আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩০০০ একর জমি ইজারা নিয়ে দরিদ্রদের অধিকার হরণের অভিযোগ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে---- শফিকুল ইসলাম জুয়েল ( কালের কন্ঠ- ০৮/০৩/২০১১ )



এবার 'গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশনের' মাধ্যমে দরিদ্রদের অধিকার হরণের অভিযোগ উঠল গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে। 'গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন' হবে_এ লক্ষ্যে মাত্র ১০০ টাকা হারে খাজনায় ১৯৮৬ সালে সরকার প্রায় তিন হাজার একর জমি ইজারা দেয় ড. ইউনূসের এ প্রতিষ্ঠানকে। তবে ভূমি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পৃথক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে উদ্যোগটির অপব্যবহারের ভয়াল চিত্র। অনিয়মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গ্রামীণ থেকে চড়া সুদে গাভি কিনতে এবং পরে কম দরে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য করা, মৎস্যচাষিদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া এবং লভ্যাংশের সিংহ ভাগ নিজেরা নিয়ে নেওয়া। অভিযোগ উঠেছে, এরশাদ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে 'বিশেষ আঁতাত' করে ড. ইউনূস পানির দরে জমি লিজ নেন।

এরপর বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ ও পশু পালন করে নিজেরা আয় করেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। অথচ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তেমন কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। বরং মাছ ও পশু পালন খাতে ঋণ দিয়ে অসংখ্য গরিবের স্বাভাবিক জীবন দুর্বিষহ করা হয়। সরকারের অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের এ প্রতিষ্ঠানে অনিয়মসহ শর্ত লঙ্ঘনের বিশদ চিত্র। '২০০৭ সালে দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ অভিযানকালে তৎকালীন মৎস্য ও পশুসম্পদ উপদেষ্টাকে বড় বড় গরু-গাভি এবং মাছ দেখানো হয়।

আসলে তা পাশের সলঙ্গা গ্রাম থেকে ভাড়া করে এনে মজুদ রেখেছিলেন গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। ' এ অভিযোগ করেন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের পুল্লা গ্রামের আবদুল হামিদ ভূমি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মূল্যায়ন কমিটির কাছে। কমিটিকে একই তথ্য দেন তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের মোবাচ্ছের আলী। প্রতিবেদনে গুরুতর অভিযোগ : ইজারা দেওয়ার শর্তের মধ্যে ছিল তিন মাস পরপর কার্যক্রমের মূল্যায়ন প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। তবে গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন বারবার এ শর্ত লঙ্ঘন করলে মন্ত্রণালয় থেকে সরেজমিন অনুসন্ধান চালাতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

সরেজমিন অনুসন্ধান শেষে 'কার্যক্রম মূল্যায়ন প্রতিবেদন' ২০০৯ সালের ৯ জুন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, 'প্রচুর শ্রম দিয়েও সুবিধা না পাওয়ায় দিন দিন কমে গেছে মৎস্যচাষি ও সদস্যের সংখ্যা। এ ছাড়া পুকুর ব্যবস্থাপনায় গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত এবং কারিগরি ব্যবস্থাপনা তাদের (গ্রামীণ) স্বার্থের হওয়ায় অনেকেই মুখ ফিরিয়ে চলে গেছেন। ফলে ১৯৮৭ সালে প্রকল্প শুরুর সময়ে ৭৩ একর আয়তনের প্রতাপ দিঘি পুকুরে সদস্যসংখ্যা ৭৩ জন থাকলেও এখন তা কমে হয়েছে ২২ জন। একইভাবে ৫০ বিঘা আয়তনের উলিপুর পুকুরের সদস্য ৪০ থেকে কমে ২৩ হয়েছে।

৩০ একর আয়তনের সংগই পুকুরের সদস্য ২০ থেকে কমে ৯ হয়েছে। প্রায় একই ধরনের চিত্র ৮০৮টি পুকুরের। ' কমিটির সদস্যদের কাছে চাষিরা জানান, দিনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম, রাতের পাহারাসহ দৈনন্দিন দেওয়া শ্রম হিসাব করলে গ্রামীণের মাছ চাষ থেকে কৃষি ক্ষেতে মজুরি বা রিকশা/ভ্যান চালানোতে আয় অনেক বেশি। এই অংশে কমিটির সুপারিশে বলা হয়, 'মাছ চাষ কার্যক্রমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর লাভজনক কর্মসংস্থান করতে গ্রামীণ ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে মৎস্য ব্যবস্থাপনা গ্রুপের সদস্য কমে গেছে।

' মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া সারসংক্ষেপে বলেছে, বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন প্রকল্পের অগ্রগতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেনি। ফলে একটি কমিটি গঠন করে ওই ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়। এ উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় মন্ত্রণালয় গত ৯ জুন ২০০৯ সালে চুক্তিটি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয় বলেও সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়। জানা যায়, ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিবের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে এ সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়।

বহুরূপী অনিয়ম : তদন্ত কমিটিকে গ্রামীণের এক সদস্য বলেন, 'গ্রামীণ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে গাভি কেনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে মৎস্য কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ' প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, 'গরু কিনতে হয় গ্রামীণ ফাউন্ডেশন থেকে। এতে চড়া ঋণ-সুদ ছাড়াও দাম বেশি দিতে হয়। দুধ বিক্রি করতে হয় বাজারমূল্যের চেয়ে লিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে গ্রামীণের কাছে। ফলে সম্ভাবনাময় গরু পালনেও লাভের মুখ দেখেন না ঋণের জালে আটকে পড়া গ্রামীণের সদস্যরা।

' সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার যশাই দিঘি গ্রামের চিত্তরঞ্জন কমিটিকে বলেন, 'গাভির দুধ বিক্রির টাকা আর গাভি বিক্রির টাকা দিয়ে শোধ হয়নি ঋণ। ' এ প্রসঙ্গে পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মরিচ গ্রামের গ্রামীণ ব্যাংকের কেন্দ্র প্রধান ষাটোর্ধ্ব আবু বকর সিদ্দিক কমিটির সদস্যদের বলেন, '১৮ হাজার টাকা সমমূল্যের গরু ২৪ হাজার টাকায় কিনে দেয় গ্রামীণ। পরে সুদসহ আদায় করে ৩২ হাজার টাকা। ' প্রতিবেদনে মৎস্যচাষিদের কারিগরি জ্ঞান বিষয়ে বলা হয়েছে, 'মাছ চাষ বিষয়ে তেমন প্রশিক্ষণই পায়নি চাষিরা। এ ছাড়া কিছুদিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও তা ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের ১৬ নীতির বাস্তবায়ন প্রসঙ্গ।

' প্রতিবেদনে রেকর্ড বই ও চাষিদের বক্তব্যে অসংগতি অংশে বলা হয়, 'সমীক্ষাকালে গ্রামীণ ব্যাংক পুকুরে পোনামাছের মজুদ হার বিঘাপ্রতি গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ বলে জানালেও চাষি সদস্যদের দাবি এ হার এক হাজারেরও বেশি। ' পুকুর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, 'খাদ্য প্রয়োগ, কচুরিপানা পরিষ্কারসহ নানা ক্ষেত্রে গ্রামীণের চাপিয়ে দেওয়া নির্দেশনায় মাছের উৎপাদন আশানুরূপ বাড়েনি। এমনকি অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যায় ভেসে মাছ বেরিয়ে গেলেও গ্রামীণ ফাউন্ডেশন কোনো উদ্যোগ নেয় না। ফলে চাষিদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। পরে অভাবগ্রস্ত হয়ে ঋণ নিয়ে সুদের জালে আটকে পড়ে।

' জানা গেছে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ সরকারের সময় 'বিশেষ উদ্দেশ্যে' এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে খামারগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের শর্ত সাপেক্ষে গ্রামীণ ব্যাংককে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে চারটি বড় প্রকল্প ও ২০টি খামারের মেয়াদ গত ২১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। এখনো একটি বড় প্রকল্প (চকরিয়া চিংড়ি খামারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর) পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের 'গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন। ' চুক্তির অধিকাংশ শর্ত ভঙ্গ : ভূমি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জমি ইজারা চুক্তিপত্রের অধিকাংশ শর্তই ভঙ্গ করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। ১৯৮৬ সালে সরকারি এসব সম্পত্তি ইজারায় চুক্তিনামার ৬ নম্বর শর্তে জমি ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের নামে ইজারা নিয়ে লাভজনক কম্পানি 'গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন'কে জমিগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ভূমিহীনদের মাঝে সম্পত্তি সাব লিজ দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে। চুক্তির ২ নম্বর শর্ত ছিল গাড়ি, অফিস, বাসগৃহ ও স্থাপনার মূল্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধ করা। তবে তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। কমিটি মন্ত্রণালয়কে আরো জানায়, লিজের আওতাভুক্ত জমি থেকে প্রাপ্ত আয় গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্যাংকের ভূমিহীন সদস্যদের মাঝে বিতরণের শর্ত থাকলেও তা মানা হয়নি।

এ ছাড়া ৪ নম্বর শর্তানুযায়ী লিজের মেয়াদকালে প্রতি একর জমির বিপরীতে প্রতি চতুর্থ বছরে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি হারে খাজনা দেওয়ার চুক্তি থাকলেও তা মানেনি গ্রামীণ কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনের পুকুর ইজারা এবং কম মূল্যে দুধ বিক্রিবিষয়ক অংশে চৌবাড়িয়া গ্রামের আলতাব আলীর ছেলে আবদুল হামিদের বক্তব্য রয়েছে। আবদুল হামিদের ভাষ্য, '৭ দশমিক ৩৩ একর আয়তনের (দাগ নম্বর ১১৬৩, ১১৭২, ৬৫৭ ও ৬৬৭) চারটি পুকুর গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশনের জয়সাগর খামার তাড়াশ ইউনিট অফিস থেকে লিজ নিই। কিন্তু গ্রামীণের চাপিয়ে দেওয়া শর্ত মানতে গিয়ে আয়ের পরিবর্তে লোকসান করি। এ ছাড়া পুকুর নেওয়ার বিনিময়ে গরু কেনায় ২৮ হাজার টাকা ঋণ নিতে বাধ্য করে গ্রামীণ।

পরে বাজারদরের তুলনায় অনেক কম মূল্যে দুধ বিক্রি করায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়। ' প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রচুর শ্রম দিয়েও সদস্য চাষিরা উপকৃত হচ্ছে না। কারণ মাছচাষে আয়ের অর্ধেক (৫০ শতাংশ) জমা হয় গ্রামীণ ফাউন্ডেশনে। এরপর গ্রুপ ও আপৎকালীন ফান্ডে আরো ১০ শতাংশ কেটে নেয় গ্রামীণ। এরপর ৪০ শতাংশ অর্থ চাষি সদস্যদের মাঝে বণ্টন করা হয় বলে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন জানায়; যদিও চাষি সদস্যদের দাবি, তাদের হাতে আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি আসে না।

' প্রতিবেদনে প্রকল্পের নাম পরিবর্তন অংশে বলা হয়, 'ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি ও সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিমগাছি মৎস্য প্রকল্প ইজারা নেয় গ্রামীণ ব্যাংক। ইজারার পর থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কার্যক্রম না করে প্রকল্পের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে নিমগাছি মৎস্য প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জয়সাগর খামার, যা ইজারা চুক্তির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। ' কোথায় কত একর : মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে দেশের ৩০ জেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের ইজারা নেওয়া জমি ও জলাশয়ের মোট পরিমাণ প্রায় তিন হাজার একর। এর মধ্যে জলায়তন প্রায় দুই হাজার ৭৭৭ এবং স্থাপনা ও অফিসের পরিমাণ প্রায় ২২৫ একর।

তাদের হিসাবে, নিমগাছি মৎস্য চাষ প্রকল্পের জলায়তনের পরিমাণ এক হাজার ৭৬৪ একর, চকোরিয়া চিংড়ি খামার ৩০০ একর, সাতক্ষীরা চিংড়ি প্রদর্শনী খামার ৪৯ একর, দিনাজপুর মৎস্য চাষ প্রকল্প ৩৮৯ একর এবং নন্দীগ্রাম বিশেষ মৎস্য চাষ প্রকল্পের আয়তন ১২৫ একর। এ ছাড়া ২০টি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের প্রতিটির গড় আয়তন প্রায় সাড়ে সাত একর হিসেবে ১৫০ একর। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে জানা যায়, ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সরকারি পুকুর ও জলাশয়গুলো গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার অধীন ছিল। ১৯৯৪ সালে গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন করে খামারগুলোর ব্যবস্থাপনা হস্তান্তর করা হয়। এই হস্তান্তর চুক্তি লঙ্ঘন করে।

নবায়ন চান ইউনূস : সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ইজারা নেওয়া খামারগুলোর মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় পুনরায় ইজারা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ড. ইউনূস। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১০ সালের ১৪ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজে আবেদন করেন। এ ছাড়া গত ২৭ নভেম্বর ভূমি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পৃথক আবেদন করেছেন গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসানুল বারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করতে নানা তদবির হয়েছে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা এবং দেশে অবস্থানরত ক্ষমতাধর দেশের এক রাষ্ট্রদূত মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে ফোন করে ইজারা নবায়নের সুপারিশ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদনে বলা হয়েছে, খামারগুলো চাষের শুরুতে হেক্টরপ্রতি ১১০ কেজি মাছ উৎপাদিত হলেও এখন তা চার হাজার ২০০ কেজি ছাড়িয়েছে। ২০১১ সালে যা চার হাজার ৮০০ কেজি ছাড়াবে। খামারগুলো আয়ের ৫০ শতাংশ দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিতভাবে লিজমানি হিসেবে দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকা সরকারকে পরিশোধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন বিনিয়োগ করেছে মোটা অঙ্কের অর্থ।

মৎস্য ও পশুপালন খাত এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে আগামী ২৫ বছরের জন্য খামারগুলো পুনরায় ইজারা চায় গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন। প্রায় একই ধরনের বক্তব্য ও তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসানুল বারীর আবেদনে। গতকাল রাত সোয়া ৭টার দিকে টেলিফোনে সার্বিক কার্যক্রম ও অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গ্রামীণ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এম শাজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। আমাদের নিযুক্ত পিআরওর (প্রেস রিলেশন অফিসার) সঙ্গে কথা বলুন। ' জানা গেছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ষাটের দশকে মৎস্য চাষ কার্যক্রম সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা জরুরি হিসেবে দেখা দেয়।

এ লক্ষ্যে ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে ১২৩টি খামার স্থাপন ও নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। এরপর এরশাদ সরকারের আমলে সহজ শর্তে বছরে মাত্র ১০০ টাকা (একরপ্রতি) হারে খাজনা দেওয়ার শর্তে সরকারের প্রায় তিন হাজার একর জমি লিজ দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে খোদ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, শায়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। ১০০ টাকায় এক একর জমি পাওয়া সেই নজিরকেও হার মানায়। 'গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের' নামে এ অসাধ্য সাধন করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কর্মকর্তারা আরো বলছেন, এসব জলাশয় ও স্থাপনা সরকারি ব্যবস্থাপনায় কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে ইজারা দেওয়া হলে বছরে কয়েক শ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.