আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেঘ বলেছে যাব যাব



ফার্মগেট-এ বাস থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরিয়েছি,হঠাৎ মনে হলো- আজ হিমির মন ভালো নেই। কাজেই আজ হিমির সাথে দেখা করতে হবে,হবেই। মাঝে মাঝে দূর থেকে হিমিকে দেখি। তৃপ্তিতে আমার বুক ভরে যায়। ইচ্ছে জাগে মনের মধ্যে প্রতি মুহুর্তে আরও যোগ্য হয়ে উঠি হিমির জন্য।

গ্রীক পুরুষের মতন আমি সুদর্শন নই। কোনো প্রকার যোগ্যতা নেই আমার তবু বারবার মনে হয়,এ পৃথিবীতে আর একজনও যোগ্য প্রেমিক নেই হিমির,শুধু আমি ছাড়া। এ কথা স্বীকার করতে আমার লজ্জা নেই হিমিকে দেখলে আমার বুক কাঁপে!কেন কাঁপে?পৃথিবীর কোনোও বিশেষজ্ঞ এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। হিমিকে নিয়ে আমি পৃথিবীর শেষ সীমান্ত পর্যন্ত যাবো। হিমির তুলনা হয় না।

হিমি শুধু হিমির মতন। ইদানিং খুব ইচ্ছে করে,কোথাও নিরালায় হিমিকে নিয়ে বসে থাকি- আর কোনও চোখ সেখানে উঁকি দেবে না। আমি হিমিকে ছুঁয়ে দেখব। হিমির সাথে যখন আমার দেখা হয়- তখন সে কথা বলে খুবই আন্তরিকতার সাথে। আবার যখন দেখা হয় না অনেকদিন,তখন সে ভুলে যায় আমাকে!আর সবসময় হিমি আমার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আমার বুকের ভেতর চিনচিন করে ব্যাথা করে।

আজ এই মধ্য রাত্রে আমি খুব উপলদ্ধি করতে পারছি যে,মনের মতো একটা মানুষ পাওয়ার চাইতে নতুন একটা গাড়ি কিনে ফেলা অনেক সহজ। এক এক সময় মনে হয়,পৃথিবীতে কোনো বাজে মানুষ নেই,লোভ নেই,হিংসা নেই। কোথাও মানুষকে মানুষ ঠকাচ্ছে না। হিমিকে বিয়ে করতে না পারলে আমার জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে না। আমি জানি,সময় সব কিছু আমাকে ভুলিয়ে দিবে।

হয়তো আবার,অন্য কাউকে ভালোবেসে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারব। সেদিন হিমি আমাকে বলল- 'তুমি যখন জন্মাও,তখন আমি কোথায় ছিলাম?আমি বললাম,অনেক আগেই রবীন্দ্রনাথ এ কথার জবাব দিয়ে রেখেছেন। ইচ্ছে হয়ে ছিলে মনের মাঝারে। গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখি,হিমিকে জড়িয়ে ধরে কে যেন চুমু খাচ্ছে। হিমির ভালোবাসা হারালে পৃথিবীতে আমি আর কোথায় আশ্রয় পাবো?হিমির চরিত্রে কোনো হঠকারিতা নেই।

আমি খুব বুঝতে পারি হিমিকে ছাড়া আমার জীবনটা শূন্য হয়ে যাবে। হিমি ছাড়া আমার আর কোনো অবলম্বন নেই। হিমির কাছ থেকে শুধু ভালোবাসা পাওয়াই যথেষ্ট নয়,হিমির স্বভাবের মধ্যে একটা গভীর সমবেদনা আছে। দিন দিন আমার সাহস কমে যাচ্ছে,স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেবার মতন মনের জোর পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে ভালোবাসা টালবাসা'র চেয়ে চাকবি-ব্যবসা-বানিজ্য অনেক বড়।

পাঁচ বছর আগে একদিন আমি,হিমির সাথে আশুলিয়া বেড়াতে গিয়েছিলাম। কি সুন্দর নদী-তখন বিকেল শেষ হয়ে গেছে কিন্তু ভালো করে সন্ধ্যা হয়নি। আকাশ অনেক নিচু হয়ে নেমে এসেছিল লাল আলোয়-ছোট বড় নৌকা নদীর পাড় দিয়ে চলছিল। হিমি সেই নৌকার দিকে তাকিয়ে বলেছিল,খুব সুন্দর,তাই না?হিমি সুন্দর কথাটা উচ্চারণ করার জন্যই,সেই দৃশ্যটা সব সময় আমার চোখে ভাসে। আমি শুধু হিমিকেই ভালোবাসি।

কিন্তু আমি হিমিকে চাই না। হিমির হাসি মুখ দেখতে সত্যিই খুব ভালো লাগে,এই হাসি মুখের জন্য,দু-একটা ছোট-খাটো মিথ্যা বললে কোনো দোষ হয় না। তাই প্রায়ই হিমিকে মিথ্যা বলি। ফুলার রোডের নির্জন রাস্তায় আমরা হাত ধরাধরি করে হেঁটে বেড়াই। আমি হিমিকে অবাক করে দেওয়ার জন্য-অদ্ভুত সব কথা বলি,কিন্তু হিমি আমার কথায় অবাক হয় না বরং আমি ওর কথায় অবাক হই বারবার।

আসলে হিমিকে অবাক করে দেওয়ার জন্য,কোনো রকম চেষ্টা করার দরকার হয় না। সরল নিষ্পাপ ওর আত্মা। কিন্তু খুব ছটফটে। সহজ স্বাভাবিক সৌন্দর্যের মধ্যে যে সৌন্দর্য- হিমি সেই রকম। কোনো রকম আড়ষ্টতা নেই,কোনো পাপ নেই,অকপট সরল ওর ব্যবহার।

হিমির সান্নিধ্যে আমি সৎ হয়ে উঠি। একদিন একটা পার্টিতে আমরা দু'জনে একসাথে উপস্থিত হলাম। খুব হই চৈই আর গান বাজনা হচ্ছে। আমি অনবরত হুইস্কি খেয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই নেশা লেগে গেল।

আমি টলতে টলতে হিমির সামনে গিয়ে বললাম,আসো আমরা কিছুক্ষন নাচি। হিমি খিল খিল করে হেসে বলল,দূর,তোমার নেশা হয়ে গেছে,তুমি চুপ করে বসে থাকো। আমার হাত থেকে বারবার সিগারেট পড়ে যাচ্ছিল। আমি জ্ঞান হারালাম এবং জ্ঞান ফিরল শেষ রাত্রে। অনুশোচনা ও গ্লানিতে বুক ভরে উঠল।

খুব নরম ভাবে আমি হিমির কপালে হাত বুলিয়ে দিলাম একবার। হিমি একটু কেঁপে উঠে ঘুমের ঘোরেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি হিমির কপালে একটা চুমু খেলাম। হিমি চোখ মেলে তাকালো,বলল- ধ্যাত,খুব শীত করছে আমার। আমি হিমিকে আরো গভীর করে জড়িয়ে ধরতেই এক নিমষে চলে এলো উষ্ণতা।

কুয়াশার মতো ঠান্ডা হিমির ঠোঁট। কোথায় যেনো গান বাজছে- মেঘ বলেছে যাব যাব/রাত বলেছে যাই.../সাগর বলে কূল মিলেছে,/আমি তো আর নাই....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।