আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উদীচী ট্রাজেডির এক যুগ : বিচারকাজ আবার শুরু হোক দাবি সতীর্থদের



যশোর: ৬ মার্চ। যশোরসহ দেশের সংস্কৃতিসেবী সব মানুষের জন্য একটি কলঙ্কের দিন। ১২ বছর আগে এদিন গভীর রাতে যশোর টাউন হল ময়দানে বর্বরোচিত বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন তরতাজা মানুষ। পঙ্গুত্ববরণসহ আহত হন দু’শ’ নারী পুরুষ। চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ে আসামিরা সবাই মুক্ত হয়ে যায়।

এরপর পুনর্তদনত্ম আবার আদালতের রায়ে তা স্থগিত। এমন পরিস্থিতিতে মামলার বিচারকাজ ফের শুরু হোক-এ দাবি সতীর্থদের। দোষীদের সাজা চান উদীচীর কর্মীরা। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষদিন। রাত ১টার কিছু সময় পর মঞ্চের পেছনে প্রথমে একটি পরে আরেকটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

বোমা হামলায় প্রাণ হারান নূর ইসলাম, নাজমূল হদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সি, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণ। আহতদের কেউ দু’ পা, কারো এক পা, কারো হাত, কেউবা শ্রবণশক্তি হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন। এ ঘটনার পরদিন অজ্ঞানামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর ১৯৯৯ সালের ১৪িডসম্বর বিএনপিনেতা তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনের নামে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে তরিকুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তার নাম বাদ দিয়ে দেন।

২০০৬ সালের ৩০ মে যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালত এ মামলার রায়ে ২৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। পরবর্তীতে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ন্যায়বিচার হয়নি বলে পুনর্তদন্তের আবেদন করে। এরপর এ মামলাটির বর্ধিত তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হরকাতুল জিহাদনেতা মুফতি হান্নান আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হলে উদীচীর বোমা হামলা মামলা নতুন মোড় নেয়। ওই বছরে আদালতে হান্নান তার দেয়া জবানবন্দিতে উদীচী বোমা হামলায় নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

পুলিশ হরকাতুল জিহাদের সদস্য বরিশালের আবুল হোসেন ও মাদারীপুরের মাওলানা আব্দুর রউফকে আটক করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের জুন মাসের শুরুতে উদীচী ট্রাজেডি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এরপর ৮ জুন হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমণ্বেয় গঠিত বেঞ্চ, দীর্ঘ বিরতির পর কেন এ মামলাটি চালুর আবেদন মঞ্জুর করা হবে না মর্মে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিশ জারি করেন। সরকার ঘোষিত রায়ের বিরুদ্ধে রিট করায় স্বরাষট্র মন্ত্রণালয় ১৩ জুন এক সভায় মামলাটির বর্ধিত তদন্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রানত্ম চিঠি ২০১০ সালের ১৬ সেপটম্বর যশোর সিআইডিতে পৌঁছায়।

এরপরই প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক কার্যক্রম শেষ করে বর্ধিত তদনত্ম স্থগিত করে যশোর সিআইডি। সিআইডির এএসপি কাইয়ুম শিকদার বলেন, আদালত চাইলে বর্ধিত তদন্ত আবারো শুরু হতে পারে। প্রায় এক যুগ পর গত ২৪ জানুয়ারি উদীচীর সম্মেলনে নারকীয় বোমাহামলায় নিহত ও আহত ১১ পরিবারের সদস্যদের মাঝে ১৪ লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে দেয়া হয় এ অর্থসহায়তা। উদীচী যশোর জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক ডিএম শাহীদুজ্জামান বলেন, যেভাবেই হোক মামলার বিচার কাজ আবার শুরু করার দাবি করছি।

আমরা চাই এ ঘটনার সাথে জড়িড়তদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসিত্ম। তিনি জানান, এ মাসের শুরুতে আমরা আরো চারজন নিহত ও একজন আহত ব্যক্তির অর্থসহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছি। কর্মসূচী উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ৬ মার্চ পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় যশোর টাউন হল মাঠস্থ শহিদবেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। এরপর রওশন আলী মঞ্চে আলোচনাসভা।

একইস্থানে প্রতিবাদী সঙ্গীত পরিবেশন এবং শেষে ৬মার্চ রাতে নিহত দশ শহীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে দশটি মশাল প্রজ্জ্বলন করা হবে বলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডিএম শাহীদুজ্জামান জানান। #

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.