আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেয়াদপ সাকিব লিখছেন প্রথম আলোয় এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি



একে তো ম্যাচটা ওভাবে হারলাম, তার ওপর হারের পর সবার যে রকম প্রতিক্রিয়া দেখলাম, তারপর রাতটা খুব ভালো কেটেছে বলব না। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে মন ভালো হয়ে গেছে। ছাত্র বয়সী একদল সমর্থক হোটেলে ফুল নিয়ে এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। আগের রাতে দর্শকদের আচরণের জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করল এবং দুঃসময়েও বাংলাদেশ দলের প্রতি অব্যাহত সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। বাংলাদেশে আসলে দুই ধরনের দর্শক-সমর্থকই আছে।

আমি বলব, যারা খারাপ সময়েও আমাদের পাশে থাকে, তারাই প্রকৃত সমর্থক। খেলায় উত্থান-পতন থাকবে। ভালো সময়ে হাততালি দেবেন, আর খারাপ সময়ে গালাগাল করবেন, ইট-পাথর ছুড়বেন, তাহলে আপনি কেমন সমর্থক? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পর কিছু দর্শক খুব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে। অনেকে ক্রিকেটারদের উদ্দেশে অশোভন মন্তব্য করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলোয়াড়দের বাসে ঢিল মারার মতো কাজও করেছে কেউ কেউ।

আমার ধারণা, এসব যারা করে, তাদের বেশির ভাগেরই ক্রিকেট সম্পর্কে পুরো ধারণা নেই। তারা বোঝে শুধু জয়-পরাজয়। কাজেই তাদের এই আচরণ নিয়ে আমাদের কোনো আফসোসও নেই। আপনি যতই বলুন, এসব তাদের দিক থেকে হতেই থাকবে। সুতরাং এই প্রতিক্রিয়াকে আমরা পাত্তা দিতে চাচ্ছি না।

দুনিয়ায় ভালো-খারাপ মিলিয়েই মানুষ। সকালে ফুল নিয়ে যারা এসেছে, এ রকম ভালো মানুষও তো এ দেশে আছে! শিক্ষিত কিংবা রুচিশীল মানুষ বা যাঁরা কাজের মধ্যে থাকেন, তাঁদের কষ্টের প্রকাশ কখনো এমন দুঃখজনক হতে পারে না। আমরা খারাপ খেললে তাঁদেরও খারাপ লাগে। কিন্তু সেই খারাপ লাগাটা তাঁরা এভাবে প্রকাশ করেন না। তাঁরা বরং আমাদের কষ্টটা বুঝতে চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশ দল খারাপ খেললে মানুষ কষ্ট পায়, আমরা কি আনন্দে থাকি? সবচেয়ে বেশি কষ্ট যে আমাদেরই, সেটা অনেকেই বুঝতে চায় না। সবচেয়ে খারাপ লাগে, যখন দেখি জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররাও আর দশজন সাধারণ দর্শকের মতো কথা বলেন। তাঁরা অনেক বোঝেন, অনেক খেলেছেন, এ রকম পরিস্থিতিতেও অনেকবারই পড়েছেন। তাঁদের কথাগুলোই তাই বেশি হতাশাজনক। একটা জিনিস অন্তত তাঁদের চিন্তা করা উচিত, তাঁরা কী ক্রিকেট খেলে এসেছেন।

আমি চাই না কাউকে ছোট করতে। তবে কে কত দূর খেলে এসেছেন, সেটা রেকর্ড ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। আমরা জানি, কার কেমন রেকর্ড আছে, কারা কোন ক্রিকেট খেলে এসেছেন, কী ধরনের ক্রিকেট খেলে এসেছেন। এটা স্বীকার করি, তাঁরা ওই সময় শুরু না করলে আমরা হয়তো আজ এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। তবে আমার মনে হয় না, বাংলাদেশে এমন কোনো ক্রিকেটার আছেন, যিনি এ রকম বাজে পরিস্থিতিতে পড়েননি।

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই প্রথম আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়লাম। আমরা দু-তিন বছরে একদিন যে পরিস্থিতিতে পড়ছি, আমাদের তো মনে হয়, তাঁরা প্রায়ই সে রকম পরিস্থিতিতে পড়তেন! ভালো পরিস্থিতির দেখা পেতেন মাঝেমধ্যে। কাজেই সবারই বোধ হয় একটু বুঝেশুনে কথা বলা উচিত। তবে সব সাবেক ক্রিকেটারই যে এমন বলছেন, তা নয়। অনেকে আমাদের দিকে সমর্থনের হাতও বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

এই সমর্থন আমাদের কাছে মহার্ঘ্য। আমার কাছে ১ রানে হারলে যা, ১০০ রানে হারলেও তা, ১০০০ রানে হারলেও তা-ই। হার হারই, জয় জয়ই। আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। তার পরও ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার পর দলের সবার মনই খারাপ ছিল।

ড্রেসিংরুমে, হোটেলে সবাই সবাইকে সান্ত্বনা ও সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখনো তো সব শেষ হয়ে যায়নি—সামনে তিনটি ম্যাচ আছে। কোচও আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরের ম্যাচগুলোতে ভালো খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছেন। তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুটো জিতলেও পরের রাউন্ডে যাওয়ার ভালো সুযোগ থাকবে।

খেলার আগেই তাই হেরে বসা যাবে না। আমরা জানি, ভালো ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য আমাদের আছে। একটা ম্যাচ খারাপ হলেও ওটা নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই। অনেকে বলছেন, সেদিন নাকি আমাদের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না! এটা কি সম্ভব? কেউ কি কোনো দিন পরিকল্পনা ছাড়া খেলতে নামে? হ্যাঁ, হতে পারে আমাদের পরিকল্পনাটা কাজে লাগেনি। তবে আট নম্বর ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকা পর্যন্তও আমার মনে হয়েছে হয়তো একটা জুটি হবে, মোটামুটি একটা রান দাঁড়াবে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলাররা খুব অসাধারণ বোলিং না করলেও ভালো জায়গায় বল ফেলেছে। ওরা খুব দৃঢ়প্রতিজ্ঞও ছিল। আর আমরা নিজেদের প্রয়োগ করার দিক দিয়ে ঠিক উল্টো। ভালো ব্যাটিং করিনি, ভালো ক্রিকেট খেলিনি। তবে আবারও বলি, এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি।

আমাদের এখন প্রথম কাজ পরের ম্যাচটাতে ভালো ক্রিকেট খেলা। তারপর যা হওয়ার হবে। উপরের লেখাটি টাকার বিনিময়ে লেখা। যেখানে বেয়াদপটার আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। গত ৩/৪ মাসে অন্তত ১০০বার বেয়াদপ শব্দটা ব্যবহার করে প্রথম আলো পত্রিকায় কমেন্ট করেছি।

কিন্তু ওরা মুছে দেয়। আশা করি এখানে মুছে দেওয়া হবেনা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।