আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিলফামারির একজন রঞ্জিত কুমার রায়.................



একজন রঞ্জিত কুমার রায়........... যিনি একবেলা করেন শিক্ষকতা.....আর একবেলা করেন ইটভাটায়/খেত খামারে দিনমজুরী!!!!! কারও কাছে তিনি দিনমজুর, কারও তিনি শিক্ষক। দিনমজুরি করেন বলেই কি করতে পারেন শিক্ষকতা? নাকি শিক্ষকতা করার জন্যই খেটে মরেন ইটভাটায়/খেত খামারে ? সব প্রশ্নের একটিই উত্তর—তিনি উচ্চশিক্ষিত কিন্তু গরিব এবং অসম্ভব সৎ। দারিদ্র্য বাস্তবে কাউকে মহান করে কি না, সন্দেহ। কিন্তু এই মানুষটি একজন দরিদ্র ও মহান শিক্ষক। তিনি শুধু বিনা বেতনে মাদ্রাসায় পড়াচ্ছেন, তা-ই নয়, শেষ সম্বল পৈতৃক ১৫ শতাংশ জমিও দান করে দিয়েছেন সেই মাদ্রাসায়।

তাঁকে কেবল মানুষ বললে কম বলা হয় কোন পরিচয়ে ডাকা যায় ৩৬ বছর বয়সী রঞ্জিত কুমার রায়কে? শিক্ষক না মজুর? মাটি পুড়ে ইট হয়, আর অভাবে পুড়তে পুড়তে তিনি হয়েছেন ইটভাটার শ্রমিক। দিনমজুরির শেষে তিনি করেন শিক্ষকতা, আর বেতনহীন শিক্ষকতার শেষে দিনমজুরিই তাঁর ও তাঁর পরিবারের বাঁচার উপায়। স্নাতক পাসের পর চাকরি নেন স্থানীয় এক মাদ্রাসায়। কিন্তু সেই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত নয় বলে শিক্ষকদের বেতন দিতে পারে না। তবু এক নয়, দুই নয়, ১১টি বছর তিনি বিনা বেতনে পড়িয়ে যাচ্ছেন সেই মাদ্রাসায়।

সরকার শিশুদের জন্য বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করলেও সব শিক্ষকের বেতনের নিশ্চয়তা আজও অর্জিত হয়নি। অথচ তাঁদেরও খেতে হয়, খাওয়াতে হয় স্ত্রী-সন্তানকে। শিক্ষকতা মহান পেশা বলে সবাই মহিমা দেন, কিন্তু বেতন দেওয়ার যখন কাউকে পাওয়া যায় না, তখন কী করবেন সেই শিক্ষক? কেউ পেশা ছেড়ে দেন, কেউ প্রাইভেট টিউশনি করেন, কেউ পাশাপাশি করেন ব্যবসা। কিন্তু ইটভাটার/খেত খামারে দিনমজুরির কাজই রঞ্জিতের সম্বল। দিনের অর্ধেকটা ইট বহন করেন, বাকি অর্ধেকটায় করেন শিক্ষকতা।

রঞ্জিতের এই দুঃখভরা জীবন আমাদের লজ্জিত করে, ছোট করে দেয়। তাঁর উপজেলায় কি কোনো হূদয়বান মানুষ নেই? সরকারি শিক্ষা কর্মকর্তারা কি একেবারেই অক্ষম? সর্বোপরি স্থানীয় সাংসদ মহাশয়েরও কি দায়িত্ব ছিল না এ রকম একজন শিক্ষকের ত্যাগের প্রতিদান দেওয়ার, একটু সম্মান দেওয়ার? যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ রকম এক মানুষরতন আছেন, সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে পুরস্কৃতই করা উচিত। উচিত কাজটা অনেক সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা করেন না, করেন সাধারণ কেউ। রঞ্জিত রায় সে রকমই এক সাধারণ জন, কিন্তু তাঁর অবদান অসাধারণ। যিনি শিক্ষার সম্মান রেখেছেন, শ্রমের মর্যাদা হাড়ে হাড়ে শোধ করেছেন।

-------------------------------- ‘আমার নিজের জন্য কিছু চাই না। মাদ্রাসাটার গতি হলে ভালো হয়। এটা হলে আমরা বাঁচব। নয়তো আমাদের ভোগান্তি থেকেই যাবে। ’ নীলফামারী সদর উপজেলার বেরাকুটি বরুয়া দাখিল মাদ্রাসায় ১১ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন রঞ্জিত কুমার রায়।

কিন্তু মাইনে পান না তিনি। কারণ মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়নি। তিনি সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে দিনমজুরিতে নামেন। কখনো খেত-খামারে কাজ করেন, কখনো ইটভাটায়। উল্লেখ্য রঞ্জিত কুমার রায় তার নিজের শেষ সম্বল ১৪ শতাংস জায়গা ঐ মাদরাসায় দান করেন।

মাদ্রাসার সুপার মো. মোস্তফা কামাল বলেন, এই মাদ্রাসায় দুজন শিক্ষক আছেন, যাঁরা হতদরিদ্র। এঁদের একজন রঞ্জিত কুমার রায়। দিনমজুরি না করলে তাঁদের চলে না। সে কারণে তাঁদের ক্লাসগুলো সুবিধামতো সময়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই তাঁর পাশে দাঁড়াতে চান, সহায়তা করতে চান।

জবাবে শিক্ষক রঞ্জিত বলেন, কোনো চাকরি নয়। তিনি ওই মাদ্রাসাতেই শিক্ষকতা করতে চান। মাদ্রাসার জন্য একটা ঘর চান। আর মাদ্রাসাটি যেন এমপিওভুক্ত হয়—এটাই তাঁর একান্ত চাওয়া। এই শিক্ষককে আমরা জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

আমরা হাজারো নৈতিক দৈন্যতার মাঝে এ রকম একটি খবরে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাই। ...রঞ্জিত কুমার রায়, আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই। ’ মানুষ গড়ার কারিগরের প্রতি সমাজের এ কেমন নিষ্ঠুর আচরণ! মাদ্রাসাটি শিগগির এমপিওভুক্ত করার দাবি জানাই। ঐ এলাকার সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর, আমার জানা মতে আসাদুজ্জামান নূর একজন ভাল মানুয়, সমাজসেবক তার এলাকায় এমন একিট দৃষ্টান্ত আরো আগেই তার এগিয়ে আসা উচিৎ ছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.