আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলো ছায়ার জল তরঙ্গ



স্কুল ছুটি হত ১২ টায়, আর ফেরার বাস ছিল ১ টার সময়। মাঝখানের এক ঘণ্টা পার করতাম খেলায়; সময়টা ছিল যখন পড়ি ক্লাস ওয়ান এ। ক্লাসের পড়া আর সময়ের হিসেব না করলেও এই ১ ঘণ্টার হিসেবটা থাকতো পাক্কা, একটা মুহূর্তও যেন নষ্ট না হয়। বাস আসার কিছু আগেই পুকুর পাড়ে গিয়ে একটু বসতাম জিরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু বসা কি আর হয় ঐ বয়সে? সবাই মিলে পাড়ে বসে হাত দিয়ে ঢেউ বানাতাম, আর কার ঢেউ কারটা ভেঙে দিচ্ছে এই নিয়ে তুমুল হৈ চৈ।

আবার মাঝেমধ্যে একপাড়ে ঢেউ বানিয়েই দৌড় পুকুরের ধার ধরে, অন্য পাড়ে গিয়ে ধরতে হবে। কিন্তু অন্য পাড়ে পৌঁছে আর খুঁজে পেতাম না সেই ঢেউ। আর যেসব দিন সাথে কেউ থাকতো না, পাড়ে বসে তাকিয়ে থাকতাম পুকুরের জলে, আমার প্রতিবিম্ব! টোকা দিলে কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়ে তারপর আবার ধীরে ধীরে এক হত সবগুলা বিন্দু। হঠাত হঠাত দূর থেকে কোন ঢেউ এসে ঝাপসা করে দিত, আবার ধীরে ধীরে এক হত। দু একটা গাছের পাতা পড়ত আসেপাশে; একটু ঝাপসা করে দিত, ধীরে ধীরে আবার এক হত।

এক অদ্ভুত ভাঙা গড়ার খেলা। হাই স্কুলের মাঠের পাশেও একটা পুকুর ছিল। ক্রিকেট খেলার চরম ধুম তখন। কিন্তু পুকুর পাড়টা একটা আলাদা জগত। তখন পাঠ্য বই এ পুকুরের বাস্তুসংস্থান পড়তাম, আর বিকেলে পাড়ে বসে নিজের প্রতিবিম্বের বাস্তুসংস্থান দেখতাম।

ঘন সবুজ জলে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে বিকেলের রোদের আলো ছায়ার খেলা, আর আমার অবয়ব এর ছায়া। আগের মতই চোখ, তবে চুলের ভাঁজটা নতুন এবং একটু আধটু দাড়ি গোঁফ উঁকি দিচ্ছে। অপর পাড়ে ইট-সুরকির স্তুপে ব্যাস্ত হাতের উঠা নামা, নতুন বিল্ডিং এর কাজ চলছে। মাঝে মাঝে সুরকি ছুটে পুকুরের জলে এসে পড়ত, আর সেই ঢেউ; বিন্দুগুলো ঝাপসা হয়ে আবার এক হয়ে যেত। ভাঙা গড়ার খেলা।

কলেজের মাঠে আর পুকুর না পেলেও কোচিং এর বাসার পাশেই লেক ছিল। একই রকমই অনেক কিছু তবে ঢেউ এর উতস ভিন্ন। কখনও আমার হাতেরই ছুড়ে দেয়া ঢিল, কখনও বা পাশের বিপণী বিতান থেকে ছুটে আসা আইসক্রিম, জুস এর প্যাকেট। মাঝে মাঝে গাছের পাতা। ছোটবড় ঢেউ আর ভাঙা গড়ার খেলা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পুকুর ছিল অনেকগুলো, অনেক অনেক ঢেউ। তখন অবয়ব খোঁজার সময় কোথায়? মাঝে মাঝে শখ করে গিয়ে সবাই মিলে হয়ত বসে আড্ডা দিতাম। পুকুরের জলে তখন আর নিজের ছায়া খোঁজে না কেউ। একদল খোঁজে সূর্যের ছায়া, একদল প্রিয়জনের, আর কেউ কেউ আকাশ এর। তবুও মাঝে মাঝে নিজের ছায়াটা খুঁজতাম, কষ্ট হলেও চোখগুলো ঠিকই খুঁজে পাওয়া যেত।

খুব দ্রুত মিলিয়ে গেলেও আবার এক হত কিছু সময়ের জন্য সব বিন্দু। সেই ভাঙা গড়ার খেলা। পথে যাওয়ার সময় প্রায়ই ফোয়ারাটা দেখি আজকাল। কপাল ভাল থাকলে কোনদিন হয়তো সচলও থাকে। জলের তীব্র স্রোত আর বেগের কাছে এখন ঢেউ হার মেনে নিয়েছে।

এ স্রোতে শুধুই গতি; নেই কোন ছায়া। আমিও খুব একটা খুঁজি না, শুধু সেদিন হেটে যাচ্ছিলাম বলেই একটু থামলাম। পাথর আর লোহার অপরূপ নকশা আর খোঁদাই এর কাজ। এর ফাঁক দিয়ে নীচে একটু গভীরে তাকিয়ে আছি, এবং অবাক হয়ে দেখছি নিজেকে! হাত দিয়ে ছোঁয়ার উপায় নেই, শুধু দেখছি। হঠাত বেশ আলোড়ন তুলে জেনারেটরটা বন্ধ হয়ে গেল।

অনেকগুলো ঢেউ ছায়াটা এলোমেলো করে দিয়ে আবার খুব ধীরে ধীরে এক হয়ে গেল সব বিন্দু। অদ্ভুত সেই ভাঙা গড়ার খেলা!! The Dream Of The Dolphin - Enigma

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।