আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাই ফাই থ্রিলারঃ সিমুলেশন, Season 1, Episode 6

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!

১০ নিশু চুপচাপ বসে আছে। তার হাতে ধূমায়িত কফির মগ। এমন সময় এলেন রাকিবিন হাসানাত। তিনি এসেই বললেন, “নিশু, ইউ আর জাস্ট গর্জিয়াস! আবার ফার্স্ট হয়েছ তুমি! ” নিশু বলল, “জানি। রিআপলোডের সময়েই বলা হয়েছে”।

রাকিবিল হাসানাত বললেন, “তোমার কারণে দ্বিতীয় সিমুলেশনে আমরা কত লাভ করেছি জানো? ” “কত? ” “একশ কোটি ডলার। চিন্তা করা যায়? ” “এত! ! ” “হ্যাঁ এত। তুমি কল্পনাও করতে পারবে না মানুষ কি পাগলের মত সিমুলেশনে বাজি ধরে”। নিশু বলল, “আপনি কি সিমুলেশনটা ভালো করে লক্ষ্য করেছেন? ” “করেছি। কেন? ” “আপনি Contestant no. 35 (তৃতীয় অ্যামান্ডা) এর কথা চিন্তা করুন।

সে প্রথম সুযোগে আমাকে ও contestant no. 66 (দ্বিতীয় অ্যামান্ডা) কে মেরে ফেলল না কেন? সে তো অন্য সবাইকে মেরেছে”। “হয়তো মিশন শেষ করার জন্য তার কাউকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার ছিল”। “আর সে কি করে মার্সেনারি বসের মেয়ে হল? আপনিই তো বললেন একটা সিমুলেশনে সবাই একই অবস্থা থেকে শুরু করে”। “আসলে”, রাকিবিল হাসানাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “সিমুলেশন ওভাররাইড করার কিছু ট্রিকস আছে। প্রত্যেক প্রোগ্রামে যেমন একটা বাগ থাকে, প্রত্যেক কম্পিউটার গেমে যেমন চিটকোড থাকে, এখানেও ব্যাপারটা ঠিক তেমনি।

গেমে চিটকোড দিয়ে যেমন অনেক একটা সুবিধা পাওয়া যায়, সিমুলেশনে তেমন কিছু ট্রিক দিয়ে ইচ্ছামত সুবিধা নেয়া যায়। অন্য সবাই যখন ফ্লুইড লেভেলের উপরে নাক রাখতে ব্যস্ত, Contestant no. 35 তখন প্রথম মুহূর্তেই ফ্লুইডের নিচে নাক ডুবিয়ে ফুসফুসে ফ্লুইড টেনে নিয়েছে। সবার আগে মৃত্যুযন্ত্রণা সে-ই উপভোগ করেছে, সবার আগে মুক্তও হয়েছে সে-ই। মুক্ত হয়েই একটু দূরের একটা গাছের কোটর থেকে এক কৌটা সায়ানাইড এক্সপ্রেস বিষ নিয়ে সবার ফ্লুয়িডে ছড়িয়ে দেয়া শুরু করেছে সে। বোঝাই যাচ্ছে ব্যাপারটা সে আগে থেকেই জানত।

এভাবে সবাইকে মারতে মারতে ঠিক তোমার কাছে এসে সে থেমে গিয়েছে, তোমার সামনে হিরো হবার চেষ্টা করেছে সে। গভীর রাতে তুমি যখন ঘুমিয়ে পড়েছ, তখন নির্দিষ্ট একটা গাছের চারপাশে ঘড়ির উল্টোদিকে পাঁচবার চক্কর দিয়েছে সে। এটা একটা চিটকোড, এটা সে কি করে জানল আমরা জানি না। এমনকি এই প্রতিযোগীর আসল পরিচয়ও আমরা জানি না। চিটকোড দেবার ফলে মার্সেনারি সর্দারের মেয়েতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে সে।

জাল ফেলে আটক করার বুদ্ধিটা সে নিজেই তার বাবাকে দিয়েছে। তোমাকে বিক্রি করে সে পাসওয়ার্ড নিয়েছে, অথচ পাসওয়ার্ড দিয়ে ডাটাবেস খুলতে তোমাকেই পাঠিয়েছে। এটা মিন করে সম্ভবত সে জানত সামনে একটা ধাঁধাঁ আছে এবং সেটার সমাধান সে নিজে করতে পারবে না। “সে এতকিছু আগে থেকে জানল কিভাবে? ” নিশু জিজ্ঞেস করল। “একটাই উপায় আছে”, বললেন রাকিবিল হাসানাত, “যদি কেউ আগে থেকেই সিমুলেশনে বেশ কয়েকবার ঢুকে থাকে”।

“আপনি নিশ্চয়ই ঐ জার্মান প্রফেসরের সন্তানের কথা বলছেন”, নিশু উত্তেজিত হয়ে পড়ে। “হ্যাঁ। আমি সেটাই সন্দেহ করছি। কিন্তু বিশ্বাস কর, জার্মান প্রতিযোগী দুজনের প্রোফাইল খুব ভাল করেই ঘেঁটে দেখা হয়েছে। ঐ প্রফেসরের সাথে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতাই নেই”।

“আচ্ছা, একটা প্রশ্ন, ” বলে নিশু, “ও তো প্রথমেই আমাকে মেরে ফেলতে পারত। তাহলে তো ও-ই first হত”। “কিন্তু তাতে ও মানুষের বাহবা পেত না”, বললেন রাকিবিল হাসানাত, “সাধারণ মানুষ বাজি ছাড়াও এই সিমুলেশন দেখে এন্টারটেইনমেন্টের জন্য। সে সবাইকে মারল, অথচ নিজে ধাঁধাঁর সমাধান করতে পারল না - এটা করলে কেউই তাকে ভালো চোখে দেখত না, তার রেটিং পড়ে যেত। ওর চেয়ে প্ল্যান করে ধাঁধাঁ সমাধান করে মিশন শেষ করা হল- এটাই কি ভালো হয় নি? ” নিশুর মনে পড়ল সেই জার্মান পুরুষের কথা।

তবে কি সে-ই.......? “এবার Contestant no. 66 র কথা বলুন। একদম শেষে সে কেন আমায় মারল না? আর ডাটাবেসে আমার ফাইলে কি এমন ছিল যে সে হকচকিয়ে গেল? ” বলল নিশু। “সত্যি, এটা আমাকেও ভাবিয়েছে”, বললেন রাকিবিল হাসানাত, “তার কাজের কোন ব্যাখ্যাই আমি পেলাম না। সত্যি, এটা আমাকেও ভাবিয়েছে”। রাকিবিল হাসানাতের গলার স্বরে কি যেন ছিল।

নিশুর কেন যেন মনে হল রাকিবিল হাসানাত তার শেষ কথাগুলো সত্যি বলেন নি। ১১ সিমুলেশনের বাজিকরকের মধ্যে লেনদেন পুরোটাই হয় ইন্টারনেটে। সাংকেতিক ভাষায়। প্রথম সিমুলেশনে কোন অঘটন ঘটেনি। দ্বিতীয় সিমুলেশনে ঘটল অঘটন।

বিভিন্ন প্রতিযোগীর উপর বাজি রেখে সর্বহারা একজন বাজিকর রাগে দুঃখে ফেসবুকে ফাঁস করে দিলেন সিমুলেশনের অজানা সব তথ্য। অভিযোগ আনলেন কারচুপির। সিমুলেশনের হ্যাকারদের এই স্ট্যাটাস খুঁজে পেয়ে ডিঅ্যাকটিভেট করতে লেগেছিল মাত্র সাঁইত্রিশ সেকেন্ড। এই সাঁইত্রিশ সেকেন্ড যা হাবার হয়ে গেল। ইন্টারপোলের এক কর্মকর্তা অবসরে ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে দেখে ফেললেন বিষয়টা।

এর ঠিক দু’ঘন্টা পর গ্রেফতার হলেন সেই বাজিকর। থানায় যাবার পথে গাড়িতেই তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ অজ্ঞাত। ১২ সিমুলেশনের বিশাল হলরুমে বসে আছে নিশু। তার সামনে প্রকাণ্ড স্ক্রিন ছিল।

হঠাৎ মঞ্চে এলেন উপস্থাপক। সবাই তাকে সজোরে করতালি দিয়ে সম্ভাষণ জানাল। উপস্থাপক বললেন, “ভদ্রমহোদয় এবং ভদ্রমহোদয়াগণ! সিমুলেশনে সুস্বাগতম! আমরা ইতোমধ্যে দু’টি সিমুলেশন শেষ করে ফেলেছি। এখন বলুন, কেমন লাগলো আমাদের সিমুলেশন? ” “ভালো”, সবাই সমস্বরে বলল। “আমি শুনতে পাচ্ছি না, কিরকম লাগলো? ” “ভালো.............! ” “গু..........ড! ” স্ক্রিনটা হঠাৎ কালো হয়ে গেল।

উপস্থাপক বললেন, “এখন আপনারা দেখবেন প্রতিযোগীদের বর্তমান অবস্থান”। স্ক্রিনে ভেসে উঠল, Contestant no. 1 1st simulation ---- position 34 2nd simulation ---- position 78 Overall position ---- 56 সবাই হাত তালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানাল। এভাবে একের পর এর প্রতিযোগীর বর্তমান অবস্থান দেখানো হতে লাগলা। একসময় এল নিশুর পালা। Contestant no. 22 1st simulation ---- position 1 2nd simulation ---- position 1 Overall position ---- 1 সাথে সাথে সবাই দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানালো তাকে।

একজন দর্শক উঠে বলল, “এই প্রতিযোগীকে দেখতে চাই”। সবাই সমম্বরে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ দেখতে চাই”। উপস্থাপক বললেন, “দুঃখিত প্রিয় দর্শক, সিমুলেশনের প্রটোকল সবসময়েই বলে এসেছে কখনো কোন প্রতিযোগীর পরিচয় ফাঁস করা যাবে না। আপনারা শুধু তার সাইকোলজিকাল প্রোফাইলই দেখতে পারবেন। ধন্যবাদ”।

*** নিশু আর রাকিবিল হাসানাত বসে আছেন। নিশু খাওয়াদাওয়া করছে। হঠাৎ করে নিশু প্রশ্ন করল, “আচ্ছা আপনি এখানে পড়ে আছেন কেন? ” “পড়ে আছি মানে? ” “আমার না হয় ফিরে যাবার মত কেউ নেই। কিন্তু আপনার? আপনার কি কোন পরিবার পরিজন নেই? ” “না”। “না? আপনার বাবা-মা? ” “নেই”।

“স্ত্রী-সন্তান? ” “বিয়ে করি নি”। “ওহ। বিয়ে থা না করে এখানে পড়ে আছেন। আমার মত প্রতিযোগীদের ধরে এনে সিমুলেশনে লাগাচ্ছেন। হাঁড়ি হাঁড়ি টাকা ইনকাম করছেন।

কিন্তু এসে লাভই হচ্ছে কি? ইজ দিস লাইফ? ” “কারো কারো জন্য এটাই লাইফ”। নিশু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “আমি লক্ষ্য করেছি আমার খাবার সময় আপনি চুপচাপ বসে থাকেন। এর কারণ কি? ” “কোন কারণ নেই”। “আমাদের খাদ্যে কি এক্সটা কোন ডায়েট মেশানো থাকে যা আপনাদের খাওয়া বারণ? ” “তা তো থাকেই”। “আচ্ছা, আপনার বাবা-মায়ের কথা বলুন।

তারা কি করতেন? কিভাবে মারা গেলেন তারা? ” প্রশ্নটা করেই নিশু বুঝল, কিছু একটা গরমিল হয়ে গেছে। কারণ রাকিবিল হাসানাত তার দিকে শূন্য চোখে চেয়ে আছেন। “আপনাকে হার্ট করলে সরি”। “না, হার্ট হই নি। শোন, আমার বাবা-মায়ের কাহিনী বলতে আমি শুধু একটা স্বপ্নালু তরুণের কাহিনীই জানি”।

“বলুন”। “আজ না, আরেকদিন”। সেদিন নিজের কামরায় কৃত্রিম পাখির ডাক শুনতে শুনতে নিশুর মনে হল, রাকিবিল হাসানাত লোকটা আসলে ভালোই। বেশ ভালো। হঠাৎ করেই দৈহিক কামজ ক্ষুধাটা বেশ ভালো করে টের পেল সে।

তার মনে পড়ল অনেক, অনে-ক দিন সে শারীরিক সুখ থেকে বঞ্চিত। একটু পরে ক্ষুধাটা যখন অসহ্য হয়ে উঠল, তখন আর থাকতে পারল না নিশু। চিৎকার করে রাকিবিল হাসানাতের নাম ধরে ডাকতে লাগল সে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।