পরিবারের অনেকে আমার নাক কে কুত্তার নাকের সাথে তুলনা করে। তার কারণ একটাই, যে কোনো গন্ধ সবার আগে আমি বুঝতে পারে। তরকারী পোঁড়া গন্ধ, পঁচা জিনিসের গন্ধ, সবকিছু আমি মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি।
মূল কথায় আসি, সেদিন এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে তার অফিসে যাই, স্হান সংকুলান না হওয়ার কারনে তারা ৩ কলিগ একটা বড়রুমে বসেন। আমি যখন গেলাম, বন্ধু ছাড়া তখন কেউ ছিলো না।
যাওয়ার পর থেকেই খালি আমার মোজার গন্ধ নাকে আসছিল, খুবই বাজে গন্ধ। বন্ধুকে বলি, গন্ধ কোথা থেকে আসছে? সে বলল, তার কোনো গন্ধ লাগছে না। পরে আমি জোর করে বললাম, খুঁজে দেখতে। দেখা গেল, অন্য একজন কলিগের টেবিলের নিচে একজোড়া মোজা পড়ে আছে। মনে হচ্ছে, সেই কলিগ জুতা চ্যান্জ করে রেখে গেছে।
আজব বিদঘুটে গন্ধ, যখন উৎস খুঁজে পাওয়া গেল, তখন বন্ধুর ও বিকট গন্ধ নাকে লাগা শুরু হলো। কিন্তু যদি কলিগ (সিনিয়র কলিগ, ড. ডিগ্রী হোল্ডার) কিছু মনে করেন, সেই কারণে কিছু বলা হয় নাই। নিরবে গন্ধ হজম করতে হলো।
আর একটা ঘটনা বলি, আরো মজার।
বাসে আসছিলাম ঢাকাতে।
মোটামোটি ৬ ঘন্টার জার্নি। মাঝখানে হোটেলে থামল, এরপর গাড়ি আবার চলা শুরু করল। হঠাৎ করে সেই মোজার গন্ধ। সামনের দিকে কয়েকটা মেয়ে বসছিলো, তারাই মনে হয় বাসের সুপারভাইজারকে বলল, গন্ধ লাগছে। তারা বলাতে বাসের আরো কয়েকজন বলল, হ্যা, তাদেরও নাকে বাজে গন্ধটা লাগছে।
এইবার সুপারভাইজার আসলো সরেজমিনে ঘটনা পরিদর্শন করতে। ৩ নাম্বার সারিতে একজন যাত্রীকে (বয়স ২৫-৩০ হবে) দেখা গেল জুতা খুলে পা বের করে রেখেছে। সুপারভাইজার বলল, ভাই আপনার পায়ের মোজা থেকে মনে হয় গন্ধ বের হচ্ছে। জুতা পায়ে দেন। যাত্রীতো গেল মহা ক্ষেপে, বলল, তার পা থেকে কোনো গন্ধই বের হচ্ছে না।
আর তার মোজা থেকে গন্ধ বের হলে সে নিজেই বুঝতে পারতো। অতএব এটা প্রমানিত, তার পায়ে কোনো গন্ধ নাই।
এরপর সুপারভাইজার একে একে পিছনে পর্যন্ত সবার জুতা চেক করল। দেখা গেল, আর কারো পা খোলা নাই, কিংবা বাকিরা সেন্ডেল পড়ে আছে। এইবার সুপারভাইজার গেল ক্ষেপে।
বলল, সে নিশ্চিত, ঐ লোকের মোজা থেকেই গন্ধ বের হচ্ছে। বাকী মানুষরাও রেগে গেল। সবাই বলল, আপনি এখনই জুতা পড়েন, না হলে বাস থেকে নেমে যান। সুপারভাইজার বলল, ভাই আপনার একজনের জন্য আমি ২০ জনের কমপ্লেন শুনতে পারবো না। শেষ পর্যন্ত হার মানল ঐ ঘাড়ত্যাড়া যাত্রী।
খেয়াল রাখবেন, আপনি নিজেও যেন কখনো এইরকম অপরাধী না হোন। কারণ বেশিরভাগ সময় যার পায়ের মোজা/জুতা থেকে গন্ধ বের হয়, সে বুঝতে পারে না। এর জন্য কিছু টোটকা টিপস দিচ্ছি। কাজে লাগতেও পারে। এই গন্ধটা মূলত পায়ে ব্যাকটেরিয়ার দ্রুত সংক্রমনের কারণে হয়ে থাকে।
তাই সতর্ক হওয়া দরকার সবারই।
১। পা সবসময় শুষ্ক রাখবেন। ভেজা পায়ে জুতা পরবেন না।
২।
সমস্যা প্রকট হলে পাউডার মাখতে পারেন। কিছু কিছু ডিওডরেন্ট পাওয়া যায়, ট্রাই করে দেখতে পারেন।
৩। সুতির মোজা পড়বেন। এতে করে পায়ে ব্যাক্টিরিয়ার গ্রোথ ধীরে হয় উলের মোজা থেকে।
৪। খুব বেশি টাইট জুতা পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন। কোন জুতাটা আপনাকে ভালো স্যুট করবে, সেটা আপনিই ভালো বুঝতে পারবেন।
৫। প্রত্যেকদিন নতুন ধোয়া মোজা ব্যবহার করবেন।
এই কারণে মোজা কিনতে গেলে কয়েক জোড়া একসাথে কিনে নেওয়া ভালো।
৬। পা কে সবসময় পরিষ্কার রাখবেন। পায়ের তলায় ময়লা নিয়ে মোজা পড়বেন না।
৭।
জুতাকে গন্ধমুক্ত রাখতে বেকিং সোডাতে জুতা রাখতে পারেন। চাইলে জুতাকে ধুয়েও ফেলতে পারেন।
৮। ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে মোজাকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে পারেন, মোজার গন্ধ দূর করার জন্য।
ধন্যবাদ।
এইবার দৌড়াইয়া গিয়ে দেখেন, আপনার মোজাতে-জুতাতে গন্ধ বের হচ্ছে কিনা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।