আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিআইএর দুর্ধর্ষ যত অভিযান।পর্ব-২

সাধারণ একজন মানুষ

প্রজেক্ট পিজিয়ন ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায় যে, গোয়েন্দা কাজে পায়রা বা কবুতরকে ব্যবহার করতেন রাজা-বাদশারা। আর সেই ধারণাকে সিআইএ আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের প্রজেক্ট পিজিয়ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংকটময় পরিস্থিতিতে পৃথিবীর গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ভূমিকায় আসে সিআইএ। বিশেষ করে সিআইএ'র বিশেষ শাখায় বি এফ স্কিনার পদাষিক্ত হয়েই একটা গুরুত্বপূর্ণ নিরীক্ষা চালায়। পরীক্ষাটিতে বেরিয়ে আসে পশুরা পুরস্কার অথবা আঘাতে ঠিক কেমন পরিস্থিতিতে কেমন আচরণ করে।

আর এই পরীক্ষার ফলেই যুগান্তকারী একটি আবিষ্কার হয় এবং একই সঙ্গে একদম নতুন একটি শক্তি হাতে আসে সিআইএর। যুদ্ধে কবুতরকে ট্রেনিং দিয়ে মিসাইলের দিক নির্ণয় ও সফলভাবে ছোড়ার একটি পদ্ধতি কাজে লাগায়। পুরোপুরি অবিশ্বাস্য শোনালেও নথিপত্র প্রমাণ দেয়, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বেশ কয়েকটি মিসাইলের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেছিল কয়েকটি পোষা ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত কবুতর। মিসাইলের ফ্লাইট রুটে কবুতর একদম ঠিকঠাক পথ-নির্দেশ করেছিল। তবে ২৫ লাখ ডলারের এই পরীক্ষা শেষে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।

মিসাইলের মতো বিধ্বংসী মারণাস্ত্র নিয়ে কোনো ধরনের সংশয় নিয়ে কাজে নামা মোটেই সমীচীন হবে না বলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিআইএ'র এই প্রজেক্ট ও অপারেশন এতটাই ব্যতিক্রমী ছিল যে, আজও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কবুতর দিয়ে মিসাইল হামলা চালনার সম্ভাবনা মোটেই উড়িয়ে দেয় না। একুয়েস্টিক কিটি সিআইএ'র উদ্ভাবনী দক্ষতা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। একেবারেই সন্দেহের বাইরে, ধারণার বাইরে যত ভাবে সম্ভব গোয়েন্দা কাজ চালানোর বিষয়গুলোতে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে গবেষণা চালায়। ফলাফল হিসেবে নিয়ে আসে কাজের সফলতা।

বিড়াল পাঠিয়ে রাশিয়ান অ্যাম্বাসির ভেতরে খবর হাতিয়ে নেওয়ার একটি অপারেশন চালিয়েছিল সিআইএ। ২০ মিলিয়ন ডলারের এই অপারেশনে পাঠানো বিড়ালটিকে কিটি বলে ডাকা হতো। যদিও বেশ কয়েকটি বিড়ালকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। বিড়ালগুলোর দেহে কৌশলে মাইক্রোফোন, অ্যান্টেনা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিড়ালের কানে, নাকে, লেজে ছিল যোগাযোগের আধুনিক সব প্রযুক্তি।

ভীষণ হতাশার বিষয়, সিআইএ'র সবচেয়ে দক্ষ বিড়ালটি রাশিয়ান অ্যাম্বাসির ভেতর যাওয়ার আগেই গাড়িচাপা পড়ে প্রাণ হারায়। রাশিয়ান অ্যাম্বাসি বিড়ালটিকে পরীক্ষা করে সিআইএ'র 'একুয়েস্টিক কিটি' সম্পর্কে জেনে যায়। ব্যর্থ হয়ে যায় অপারেশন একুয়েস্টিক কিটি। তবে ব্যর্থতা স্বীকার করলেও কেউ জানে না প্রশিক্ষিত অন্য বিড়ালগুলোর কি হয়েছিল। গুজব আছে সেই বিড়াল দিয়ে গোয়েন্দাগিরির আরও উন্নত কোনো কৌশল তাদের হাতে ইতোমধ্যেই এসে গেছে।

মিডনাইট ক্লাইমেক্স মানুষের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার একটি পরিকল্পনা নিয়ে সিআইএ কাজ করেছিল। সম্ভাবনার হার যতই হোক, সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সিআইএ বসে থাকেনি কোনোকালেই। বিশ্বসেরা এই গোয়েন্দা সংস্থা মানুষের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিতে এলএসডির মতো উত্তেজক ড্রাগস ব্যবহার করে। গবেষণায় বেরিয়ে আসে, এলএসডির মতো উত্তেজক ড্রাগস দিয়ে ইচ্ছা করলেই মানুষের মাথার নিয়ন্ত্রণ সাময়িকভাবে নেওয়া সম্ভব। এমনকি সেঙ্চ্যুয়াল ব্ল্যাকমেইলিং করার জন্য সিআইএ'র গবেষণাগারে সফলতা পেতে গোয়েন্দা কাজে এলএসডি ড্রাগস হয়ে ওঠে সংস্থাটির তুরুপের তাস।

যে এলএসডি ড্রাগসটি নিয়ে সিআইএ কাজ করছিল সেটা এমনিতেই যথেষ্ট উত্তেজক ড্রাগস ছিল। সেটার প্রভাব পরবর্তীতে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটা বিবেচনা না করেই সিআইএ তার গবেষণা চালিয়ে যায়। অনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতেই মানুষের মস্তিষ্ক কব্জা করে নিতে এলএসডির ব্যবহার নিয়ে হঠাৎ একজন সিআইএ ইন্সপেক্টর নতুন করে ভাবতে শুরু করে। ১৯৬৩ সালে অপারেশন মিডনাইটের মতোই এলএসডি ড্রাগস দিয়ে মানুষের মাথার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার একটা গবেষণা হয়েছিল এবং তার ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক ছিল না। সিআইএ জেনারেল আবারও গবেষণা চালিয়ে যেতে বললে শীঘ্রই এলএসডি উত্তেজক ড্রাগস দিয়ে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণের একটি ত্রুটি ধরা পড়ে।

কিছু ক্ষেত্রে এলএসডি দিয়ে মোহগ্রস্ত সাবজেক্ট শত্রুপক্ষকে হামলার পরিবর্তে উল্টো প্রশিক্ষণ কর্মীদের হামলা করে বসে। মাথার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়ে সিআইএ অপারেশন মিডনাইট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এই প্রজেক্ট থেকে যায় দুনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাদের ভাবনার খোরাক হিসেবে। সংগৃহিত

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.