আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেশিন রিডেবল আকামাঃ কেমন আছি সৌদি আরবে-বাইশ পর্ব

স্বাগতম

আজকাল সৌদি আরবের 'আকামা' শব্দটা বাংলাদেশে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু অনেকেই এই আকামা সম্পর্কে তেমন কিছু জানেননা। আজ আমি আকামা সম্পর্কেই লিখবো। বিদেশী শ্রমিকদের জন্য সৌদি আরবে রেসিডেন্স পারমিট কার্ডকেই আরবীতে আকামা বলে। এতোদিন আকামা ছিল বে-সাইজ বই আকৃতির যা মানিব্যাগে রাখার জন্য বেঢপ আকারের মানিব্যাগ প্রয়োজন হতো আর আকামা বই ছিল দুই রঙের।

সবুজ রঙ ছিল মুসলমানদের জন্য এবং খয়েরী রঙের আকামা ছিল অমুসলিমদের (কাফের) জন্য। আকামার ভেতরের পাতায় নাম,জন্মতারিখ, মেয়াদকাল, রক্তের গ্রুপ এবং নিয়োগ দাতার নাম ঠিকানা লেখা থাকে। যাহা ব্যাঙ্কসহ অন্যান্য কাজে নিজের পরিচয় প্রকাশের জন্য আকামার ব্যবহার অপরিহার্য। মুসলিমদের আকামা কভারপেজ খয়েরী আকামা অমুসলিমদের জন্য(নিচে) এই আকামা সর্বক্ষন সঙ্গে রাখার নিয়ম রয়েছে। কেঊ ভুলে বাসায় রেখে বাইরে এসে ধরা খেলেই জেল ও জরিমানা দিতে বাধ্য।

এছাড়া হারিয়ে গেলেও অবশ্যই জরিমানা দিয়ে নুতন আকামা বানাতে হয়। এদেশে যারা নুতন আসে তারা আকামা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ঊঠে যদিও তিন মাসের মধ্যে আকামা বানানো বাধ্যতামূলক। আকামা বানাতে হলে প্রথমেই মেডিকেল টেস্ট তারপর ৬৫০ রিয়াল জমা দিয়ে আবেদন করতে হয়। তবে এই কাজগুলি নিজে নিজে করা যায়না,একজন সৌদিকে দিয়ে করাতে হবে। বর্তমানে নকল আকামায় বাজার ভরে গিয়েছে।

একটি দল এই নকল আকামা বানিয়ে পালিয়ে থাকা লোকদের নিকট বিক্রী করে। আর রাস্তাঘাটে পুলিশ চেকিং হলে তারা নকল আকামা দেখিয়ে পার পেয়ে যায়। মেশিন রিডেবল আকামা আর তাই গত দুই তিন বছর যাবত ধীরে ধীরে ডিজিটাল আকামা অর্থাৎ মেশিন রিডেবল আকামা ছাড়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে আমি হাতে পেলাম একটির বদলে পরিবারের চারজনের জন্য চারটি রিডেবল আকামা। শোনা কথা এই কার্ড (আকামা) রাস্তাঘাটে চেক করার জন্য কম্পিউটারাইজড নুতন নুতন পুলিশের গাড়ী কেনা হয়েছে।

অর্থাৎ পুলিশ চেক পয়েন্টেই এই আকামা কম্পিউটারে রিড করে তার ছবিসহ সব ডাটা জেনে নেবে । কাজেই পালিয়ে থাকা বিদেশীদের জন্য খবরটি বেশী সুবিদার নয়। আকামা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতাঃ আকামার নাম লেখা নিয়েও আছে অনেক সমস্যা। সাধারনত আমরা পাসপোর্টের নাম লিখে থাকি কিন্তু আকামাগুলিতে নাম আসে বিকৃতভাবে। যেমন আমার নাম মোঃমজাম্মেল হোক,পিতা মোঃফজলুল হক।

ব্যাঙ্কে সেই হিসাবে একাউন্ট খোলা যাবেনা। তারা দেখবে আকামার নাম। মজার ব্যাপার প্রতিবছর আমার নাম তারা ভুল করতো আর আমাকে ব্যাঙ্কে গিয়ে নামের জন্য ফিরে আসতে হতো। এই যাবত আমার নাম গুলি হয়েছে এরকম--- ১। মোঃমোজাম্মেল হক মোঃ ২।

মোঃমোজাম্মেল হক মোঃ হক ৩। মোঃমোজাম্মেল মোঃ হক ৪। মোঃমোজাম্মেল ফাদলুল হক এবং সর্বশেষ রিডেবল আকামাতে লিখেছে মোঃমোজা মোঃ ফাজী এবং এই নাম নাকি ফাইনাল আর চেঞ্জ হবেনা! আকামা হারানোর কাহিনীঃ একবার বাসায় ভুল করে আকামা রেখে ট্যূরে যাচ্ছিলাম। ২০০ কিঃমিঃ রাস্তা যাওয়ার পর চেকপোস্টে ধরা খেয়ে গেলাম। আমি আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স,গাড়ীর কাগজপত্র,ইন্সুরেন্স কার্ড এবং বিভিন্ন অফিসে (এমন কি মিনিস্ট্রিতে) প্রবেশ করার আইডি কার্ড দেখালাম কিন্তু কাজ হলনা।

আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো নিকটস্থ জেলখানায়। অবশ্য ইতিমধ্যেই মোবাইলে ব্যাপারটা অফিসে জানালাম। জেলে পৌছতেই অনেকে ঘিড়ে ধরলো জানতে আমি কোন দেশী!সেখানে দেখলাম বাংলাদেশী আর সুদানী নাগরীকই বেশী। তখন বুধবার দুপুর বেলা ,অনেকেই বলতে লাগলো ২-৩০ টার মধ্যে আমার আকামা না নিয়ে এলে শনিবার পর্যন্ত আমাকে এখানে কাটাতে হবে। টয়লেটে গিয়ে দেখলাম অনেকে গোপনে মোবাইল ফোনের ব্যবসা করছেন।

অর্থাৎ দশগুন বেশী রেট নিয়ে ফোন করতে দিচ্ছে। আমিও অফিসে আবারো ফোন করে জানলাম তারা নাকি আকামার কপি ফ্যাক্স করে দিয়েছে এবং লোকও পাঠিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে দুপুরের খাবার এলো এক দেশীভাই পরম যত্নে আমাকে একটি কলা ও রুটি(খবুজ) এগিয়ে দিল। ঠিক দুইটার মধ্যেই আমার লোকজন এসে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.