আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্ডেচাই ভান্নু-(ইসরায়েল)

১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর মরক্কোতে জন্মগ্রহণ করেন মার্ডেচাই ভান্নু। জন ক্রসম্যান নামেও তার পরিচিতি রয়েছে। আশির দশকে ইসরাইলের পারমাণবিক কার্যক্রম প্রকল্পে একজন টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগ দেন ভান্নু। যদিও বলা হতো যে, ইসরায়েল ব্যাপক বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র নয় বরং শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের ওপর গবেষণা করছে, বাস্তবে কিন্তু তা ছিল না। পশ্চিমা দেশের সহায়তায় ইসরায়েল বস্তুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে অনেক দূর এগিয়ে যায়, যা ভান্নুর পছন্দ ছিল না।

ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে ১৯৮৫ সালে একবার চাকরি হারালেও লেবার ইউনিয়নের তদবিরে ভান্নু আবার চাকরি ফিরে পান। এই সময় তিনি বেশ কিছু গোপন তথ্য সংগ্রহ করেন এবং লুকিয়ে পারমাণবিক প্রকল্পের ৫৭টি ছবি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন। এর পরপরই ফিলিস্তিনিদের প্রতি দুর্বল সন্দেহে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চাকরি হারিয়ে ১৯৮৫ সালেই ভান্নু অস্ট্রেলিয়া চলে যান এবং ট্যাঙ্ িচালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। এ সময় ইহুদি ধর্ম ছেড়ে তিনি খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন।

১৯৮৫ সালের জুন মাসে কলম্বিয়ার ফ্রি ল্যান্স সাংবাদিক ওসকার গুইরিরোর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গুইরিরো তৎকালীন এক মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আট কোটি টাকা প্রাপ্তি সাপেক্ষ ভান্নুকে তার কাছে থাকা তথ্য ও ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশের প্রস্তাব করেন। এই ফাঁদে পা দেন মার্ডেচাই ভান্নু এবং সাংবাদিক গুইরিরোর সঙ্গে লন্ডন চলে যান। গুইরিরোর মধ্যস্থতায় লন্ডনের সানডে টাইম পত্রিকা ভান্নুর দেওয়া গোপন তথ্য ও ছবি প্রকাশ করে ১৯৮৬ সালের ৫ অক্টোবর। ফলশ্রুতিতে ইসরায়েল এবং ইসলায়েল বিরোধী শিবিরে সমালোচনা ও ঘৃণার ঝড় ওঠে।

এতে নড়েচড়ে বসে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।

কূটনৈতিক কারণে ভান্নুকে লন্ডন থেকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও মোসাদ তাকে বন্দী করার ব্যাপক পরিকল্পনা করে। মোসাদের মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করে যে, ভান্নু লন্ডনে কিছুটা একাকিত্বে ভুগছেন এবং মনে প্রাণে নারী সঙ্গ কামনা করছেন। মনোবিজ্ঞানীদের এ রিপোর্টের ভিত্তিতে মোসাদ কালবিলম্ব না করে তাদের মার্কিনি এজেন্ট সুন্দরী চেরিল বেনটভকে সিন্ডি নাম ধারণ করে ভান্নুর মন জয় করার অ্যাসাইনমেন্ট দেয়। সুন্দরী সিন্ডির আকর্ষণকে দূরে ঠেলে দিতে পারেননি ভান্নু, তাই তার বাহুলগ্ন হয়ে আনন্দ ভ্রমণে ইতালি চলে যান।

ইতালির সমুদ্রসীমার খুব কাছেই তখন বাণিজ্যিক জাহাজের ছদ্মাবরণে অপেক্ষা করছিল রাডার ও অন্যান্য অত্যাধুনিক যোগাযোগযন্ত্র, গতিবিধি নজরদারির সরঞ্জাম এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জীবন্ত ছবি দেখার উপকরণ সংবলিত মোসাদের জাহাজ আইএনএস নোগা। ইতালির রাজধানী রোমে নেমে ভান্নু আর সিন্ডি পূর্ব থেকে ভাড়া করা এক অ্যাপার্টমেন্টের দিকে এগুতে থাকেন। অ্যাপার্টমেন্টে তখন ওঁৎপেতে ছিলেন মোসাদের তিন চৌকস গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

মুহূর্তের মধ্যেই তারা ভান্নুর শরীরে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করে সারা শরীর অবশ করে ফেলে। ওই রাতেই গোপনে প্রথমে স্পিডবোট ও পরে গোয়েন্দাদের জাহাজ 'নোগা' অচেতন ভান্নুকে নিয়ে ইসরায়েলের উদ্দেশে পাড়ি জমায়।

কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে অনুষ্ঠিত বিচারে ১৮ বছরের

কারাদণ্ড দেওয়া হয় ভান্নুকে। এর মধ্যে ১১ বছর তাকে কারও সঙ্গে কথা বলতে বা দেখা করতে দেওয়া হয়নি। অবশেষে ২০০৪ সালের ২১ এপ্রিল কঠিন

কিছু শর্ত সাপেক্ষে ভান্নুর মুক্তি মেলে। কঠিন এসব শর্ত মেনে ইসরায়েলে আজও বেঁচে আছেন ভান্নু।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.