যে ৩ টা উইকেট পেলেন সেখানে ব্যাটসম্যানদের দোষের থেকে তার কৃতিত্ব বেশি। এভাবে সিমের উপর ফেলে দুইদিকে বল ঘুরানোর অসাধারন এক স্পেল তিনি দেখিয়েছেন।

এবার আসা যাক বাংলাদেশ কিভাবে জিতল। ১৬৯ রানে ৮ জন আউট হওয়ার পর স্টেডিয়াম খালি হওয়া শুরু করেছিল। রাজ্জাকের আউটটা হওয়ার পর। রাজ্জাক তুলে মেরেছিলেন সোয়ানকে। এই কাজটা যদি করতেই হয় পাওয়ার প্লে নিলেই হত।

সে যাই হোক খেলা আসলে ঘুরেছে সোয়ানের ওভারেই। যেই ওভারে ১৬ রান এসেছে। মাহমুদুল্লাহ রিভার সুইপে চার মারার পর শাফিউল কভারের উপর দিয়ে চার তারপর লংঅনের উপর দিয়ে ছয়। ঠিক তখন কোন ভাবে তারা বুঝতে পেরেছে যে না এখন খেল্লে হবে। এখনও সুযোগ ফিরিয়ে যাইনি।

অসম্ভব কিছুনা। খাদের কিনারা থেকে চাইলে ফিরে আসা যায়। ২০০৬ সালে নবম উইকেটে মাশরাফি রাজ্জাক একবার ৫০ এর বেশি পার্টনারশীপ করে জিতিয়েছিলেন। ক্রিকেটে ইতিহাস মিলানো আমার খুব পছন্দের জিনিস। কোন একদল একভাবে জিতলে তাকে সেটা ফিরিয়ে দিতে হয়।

গতবছর ইংল্যান্ড যখন বাংলাদেশ সফর করে দ্বিতীয় ওয়ানডের ঘটনা। বাংলাদেশ ২৬০ করেছিল। ইংল্যান্ড ৪৫ ওভারে ৮ উইকেটে ২২৮। তখন বাংলাদেশের একমাত্র ইংল্যান্ডকে হারানোই বাকি। সেই খেলা মরগান শাফিউলকে মেরেই বাংলাদেশের জয় ছিনিয়ে নেয়।

কালকের খেলায় মনে হয় সেটার একটা বদলাই নেওয়ার দরকার ছিল। এর আগে শাফিউল বাংলাদেশ ব্রিস্টলে যখন ইংল্যান্ডকে হারায় তখনও শেষ ওভার করেছিল। ৪ বলে ইংল্যান্ডের যখন ছয় লাগে তখন সে স্লোয়ার দেয় একটা। ঐ মুহুর্তে বুদ্ধি করে স্লোয়ার দেওয়াটা চাট্টিখানি কথা না। সেটার জন্য সব থেকে বেশি যেই জিনিসটা লাগে নিজের উপর বিশ্বাস।

আমি বিশ্বাস করি এখন স্লোয়ারটাই কাজে দিবে। যে যাই করুক বল আমার হাতে। সেটাই হল ব্যাপার। অর্ধেক দর্শক স্টেডিয়াম ছেড়ে দিচ্ছে দিক। অনেক মানুষ এখন আবার আমাদের গালি দেওয়া শুরু করেছে দিক।

ব্যাট এখন আমার হাতে। আমি জানি কি করতে হবে। শাফিউল জানেন কি করতে হবে। মাহমুদুল্লাহ জানেন কি করতে হবে। তাই ঝুকি নেওয়া যাবে।

কিন্তু তার জন্য বলটাকে সবসময় ব্যাটের মাঝখানে আনতে হবে। কাল নবম উইকেটে মাহমুদুল্লাহ আর শাফিউল তাই করলেন। ক্রিকেটের একটা ব্যাসিক ফলো করলেন। বলটাকে চেস্টা করলেন ব্যাটের মাঝখানে লাগাতে। সেটা ডিফেন্স করার সময়েই হোক।

অথবা মারার সময়েই হোক। সাকিবের উপর থেকে সম্ভবত একটা পাথর সরে গেল। অনেক ধরনের চাপের মধ্যে তাকে থাকতে হয়েছে। একদল তার বিরুদ্ধে আঙ্গুলের ছবি দিয়েছে। তার ভিডিও নিয়ে রঙ্গতামাশা করেছে।

কাল বাংলাদেশ জয়ের পর যে সাকিব আনন্দে কেঁদে ফেলল এটা হল সব কিছু ছাপিয়ের তার আসল রুপ। তার আঙ্গুলের ছবি কেউ চোরের মত তুলেছে পিছন দিক দিয়ে যেখানে কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। সেই আঙ্গুল কার উদ্দেশ্যে সেটা বোঝার উপাই নেই। কিন্তু কালকের কান্না দৃশ্য কিভাবে হল কেন হল সেটা বোঝার উপায় আছে। কারন ঐ কান্না আমরাও কেঁদেছি।

আমি আগেও বলেছি সে একজন ব্রেভ ক্যাপ্টেন। কালকের টস জয় হওয়ার পর ফিল্ডিং নেওয়াটা তাই বলে। ভারতের সাথে ফিল্ডিং নেওয়াটাও ঠিকি ছিল। তাকে অযথা চাপ না দিলে আমার ধারনা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথেও সে ফিল্ডিং ই নিত। আসা করি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথের কাহিনী লোকজন এখন ভুলে যাবে।

মাঝে মাঝে অনেক কিছুই হয় যেটার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। "৫৮" ব্যাপারটাও এরকম। আমরা বুঝতে পারিনি কিভাবে তারা "৫৮" রানে অলআউট হল। এখন অনেকেই বুঝতে পারবেনা কিভাবে নবম উইকেটে শাফিউল আর মাহমুদুল্লাহ "৫৮" রানের পার্টনারশীপ করল। ব্যাখ্যাতীত ঘটনা যেমন আমাদের বিপক্ষে ঘটতে পারে তেমন আমাদের পক্ষেও ঘটতে পারে - এতটুকু বিশ্বাস রাখতে হবে।

যারা এই বিশ্বাস না রেখে সাকিব আল হাসানের বাসায় আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাসে ঢিল ছুড়ে তাদের সাপোর্টার হওয়ার দরকার নাই। তাদের কারনে বিদেশীরা আমাকে বলে গেছে , তোমাদের বাংলাদেশীদের কাছ থেকে কি ভাল কিছু আশা করা যায়না ?? এর জবাব হল যারা ঢিল ছুড়েছে তাদের কাছ থেকে যায়না। কিন্তু আমাদের ক্রিকেটারদের কাছ থেকে যায়। তারা মাঝে মাঝেই ভাল কিছু আমাদের দেয়। এই যেমন আটান্ন আমরা ফিরিয়ে দিলাম।

আটান্ন এখন আর আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার নয়। দুই বাঘের সেনানীর কারনে আটান্ন এখন আমাদের স্বাছ্বন্দের ব্যাপার। মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলা এত সহজ নয়। দৌড়া আটান্ন আইলো। দৌড়া বাঘ আইলো।

শেষ করার আগে মাইকেল ভনের টুইটার আপডেট। তিনি এবার ইংল্যান্ড দলকে বাসে করে দেশে ফিরার সময় হেলমেট ব্যানহার করতে বলেছেন আর সিটের পাশে বসতে মানা করেছেন। তবে মাইকেল ভনের কথা শোনা লাগবেনা। কোন ইংলিশের কথা শুনতে হবে আমি বলে দিচ্ছি। এটা ঘটেছে খেলা শেষ হয়ার পর।

নাসির হুসেন বললেন, হোয়াট'স দিস?? ডেভিড লয়েড বললেন। " টাইগার্স আর শোয়িং দেয়ার রিয়েল ক্যারেক্টার, দে হ্যাভ ক্যারেক্টার"। খাদের কিনারায় অনেকেই পড়ে। সেখান থেকে উঠে এসে যারা জবাব দিতে পারে তারাই সত্যিকারের টাইগার। (একটা খেলা মিস হয়ে গেছে আর মিস দিতে চাইনা।

রোববার রাতের নাইট কোচের টিকেট কাটা হয়েছে। পরের খেলা থেকেই আবার গ্যালারীর বর্ননা দেওয়া হইবেক। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.