আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে পাল্টে গেল দৃশ্যপট



অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এক বক্তব্যেই পাল্টে গেল শেয়ারবাজারের দৃশ্যপট। অব্যাহত দরপতনের ধারার বিপরীতে দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই বাড়ল বেশির ভাগ শেয়ারের দর, বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটল মূল্যসূচকে। সেই সঙ্গে বাড়ল লেনদেনের পরিমাণও। সচিবালয়ে বাংলাদেশ চা সমিতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে গতকাল মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ সপ্তাহের শেষ দিকে বাজারে স্থিতিশীল অবস্থা আসবে বলে মনে হয়। ’ এ সময় বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করারও পরামর্শ দেন তিনি।

সম্প্রচার মাধ্যমের বদৌলতে খবরটি ছড়িয়ে যায় বাজারে। আর এতেই আশাবাদী হয়ে ওঠেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এক দিন আগেও যাঁরা যেকোনো দামে শেয়ার বেচে দিতে রাজি ছিলেন, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাঁরাই শেয়ার হাতছাড়া করতে চাননি। তাই মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ক্রেতাশূন্য বাজার রূপ নেয় বিক্রেতাহীন বাজারে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্র জানায়, আগের দিন স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৭৭টি কোম্পানির কোনো ক্রেতা ছিল না।

অথচ গতকাল লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫৬টিই ছিল বিক্রেতাশূন্য। অবশ্য দিনের শুরুটা ছিল আগের দিনগুলোর মতো বিক্ষোভে উত্তাল। এদিন রাজধানীর গণ্ডি ছাড়িয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জেলা শহরে। তবে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয়েছে ডিএসইর কার্যালয়ের সামনে। লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে সূচক কমতে থাকলে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন।

এ সময় তাঁরা যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালান। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিন বিনিয়োগকারীকে আটক করে। বাজার পরিস্থিতি: দুই স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল লেনদেন শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যে মূল্যসূচক ২০০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে যায়।

কিন্তু দুপুর ১২টার সময় তা আবার ৩৫০ পয়েন্ট কমে। এর পরের সময়গুলো সূচকের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই চলতে থাকে লেনদেন। কিন্তু বেলা পৌনে একটার দিকে অর্থমন্ত্রী বাজার সম্পর্কে সাংবাদিকদের সামনে মন্তব্য করার পর থেকেই সূচক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ মূলসূচক আগের দিনের চেয়ে ৪২৮ পয়েন্ট বা ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে ছয় হাজার ৮২২ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক এক হাজার ৬২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৯ হাজার ৪৯১ পয়েন্ট।

স্টক এক্সচেঞ্জটিতে গতকাল লেনদেন হয়েছে ১১৬ কোটি টাকা। আর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৮৭ কোটি টাকার বেশি, যা আগের দিনের চেয়ে ১৭৮ কোটি টাকা বেশি। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতের একটি কোম্পানি গত সোমবার বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণাটি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আশান্বিত করে তোলে, যার প্রভাবে দিনের শুরুতে সূচক বাড়ে। কিন্তু আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের একটা অংশ এ সুযোগে শেয়ার বিক্রি করা শুরু করলে আবার মূল্যসূচক কমতে থাকে।

পরে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আবার তা ঘুরে দাঁড়ায়। যোগাযোগ করা হলে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আরিফ খান বলেন, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করে তুলবে—এটাই স্বাভাবিক। কারণ, অর্থমন্ত্রী যখন কথা বলেন, তখন অনেক দায়িত্ব নিয়েই বলেন। তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন থাকবে। কিন্তু পতনের সময় বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে এমনভাবে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন, যাতে মনে হয় বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে।

বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে, শেয়ারবাজার কখনো ধ্বংস হবে না। তাই আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করা যেমন উচিত নয়, তেমনি দাম বাড়তে থাকলে লাভ নেব না—এমন মনোভাবও যৌক্তিক নয়। ’ ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সক্রিয় ছিল। লেনদেনের বড় অংশেই ছিল তাদের ভূমিকা। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ: বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে সাধারণ সূচক ৩০০ পয়েন্টের বেশি পড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা বরাবরের মতো গতকালও ডিএসইর সামনের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে বিভিন্ন হাউস থেকে কয়েক শ বিনিয়োগকারী তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। বিনিয়োগকারীরা আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে আর কে মিশন রোড পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা ওই সড়কের দুই পাশের ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরাতে কয়েক দফা লাঠিপেটা ও ছয়টি টিয়ারগ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিনিয়োগকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সেখানে কর্তব্যরত মতিঝিল থানার পেট্রোল পরিদর্শক আবু হাজ্জাজ, উপপরিদর্শক সমীর, কনস্টেবল রানা মিয়া, বাংলা নিউজের ফটোসাংবাদিক যোবায়ের রাকেশ, মাই টিভির ক্যামেরাম্যান রাজীব ফকরুল ও মাই টিভির সাংবাদিক হাসান জাকিরসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।

তাঁদের মধ্যে রানা মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে বিনিয়োগকারীরা সময় টেলিভিশনের গাড়িসহ অন্তত ১০টি গাড়ি, রহমান চেম্বার, রশীদ মোটর ভবন, হোটেল ঘরোয়া ভবন, ইসলামী ব্যাংক অফিস, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভবনসহ বেশ কিছু ভবনের কাচ ভাঙচুর করেন। একই সময় রাজশাহী, কুমিল্লা ও মৌলভীবাজারের বিনিয়োগকারীরাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, দুপুর ১২টার দিকে অর্ধশতাধিক বিনিয়োগকারী শহরের কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে এসে জড়ো হন। এ সময় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দেন।

একপর্যায়ে তাঁরা এনসিসি ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রাজশাহীতে বিনিয়োগকারীরা নগরের আইল্যান্ড থেকে শতাধিক ফুলের টব তুলে ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের নিবৃত করার চেষ্টা করলে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। মৌলভীবাজারের শেয়ার মার্কেট ইনভেস্টর ফোরাম গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শহরের চৌমোহনা চত্বরে মানববন্ধন করেছেন। এ সময় বিনিয়োগকারীরা প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

এতে শহরের কোর্ট রোড, শমসের রোড ও সেন্ট্রাল রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উৎস: প্রথমআলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.