আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দলীয় বন্ধুই ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে মারল যুবলীগ নেতাকে

মাথায় টুপি, পরনে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি, দেখতে পাক্কা মুসল্লি। এক হাতে পিস্তল, অন্য হাতে মোবাইল ফোন। মোবাইলে কথা বলতে বলতেই গুলি করছেন দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন খান ওরফে মিল্কিকে। দৃশ্যটি অনেকটা ফিল্মি হলেও বাস্তবে সোমবার মধ্যরাতে রাজধানীর গুলশান-১ নাম্বারে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে ঘটেছে এ ঘটনা। গুলিতে আহত হয়ে মিল্কি লুটিয়ে পড়লে মুসল্লি চেহারার যুবকটি মোটরসাইকেলে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যান।

পুরো দৃশ্যটিই ধরা পড়ে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সিসি ক্যামেরায়।

জানা গেছে, আশপাশের মানুষ প্রথমে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আহত মিল্কিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। মিল্কির পরিবারের সদস্যরা জানান, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই খুন করেছে তাকে।

মিল্কিকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত শুরু করে র্যাব ও পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে রাতেই খুনিদের শনাক্তে কাজ শুরু করে একাধিক টিম। ভোররাতের দিকে পুলিশ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করে ঢাকা মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ সিদ্দিকী তারেককে। এ সময় উত্তরার একটি হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তারেক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিল্কিকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় খুনির সঙ্গে সম্পৃক্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে তারেকও আহত হন।

পুলিশ সন্দেহ করছে, তারেকই দিয়েছেন খুনের নেতৃত্ব। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তারেকের সঙ্গে মিল্কির বিরোধ চলে আসছিল। আর এ বিরোধের জেরেই গুলশানে নৃশংসভাবে খুনের শিকার হন মিল্কি। খুনের সঙ্গে গুলশান-বাড্ডা এলাকার যুবলীগের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সরাসরি সম্পৃক্ত। র্যাব আশা করছে, পুরো চক্রকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে দু-এক দিনের মধ্যে।

অবশ্য এরই মধ্যে তারেক ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে আরও পাঁচজনকে। র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ জানান, গতকাল সকালে ওই ছয়জনকে আটক করে র্যাব-১ কার্যালয়ে আনা হয়েছে।  
র‌্যাব-১-এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সোমবার রাত ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্কি হত্যায় জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে আটক করা হয়। এরা হলেন এইচ এম জাহিদ সিদ্দিকী তারেক (৩৫), তুহিনুর রহমান (২৫), সৈয়দ মোস্তফা আলী রুমি (৩৩), মোহাম্মদ রাসেদ মাহামুদ (২৫), সাইদুল ইসলাম নুরুজ্জামান (২২) ও মোহাম্মদ সুজন হাওলাদার (২২)।
এদিকে এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মেজর রাশেদ বাদি হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেছেন।

মামলা নম্বর-৪৪। মামলায় গতকাল রাত ৯টায় উত্তরা এলাকা থেকে মিজান নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করেছে 
র‌্যাব-১ এর একটি দল।
সিসি ক্যামেরায় ধারণ : গুলশান থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান জানান, মিল্কি ওই রোডে তার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে গল্প করছিলেন। এ সময় কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলে এসে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় তাকে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এরপর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, কী কারণে তাকে হত্যা করেছে, তা জানা যায়নি। এ ঘটনায় এ প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

এদিকে র‌্যাবের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের বিরোধকে কেন্দ্র করে ছয় মাস আগে কলকাতায় ঢাকার আরেক সন্ত্রাসী শাহাদাতকে দিয়ে মিল্কিকে আটক করান তারেক। ভারতীয় পুলিশ ঢাকার র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিল্কির পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।

এরপর শাহাদাতের মাধ্যমে মিল্কিকে খুন করার পরিকল্পনা করেন তারেক। কিন্তু শাহাদাত এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলম্ব করায় বাড্ডা এলাকার যুবলীগের একদল সন্ত্রাসীকে নিয়ে নৃশংসভাবে মিল্কিকে খুনের নেতৃত্ব দেন তারেক নিজেই। জানা গেছে, যুবলীগের এবারকার উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর কমিটিতে রয়েছে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের একক আধিপত্য। অর্থের বিনিময়ে নেতৃত্বে আসা সহজ হওয়ায় যে-কেউ কমিটিতে ঢুকতে পারছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আশঙ্কা করছে, যুগলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধে খুনোখুনির ঘটনা আরও বাড়তে পারে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.