আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালোবাসার বিজ্ঞাপন কিংবা লুলামী......

You either die a hero or you live long enough to see yourself become the villain.

সারা জীবন পড়েছি বয়েজ স্কুলে, তাছাড়া কোচিং কিংবা প্রাইভেটও পড়তামনা। তাই আমার মেয়ে বন্ধু নেই বললেই চলে। তারপরও আমি কেমনে যেন দিনে দিনে লুল হইতে শুরু করি। সেই লুলামির গল্পই বলব আজকে। ভালোবাসা কিংবা লুলামী-১ লুলামীর শুরুটা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পরে হলেও তার আভাস পাওয়া গিয়েছিল যখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি তখন।

সবে মাত্র "হ্যারি পটার: দ্য গবলেট অফ ফায়ার" রিলিজ পেয়েছে। সিনেমাটাতে এমাকে দেখে মনের ভেতর কেমন কেমন করা শুরু করল। দিনরাত শুধু চোখের সামনে এমাকে দেখি। তখন ফটোশপ সবে শুরু করেছি। হঠাৎ একদিন কি মনে হতেই বসে পড়লাম এমার ছবি নিয়ে।

তারপর এডিট করে ছবিটাতে এমার পাশে নিজেকে দাড় করায়ে দিলাম। অনেকে কিছু খুঁত ধরলেও, পরে আর আগ্রহ হয়নি বলে সেগুলো ঠিক করা হয়নি। তখন না বুঝলেও এখন বুঝি ওটা ছিল আমার ফটোশপীয় লুলামির প্রথম ধাপ.... ভালোবাসা কিংবা লুলামী-২ ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর দেখি "সময় যেন কাটে না অবস্থা" । বাসায় বলে কয়ে নেট নিলাম। ফেবিতে সাইন আপ করে খুজেঁ খুজেঁ আমার ব্যাচের সবাইকে অ্যাড করা শুরু করলাম।

আর সুন্দরী মেয়ের প্রোফাইল দেখলে তো কথাই নেই। তখন ফেবিতে একটি মেয়েকে দেখে মনের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভুতি জেগে উঠল। বন্ধুদের বলতেই তারা বলল আমি নাকি ওই মেয়ের উপর ক্রাশ খাইছি । তারপর ফেবি খুললেই তার প্রোফাইলে একবার করে ঢু মারি। তার স্ট্যাটাস, কমেন্ট সব খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ি।

জীবনে মেয়েদের সাথে কথা বলছি কম তাই তাকে চ্যাটে নক করতেও সাহস পাইনা। বন্ধুরা আমাকে এদিকে সাহস দিয়ে যায়, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তখনই কোথায় জানি শুনলাম জন ডেনেভারের "ইউ ফীল আপ মাই সেনসেস...." । হঠাৎ কি মনে হতেই মেয়েটার প্রোফাইলে গানটির কথা লিখে দিলাম। ব্যস, সেদিনই প্রথমবারের মত ব্লক খাইলাম আর আমার মাথায় বাজঁ পড়লো ।

এই গানের কথা পড়েও কেউ আমাকে ব্লক করতে পারে এটা মাথায় ঢুকতেছিল না। তারপর ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুদিন পরেই ওই মেয়ের অন্য একটা পোলার ভালোবাসা বিনিময় শুরু হয়ে গেল। আর আমিও বুছলাম ভালোবাসা এত সস্তা না। কিন্তু এসব কিছুতেই আর মন খারাপ হয়নি তখন, তাকে আর অনুভব করতে পারিনি তখন। বুঝতে পারলাম ভালোবাসা এত সস্তা না, ক্রাশ আর ভালোবাসা এক না।

সত্যিকারের ভালোবাসা আরও গভীর(আতেল হইবার ইমো হবে)। যখন মেয়েটার প্রতি ক্রাশ খাই তখনই তার একটা ছবি সেভ করে রাখছিলাম। তারপর প্রথম ক্রাশের স্মৃতি হিসেবে আমার ২য় লুলামি ছবি বানায়ে। তখন সবে ভেক্টর আর্ট শিখতেছি ইলাস্ট্রেটরে, তাই ভেক্টর আর্টের উপর প্রাকটিস করতে তার ছবিটাই বেছে নিয়েছি। এটাই আমার প্রথম এবং শেষ বিনা অনুমতিতে কারও ছবি এডিট করা।

ভালোবাসা কিংবা লুলামী-৩ আমার ভার্সিটিতে প্রথম পরিচয় শাফীর সাথে এবং শাফীই আমার প্রথম ভার্সিটি ফ্রেন্ড। ও ভালো ছবি আকাঁতে পারে। একবার ও নকশাতে কোন মডেলকে দেখে একটি ছবি আকাঁলো। মেয়েটার চেহারা যদিও দেখা যায় না, তারপরও ছবিটা আমার পছন্দ হয়ে গেল। মোটামুটি একটা ক্রাশ বলা যেতে পারে।

তখন আমি ফটোশপে স্কেচ থেকে ডিজিটাল পেইন্টিং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেছি। তাই শাফীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করে ফেললাম আরেকটি ছবি। (শাফীটা এতই বজ্জাত যে ও স্কেচে মেয়েটার শাড়ীর আচঁল নামায়ে দিছিল, আমাকে ডিজিটালাইজড করার সময় ওইটা ঠিক করতে হয়েছে ) ভালোবাসা কিংবা লুলামী-৪ হঠাৎ করেই আমার ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক। মন ভীষণ খারাপ। কোনমতে সেইটা রিকোভার করলাম, কিন্তু হ্যাকার আমার প্রোফাইলে এত নোংরা ছবি দিছিল যে তা ডিঅ্যাকটিভেট করতে বাধ্য হইছি।

তখন তো আমার সম্পর্কে অনেকের ধারণা পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেকেই ভাবছে খারাপ ছবিগুলো আমি আপলোডাইছি। অবশ্য হ্যাকিং হওয়ার ফলে নতুন একটি ভার্চুয়াল চরিত্র তৈরীর বুদ্ধি আসল মাথায়। একটি ভার্চুয়াল লুল ক্যারেক্টার তৈরী করলাম, নাম দিলাম "কূপ মন্ডুক"(এখনও ক্যারেক্টারটা বহাল তবিয়তে আছে, এমনকি মাঝে মাঝে এখন নিজেকেও কূপের মত মনে হয়)। লুলামী করা সত্ত্বেও কূপের সাথে অনেক মেয়ের সম্পর্ক ভালো।

ফেবিতে কূপ ভালোই আসর জমিয়ে ফেলেছে, এদিকে কূপের সৃষ্টিকারীর ভাগ্যে প্রেম-ভালোবাসা দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। তখন কূপের এক বন্ধুর ছবি ভালো লেগে যায়। তাকে তার ছবিটা চেয়ে অনুমতি প্রার্থনা করি। সে রাজী হলে করে ফেলি নিচের ছবিটা। বলা বাহুল্য, তখন আমি ইলাস্ট্রটরে ট্রেসিং নিয়ে যথেষ্ট ঘাটাঘাটি করছিলাম।

এটা তারই ফসল। তবে আসল ছবিটার রেজুলেশন খারাপ হওয়ায় কাজটা করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আর এটা করার পর কানে ধরেছি লো রেজুলেশনের কোন ছবি নিয়ে আর কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা না(দু:খের কথা হলো বন্ধুর প্রোফাইলও কয়দিন আগে হ্যাক হইছে, তাই এখন কথা হয়না বললেই চলে)। সবশেষ হঠাৎ করে ইদানীং লুলামী করতে ভালো লাগে না। ভালোবাসার মানুষটি খুজেঁ পেতে ইচ্ছা করে খুব, কিন্তু পাইনা।

অনেক সময় নিজেকে নি:সঙ্গ মনে হয়। কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে। অনেকে তার প্রিয়জনের সাথে ঘোরাঘুরি করবেন। অনেকেই নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। কিন্তু আমি হয়ত খুজেঁ যাব আমার ভালোবাসার মানুষটিকে।

জীবনের ২১টি বসন্ত কাটিয়েও যার দেখা আজও পাইনি। তবে তাতে কি? কাল নাহয় পৃথিবীর সব মানুষ, প্রকৃতিকে ভালোবাসব। আর লুকিয়ে থাকা মানুষটির জন্য মনে মনে একটি স্বপ্নের পৃথিবী গড়ব। সবাইকে ভ্যালেন্টাইনস ডে'র শুভেচ্ছা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.