আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোমান্টিক গানে গানে মুখরিত ভালবাসা দিবসের দ্বিতীয় প্রহর--৭৯ পার্সেন্ট সত্যি ঘটনা

যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।

একদিন শুনতে পেলাম বন্ধু সুদীপের কার সাথে যেন প্রেম হয়ে গেছে। ঘটনাটা তার জন্য যতই আনন্দের হোক না কেন আমাদের জন্য ছিল কিছুটা বেদনার। মনে হল বিশাল কোন এক রেস প্রতিযোগীতায় সুদীপ আমাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসে আছে আর আমরা চৌদ্ধ টি মানুষ পরাজিত হয়ে তার বিজয়োচ্ছ্বাস দেখছি।

সুদীপের নিজের মনেও হয়ত একটি বিজয়ী বিজয়ী ভাব চলে এসেছিল। আমাদের সাথে চান্স পেলেই তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কি কথা হল বলতে চাইত। বলার সময় তার চোখ মুখে বিজয়ী বিজয়ী ভাবটা আরো ভালমত ফুটে উঠত। আমরা বিরস মন নিয়ে এবং মুখভর্তি হাসি নিয়ে তার গল্প শোনতাম। মনে মনে বলতাম মেয়েটা তর মত হাড় কিপটারে দেখল আর আমাকে দেখল না! বিরাট আফসোস! পাঠকের সুবিধার জন্য বলি এটা আমার কলেজ লাইফে হোস্টেলে থাকাকালীন একটা কাহিনী।

তো সুদীপের প্রেম চলছে আর আমাদের চৌদ্ধটি মনের হাহাকার ধ্বনি, কিছু না পাওয়ার বেদনা সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে এরকম যখন অবস্থা তখন একটি অঘটন ঘটল। সাধারন অঘটন বললে ভূল হবে। রীতিমত মহা অঘটন!এই অঘটন ঘটানোর নায়ক আমাদের চৌদ্ধজনের বন্ধুদলের একজন। সে কোন এক কুক্ষনে সুদীপের প্রেমিকার নাম্বারটা নিয়ে মেয়েটাকে কল দিল। মেয়েটার সাথে কথা বলে জানা গেল সুদীপের সাথে তার প্রেম ট্রেম কিছু হয় নি।

অর্থাৎ অন্যদেরও চান্স আছে। অঘটন ঘটানোর নায়ক বন্ধুটি মেয়েটাকে প্রতিদিন কল দিতে লাগল। মেয়েটাও তার সাথে কথা বলতে লাগল। কয়েকদিন পর সুদীপ বিষয়টা জানতে পেরে খুব ভাব দেখিয়ে তার প্রেমের শক্তি,তার প্রেম কেউ কেড়ে নিতে পারবে,চন্দ্র সূর্য যতদিন থাকবে ততদিন তার প্রেম থাকবে ইত্যাদি বেদের মেয়ে জ্যোস্না টাইপের ডায়লগ দিতে লাগল। আস্তে আস্তে সে প্রেমের শক্তি প্রদর্শনের কথা অথবা হুমকিও দিতে লাগলো।

ওই বন্ধুটির মনে মনে ইচ্ছা ছিল একটু চেষ্টা করে দেখার,আর মেয়েটা যেহেতু কথা বলতে পছন্দ করছে তাই তার মনেও একটু আলগা ভাবের সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। সে ও সুদীপের হুমকি কে ভয় না পেয়ে পালটা বলতে লাগল, তরে ভালবাসলে তো আর আমি জোর করে নেব না। কিন্তু না বেসে যদি আমাকে ভালবাসে তাহলে আমি কিন্তু ছাড় দিব না। বিষয়টা অতি মারাত্বক আকার ধারণ করল। এর মাঝে সুদীপ বারকয়েক মারমুখী হওয়ার চেষ্টা করল।

আমরা সবাই মিলে সামলে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিনের ঘটনা টা ছিল অতি মারাত্বক। সন্ধ্যায় এক রুমে বসে আমরা কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছিলাম। সাথে সেই অঘটন ঘটানো বন্ধুটিও ছিল। হঠাৎ ধুম করে শব্দ হল।

শব্দের রেশটা কাটতে না কাটতেই দেখি চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মূর্তিমান সুদীপ। তার চোখ দুটো লাল। রাগে কাপছে এরকম অবস্থা। সে সোজাসোজি ওই বন্ধুটার কাছে গিয়ে বল, তুই আর ওই নাম্বারে কল দিবি না। এরকম আদেশ শোনে দমে যাবার পাত্র ওই বন্ধুটি ছিল না।

তাই সে ও যথাসম্ভব সুন্দর কন্ঠে বএবং হাসিমুখে বলল, যদি দেই তো কি করবি? দিব আমি। বলামাত্রই সুদীপ ঝাপিয়ে পড়ল ওর উপর। হোস্টেলে এরকম আমরা প্রায়ই ঝাপাঝাপি করলেও সিরিয়াসলি ঝাপিয়ে পড়ে নি কেউ কারো ওপর। এবারই প্রথম সুদীপের মত শান্ত শীষ্ট ভদ্র ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র প্রেমের শক্তিতে শক্তিমান হয়ে বিশাল ঝাপ দিল। আমরা প্রেমের শক্তি প্রত্যক্ষ করলাম।

ছবিতে নায়কদের শক্তি কোথা থেকে আসে তার একটা ক্লু পেলেও তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে সুদীপকে ধরে ঠান্ডা করতে হল। প্রচন্ড রাগে উত্তপ্ত সুদীপ আমাদের তিন চারজনের আটকানো শক্ত বাধ উপেক্ষা করে বার বার ছুটে গিয়ে পড়তে চাইল ওই বন্ধুটির উপরে। প্রেমের অপরিসীম শক্তি সম্পর্কে আমাদের সবারই মনে মনে ভক্তি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। সুদীপের মত ছেলের গায়ে যদি প্রেম এত শক্তি এনে দিতে পারে তাহলে তো জিনিসটা সত্যিই মারাত্বক। ওই অঘটন ঘটানো বন্ধুটি ও খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিল।

সে একটু সরে গেল। আমরা সুদীপকে তার রুমে নিয়ে গেলাম। ওইরাতে আমরা সবাই বসে ঠিক করলাম যেহেতু মেয়েটার সাথে সুদীপের আগে কথা হয়েছে এবং তার সাথে সম্পর্ক আছে অতএব আর কারো মেয়েটার দিকে তাকানো অন্যায়। সুদীপ তার প্রেমের প্রমাণ হিসেবে মোবাইলের কয়েকটা এসে এম এস দেখাল। তাতে এই লাভ ইউ জান টাইপের কিছু লেখা ছিল।

তাতে কারো সন্দেহের অবকাশ রইল না যে প্রেম হয়ে গেছে। অতএব এই মেয়েটার দিকে কারো দৃষ্টি দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। বরং আর কেউ দৃষ্টি দিলে আমাদের উচিত বন্ধুর হয়ে যুদ্ধ করা। বন্ধু হয়ে প্রেমের যুদ্ধ ও যুদ্ধ। বাচলে শহীদ মরলে গাজী।

বিচারকের মত মন্তব্য করলাম। সবাই একমত পোষন করল। মৃদু বৎর্সনা করা হল ওই অঘটন ঘটানোর নায়ককে। সে সবার সামনে বলল, এখন যেহেতু জানতে পেরেছে মেয়েটার সাথে সুদীপের ইয়ে তাহলে সে আর কল দিবে না। একটা মেয়ের জন্য তো আর বন্ধুত্ব নষ্ট হতে পারে না।

এইসব হাবিজাবি কথা বলে এই অতি জটিল প্রেম ঘটিত ট্রায়াঙ্গুলার সমস্যার সমাধান করা গেল। এই সমাধানের পর ও ঘটনা ঘটতে লাগলো। সময়ের আবর্তন এবং জগতের বিবর্তনের সাথে সাথে সুদীপের প্রেম গভীর থেকে গভীর হতে লাগলো। তার কথা বার্তায় আমরা তা আচঁ করতে পারতাম। মনে মনে তার প্রেমের তল পাবার চেষ্টা করতাম।

কিন্তু আমাদের সব চেষ্টা বৃথাই। তলহীন বিশাল সমুদ্রের মত মনে হত আমাদের সুদীপের ভালবাসাকে। অনেক চাপাচাপিতে রেখেঢেকে সুদীপ আমাদের যেটুকো বলত তাতেই গাইতে ইচ্ছা করত কেউ কোনদিন আমারে তো............। । এমনি ভাবে দু এক মাস যাবার পর আমাদের টেস্ট পরীক্ষা চলে আসল।

রাত্রি জেগে ঘুমহীন চোখে আমরা যখন সামন্তরিক সুত্র,লরেঞ্জ বল,মহাকর্ষ অভিকর্ষ ইত্যাদি মুখস্ত করছি সুদীপ তখন চুটিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার স্বর্গীয় প্রেম। আমার রুমের পাশের রুমে থাকত সে। তাই কন্ঠস্বর নিচু করে কথা বললেও কিছুটা শোনা যেত। মাঝে মাঝে সে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলত। উদ্দেশ্য আমি যে এতদিনেও একটা প্রেম করতে পারলাম না সেটা জানিয়ে দেয়া।

পুরো বছর পড়ালেখা না করার ফলে আমার অবস্থা তখন ছিল খুব খারাপ। যে করেই হোক টেস্টে পাশ করতে হবে। নাহলে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারব না। বিশাল দুশ্চিন্তা মাথায়। তাই প্রেম ট্রেম মাথার এন্টেনায় বাড়ি খেলেও ঠিক ঢুকতে পারত না।

তাই সুদীপের শুনিয়ে কথা বলায় আমার বিশেষ অসুবিধা বা খারাপ কোনটাই লাগত না। আমার মাথায় শুধু একটা চিন্তা। টেস্টে পাশ! সেদিন ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ। মানে ভালবাসা দিবস। সেটা তখন জানিনি, পরে জেনেছিলাম।

টেস্ট মোটামোটি পাশ করে ফাইনাল পরীক্ষার জন্য মনোনীত হয়েছি। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। রাতে খুব মনযোগ দিয়ে পড়ছি। হোস্টেলেও মোটামোটি নিস্তব্দতা। প্রায় দুইটা বাজে।

এমন সময় হঠাৎ পড়ার মনযোগ চলে গেল,শুনতে পেলাম সুদীপ কথা বলছে। কিন্তু আমি এর চেয়ে আশ্চর্য কিছু লক্ষ্য করে আরেকটু মনযোগ দিয়ে শুনতে লাগলাম। বিচিত্র ঘটনা! সুদিপের ফোনে কথা বলা সময় মনে হচ্ছে আমার পিছনের রুম থেকে একটা শব্দ হচ্ছে। ওই রুমটা ওই অঘটন ঘটানো বন্ধুর। আমি বিষয়টা কিছু বুঝতে না পেরে সুদীপকে গিয়ে তাড়াতাড়ি বিষয়টা বললাম।

সুদীপ ফোন না রেখেই আমার সাথে ঐ রুমে চলল। রুমের দরজা বন্ধ। কয়েকবার ধ্বাক্কার পর ওরা রুম খোলে দিল। সাথে সাথেই সুদীপের ফোন কেটে গেল। ওই রুমে ঢুকে সুদীপ তার প্রেমিকার নাম্বারে কলব্যাক করতেই বেজে উঠল অঘটন ঘটানো বন্ধুর রুমমেট তথা আমাদের চোদ্ধজনের অন্তর্গত একজনের নোকিয়া এন সেভেনটি মোবাইল হ্যান্ডসেট।

পেহলি নজর ম্যা ক্যাসা যাদু কার দিয়া গানটি বার বার বাড়ি খেতে লাগল ছোট্ট রুমটির চারদেয়ালে। আর সাথে সাথে বিশাল অট্টহাসিতে ভরে গেল পুরো ঘর। পরে জানা গিয়েছিল যে বন্ধুটি প্রেমের অভিনয় করেছিল সে হুবহু মেয়েদের কন্ঠে কথা বলতে পারে। এমন বিশাল চেহারার কেউ মেয়েদের কন্ঠে কথা বলছে এটা কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না। নিজের চোখে না দেখলে আমিও বিশ্বাস করতাম না।

ওইরাতে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পুরো হোস্টেলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল এই আজব প্রেমকাহিনী। সবার মোবাইলে বাজতে শুরু করল কালজয়ী সব রোমান্টিক হিন্দি গান। রোমান্টিক গানে গানে মুখর হয়ে উঠল ভালবাসা দিবসে দ্বিতীয় প্রহর। শুধুমাত্র সুদীপ তার রুমে গিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইল। তার রুমমেটের ভাষ্য অনুযায়ী কয়েকফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল তার গন্ডদেশ বেয়ে।

বি দ্রঃ এই গল্পের ৭৯ ভাগ সত্যি। নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এবং সামান্য কিছুটা যোগ বিয়োগ। জগতে অনেক বিচিত্র ঘটনা ঘটে। এটি তাদের মধ্যে একটি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।