আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুখোমুখিঃ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বিষয়ক প্রশ্নোত্তর

দিন বদলের সময় এখন

১। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের অগ্রাধিকার এবং উন্নয়ণের গুরুত্ব কতটুকু? উত্তরঃ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহের উন্নয়ন-কে অগ্রভাগেই স্থান দেয়া হয়েছে। সুতরাং স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর সময় থেকেই এ প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেয়ার কাজটি ছিল সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং সাংবিধানিক অভিপ্রায়। ২। তাহলে এ কাজটি এখন অব্দি গুরুত্ব সহকারে করা হচ্ছে না কেন? উত্তরঃ স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, হত্যা, ক্যু- এসবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে।

পূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশটি চলতে পারেনি বলে নীতিনির্ধারনে আমলাতান্ত্রিক এলিটদের ভূমিকার প্রাধান্য ছিল বরাবর। ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার বাহক এ শ্রেণী তাদের প্রচ্ছন্ন গোষ্ঠীস্বার্থের বিরোধী বিবেচনা করে স্থানীয় সরকারকে দূর্বল করে রাখার ক্ষেত্রে প্রকাশ্যেই ভূমিকা রেখে চলেছে। সে কারনে আজো সংবিধানের এ অভিপ্রায় বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। ৩। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব আইন ও বিধিমালা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো কি মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করে? উত্তরঃ অধিকাংশ মৌলিক ক্ষেত্র সমূহের জন্য প্রচলিত আইন ও বিধিগুলো তা করে না।

৪। এক্ষেত্রে করণীয় কি? উত্তরঃ যদি রাষ্ট্রের সংবিধান মানা হয় তাহলে সংবিধানের ০৭-নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক সংবিধানের প্রাধান্য এবং ২৬-নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক মৌলিক অধিকারের সাথে অসমঞ্জস আইনগুলো অবিলম্বে বাতিল বা সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা জাতীয় সংসদে আলোচিত হতে হবে এবং উপযুক্ত নতুন আইন দ্বারা ঐগুলো বাতিল বা প্রতিস্থাপন করতে হবে। তা নাহলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আশা করা অবান্তর। ৫।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কি সরকারী প্রতিষ্ঠান? উত্তরঃ হ্যাঁ। ৬। পরিপূ্র্ণভাবে সরকারী না আধা-সরকারী? উত্তরঃ পরিপূ্র্ণভাবেই সরকারী। ৭। তাহলে অনেকে এগুলোকে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বলেন কেন? উত্তরঃ ইহা শাব্দিক ভুল প্রয়োগ।

ইউনিটারী সরকার ব্যবস্থায় অনেকগুলো প্রশাসনিক একাংশ মিলেই পরিপূ্র্ণ সরকার। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সবগুলো প্রশাসনিক একাংশের যোগফলই একটি রাষ্ট্রের সাধারণ প্রশাসন। কর্মভাগ দিয়ে রাষ্ট্রভাগ বুঝায় না। শুধুমাত্র রাষ্ট্রভাগের ক্ষেত্রেই স্বায়ত্ব-শাসন প্রযুক্ত হতে পারে। ৮।

বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করে বলবেন? উত্তরঃ দেখুন, শুধুমাত্র ব্যাক্তি বিশেষের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা বা ধার করা বিদেশী শব্দ দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনার উপাদানসমূহকে ব্যখ্যা করলে চলবে না। এক্ষেত্রে একমাত্র আইনসম্মত ভিত্তি হলো রাষ্ট্রের সংবিধান। আমাদের সংবিধানের চতুর্থ ভাগের নাম হলো নির্বাহী বিভাগ। রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্য পরিচালনার জন্য বিদ্যমান তিনটি মূল ভাগের মধ্যে নির্বাহী বিভাগ হলো একটি। অপর দুটি হলো- আইনসভা ও বিচার বিভাগ।

এ নির্বাহী বিভাগই হলো সরকার। সংবিধানে নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ০৫ টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। এগুলো- (১) রাষ্ট্রপতি, (২) প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভা, (২ক) নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, (৩) স্থানীয় সরকার, (৪) প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ ও (৫) অ্যাটর্নী জেনারেল। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, স্থানীয় সরকার রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি অংগ। স্থানীয়ভাবে অর্থাৎ জনগনের একেবারে পাশে থেকে সেবা দিবে ও রাজস্ব নিবে স্থানীয় সরকার; আর এগুলোর কাজ দেখাশুনা, নিয়ন্ত্রন, মূল্যায়ন এবং এতদুদ্দেশ্যে নীতিমালা, বিধি-বিধান ও নির্দেশাবলী দেবে মন্ত্রী পরিষদ।

সরকারের সর্বোচ্চে আছেন রাষ্ট্রপতি। মন্ত্রী পরিষদ বা তাঁদের সহযোগীরা স্থানীয় পর্যায়ে এসে হাতে কলমে রাষ্ট্রের সেবা কাজগুলো করতে পারেন না। এজন্যই সরকারের গুরুত্বপূর্ন অংগটি হলো স্থানীয় সরকার। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ মোতাবেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রশাসনের সকল স্তরেই কাজগুলো করবেন স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তাদের সহায়তা করবেন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ।

মন্ত্রীসভার সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ স্থানীয় সরকারের কাজের জন্য নয়। ৯। তাহলে আপনি বলছেন, স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী? উত্তরঃ নিঃসন্দেহে। আগেই তা বলা হয়েছে। ১০।

কিন্তু সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার চাকুরীতো সরকারী চাকুরী বলে পরিচিত নয়। আবার এসব সার্ভিসে মন্ত্রীপরিষদের প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য সার্ভিসের ক্যাডার সদস্যগণ প্রেষনে নিয়োজিত হয়ে কাজ করছেন। তা কেন? উত্তরঃ ঠিকই বলেছেন। গলদটাতো এখানেই। রাষ্ট্রের সেবা কার্যগুলো প্রমিত মানে উন্নীত না হবার পেছনে এটাই সবচেয়ে বেশী দায়ী।

আমলাতন্ত্রের এলিটরা ঔপনিবেশিক প্রথায় নিজেদের ব্রাক্ষ্মণ এবং অন্য সবাইকে নমঃশুদ্র ভাবতে বেশী পছন্দ করেন। আর নিজেদের স্বার্থ অবারিত করার জন্য হেন কোন পন্থা নেই, যা তারা অবলম্বন না করেন। তারা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক ধ্যান জ্ঞান থেকে বেরিয়ে আসতে নারাজ। সংবিধান সুস্পষ্টভাবে বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাহী বিভাগের সরাসরি অংগ। অর্থাৎএর সবকিছুই সরকারী।

এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের চাকুরীরত কর্মকর্তা নিয়োগ এবং তাদের নিয়ন্ত্রণও করে থাকে সরাসরি সরকার। অথচ চাকুরীটা সরকারী নয়! আবার এসব প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় পদগুলোর চেয়ার তাদের ক্যাডার সদস্যরা দখল করে থাকছেন। পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনগুলোর আলাদা চাকুরী কাঠামো ও জনবলের বিধান রয়েছে। নিজস্ব চাকুরী কাঠামোর জনবল দ্বারাই সকল পদ পূরণ করা নিয়মসিদ্ধ ও স্বাভাবিক হতে পারে। সেখানে ভিন্ন সার্ভিসের প্রেষনে নিয়োগ বা পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা একেবারেই অমূলক।

এসবের ফলেই সার্ভিসগুলো শক্তিশালী হয়ে বিকশিত হতে পারছেনা। ভিন্ন সার্ভিস থেকে কর্মকর্তারা তিন বছরের জন্য এসে এখানকার আইন ও বিধি-বিধান বুঝতে বুঝতেই সময় চলে যায়। সেবা সম্প্রসারন বা উদ্যোগী হয়ে দরদ দিয়ে কিছু করার মানসিকতা ও সময়ই বা পাবেন কিভাবে? ধরি মাছ, না ছুঁই পানি-ধাঁচের ভূমিকায় থেকে ভালো একটা পোষ্টিং এর আশায় তারা বুক বেঁধে থাকেন। এসব বিবেচনা ছাড়াও সংবিধান অনুসারেই এখানে পূণর্গঠিত একটি শক্তিশালী সার্ভিস ক্যাডার থাকা অত্যন্ত জরুরী। ১১।

তার মানে আপনি বলছেন যে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ক্যাডার সার্ভিস গঠন করা প্রয়োজন? উত্তরঃ হ্যাঁ। এখানে মন্ত্রিসভার সহায়ক ক্যাডার ও অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের লোকজনের পোস্টিং দেয়ার মাঝেইতো উহার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি প্রমান করে। এছাড়া আমরা মাঠ প্রশাসনকে যদি দুভাগে ভাগ করি, যথাঃ পল্লী প্রশাসন (Rural Administration) ও শহর প্রশাসন (Urban Administration) তাহলে দেখাবো যে, কৃষি, সমবায়, মৎস্য ইত্যাদি বিভাগের স্থানীয় পর্যায়ে কর্মরতদের সিভিল সার্ভিস ক্যাডারভূক্ত করা হয়েছে। অথচ শহর এলাকাগুলো অনেক বেশী ঘনবসতিপূর্ণ এবং জীবনযাত্রার সকল দিক থেকেই এখানে সেবার চাহিদা ও গুরুত্ব অনেক অনেক বেশী। অদ্ভুদ বিষয় হলো যে, শহর প্রশাসনের সার্ভিসভূক্তরা ক্যাডারভূক্তির মুখ আজো দেখতে পাননি।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের একই নির্বাহী বিভাগের অন্তর্ভূক্ত অংগহেতু বিসিএস (স্থানীয় সরকার, শহর প্রশাসন), বিসিএস (স্থানীয় সরকার, পল্লী প্রশাসন), বিসিএস (স্থানীয় সরকার, শহর প্রকৌশল), বিসিএস (স্থানীয় সরকার, পল্লী প্রকৌশল), বিসিএস (স্থানীয় সরকার, শহর স্বাস্থ্য), বিসিএস (স্থানীয় সরকার, পল্লী স্বাস্থ্য)- এরূপ সার্ভিস ক্যাডার গঠন করে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা যেতে পারে। তাতে একদিকে যেমন সেবার মান বাড়বে; অপরদিকে তেমনি রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ রাষ্ট্র-কাঠামো অনেক বেশী শক্তিশালী হবে। ভিত্তি দূর্বল রেখে উপরে অনেক শক্ত কাঠামো তৈরী করা হলেও ইমারত মজবুত হতে পারে না। ১২। এখানে আপনি কি জনপ্রতিনিধিদের উৎকর্ষতা অর্জনের দিকটির কথা বাদ দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার জন্য কর্মকর্তাদের ক্যাডারভূক্তিকেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন? উত্তরঃ উৎকৃষ্ঠ মানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

এ দায়িত্ব ও ক্ষমতা জনগনের হাতে। তবে ধারাবাহিক চর্চ্চার মধ্য দিয়েই তা উৎকর্ষতা পাবে। দুটি বিষয়ই আবার পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। একটি ভালো সার্ভিসে ভালো জনপ্রতিনিধিত্ব স্বাভাবিক রীতিতেই আকর্ষিত হয়। জনপ্রতিনিধিগণের পাশাপাশি একটি শক্তিশালী আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্হার প্রয়োজনীয়তা অনঃস্বীকার্য।

একটি দক্ষ ও শক্তিশালী চাকুরী কাঠামো বিকশিত না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো যথার্থ ও কার্যকরভাবে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিগণ জনগণের পক্ষে কল্যাণমূখী সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করে থাকেন। তা দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পালন করতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অনেক সময় দেখা যায়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সমাজের দুষ্টচক্রের চাপ, দুর্ণীতি- এসব মোকাবেলা করে শৃংখলা এবং রাষ্ট্রের বিধি-বিধান ও নীতিসমূহের যথাযথ অনুসরনের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদেরকেই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় বেশী। এসকল ক্ষেত্রে মাথা সূস্থির রেখে তাদের সুদৃঢ় থাকতে হয়।

সর্বোপরি, রাজনৈতিক শক্তি অপেক্ষা রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি দূর্বল হয়ে পড়লে তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার আশংকা থাকে। রাষ্ট্র তখন অকার্যকর হয়ে পড়ে। মাঠ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দুষ্টের দমন, শিষ্ঠের লালন। এ গুরুদায়িত্বটি প্রশাসনের কর্মকর্তাগণকেই এখনো পালন করতে হয়। এসব বিচারে এখানে একটি শক্তিশালী সার্ভিস ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

১৩। এবার আমলাতন্ত্রের পক্ষে বলছেন? উত্তরঃ প্রশ্নটি নিজেই পক্ষপাতিত্ত্বমূলক হয়ে গেল না? আমার বক্তব্যে জনপ্রতিনিধিগণের পাশাপাশি শক্তিশালী আমলাতন্ত্রের প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করেছি। পূর্বাপর বক্তব্যগুলো মন দিয়ে শুনে থাকলে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, রাষ্ট্রের নিয়ামক পদ্ধতি হবে গনতন্ত্র, আমলাতন্ত্র নয়। আমলাগণ নীতি নির্ধারণ বা সিদ্ধান্তের মালিক নন। আমলাগণ প্রশাসকও নয়।

সংবিধানের ১১-নং অনুচ্ছেদ পরিস্কারভাবে তা-ই বলছে। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। আর জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা পরিচালকের এ দায়িত্ব পালন করবেন কি দিয়ে, কাদের দ্বারা? হ্যাঁ, এজন্যে প্রয়োজন পূর্বাপর অভিজ্ঞ, শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত, সুসংগঠিত, দক্ষ, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ একটি কর্মী বাহিনীর- যারা সুনির্দিষ্ট আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের বাইরে যেতে পারবেন না। আর এ ব্যবস্থাটাই আমলাতন্ত্র।

জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের জনগণের ইচ্ছেগুলো এ আমলাতন্ত্রকে সচল করে এবং তাদের হেফাজতে আইনী পরিকাঠামোর মধ্যে থেকে জনগণের জন্য রাষ্ট্রের কাজগুলো আমলাগণ সম্পাদন করে থাকেন। যাবতীয় বিষয়ে তারা জনপ্রতিনিধিগণকে অবহিত করেন, পরামর্শ বা মতামত দেন, সিদ্ধান্ত গ্রহনে সার্বিক সহায়তা করেন। কোন কারণে এ তন্ত্রটি দুর্বল হয়ে পড়লে রাজনৈতিক বা অন্য কোন চাপ সহ্য করার ক্ষমতা লোপ পায় এবং তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিবাচক দেশপ্রেমী ও মানবতাবাদী স্বভাবের আমলা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এটা যদি এলিট ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়ে পড়ে তাহলে জাতির উপর নেমে আসে কঠিন দূর্যোগ।

অতি আভিজাত্যবোধ সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগকে যথার্থ গুরুত্ব দেয় না এবং সহানুভূতির দিকটি দূর্বল করে দেয়। আভিজাত্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা তখন নিজেদের স্বার্থবোধ দ্বারাই তাড়িত হন বেশী। বিষয়টি প্রশ্রয় পেলে এমন এক অবস্থায় যেয়ে উপনীত হয় যে, জনগণকে তারা তুচ্ছ ও প্রজাজ্ঞান করে মনিব সেজে সেভাবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালান। এমনকি জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সাংবিধানিক পন্থায় প্রশাসন পরিচালিত হওয়ার পথেও তারা বাঁধা হয়ে দাঁড়ান কখনো কখনো। জাতির অগ্রগতি ও মানবতার মুক্তি তখন পথরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

আমরা নিশ্চয়ই এরূপ বুর্জুয়া শ্রেণীর আমলাতন্ত্রের বিকাশ বা প্রশ্রয় কামনা করি না। বরং এদিকটির ব্যপারে সকলকে সতর্ক থাকতে বলবো। সংবিধানকে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি অংগে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করে দেশে যথার্থ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথাই বলবো। তাই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে সংবিধান যেভাবে গুরুত্বারোপ করেছে ঠিক সেভাবে এগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করা জরুরী। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই জনগনের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়া হয়।

এ কাজটিই সরকার গঠনের মূল উদ্দেশ্য। আর এজন্য যে কর্মী বাহিনী নিয়োজিত থাকবেন তাদের কাছ থেকে প্রমিত মানের কাজ পাবার জন্য অবশ্যই প্রমিত মানের করেই তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে। সুতরাং সংবিধানদৃষ্টে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরতদের ক্যাডারভূক্তি দ্বারা বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের কাজটি জনস্বার্থেই একান্তভাবে জরুরী। ১৪। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস সদস্যদের ক্যাডারভূক্তি করণের পদ্ধতিগত বিষয়ে আপনার মতামত বা পরামর্শ কি হবে? উত্তরঃ দেখুন, এখানে পদ্ধতিগত বিষয়টি কারো মতামত বা পরামর্শের বিষয় নয়।

বিষয়টি হলো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবিধানের বিধানাবলীর যথার্থ অনুসরণ। সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে কেন্দ্রে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত রেখে সেই ব্রিটিশ শাসনের আদলে ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণায় আজো রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরেও কেন জানি এর বিরুদ্ধে কেউই শক্তভাবে কিছু বলছেন না। এটা ভাবতে অবাক লাগে, সরকারের চাকুরী কাঠামোতে ২০-টি বেতন গ্রেড। যার অর্থ এ মানুষগুলোকে ২০টি শ্রেণীতে ভাগ করে রাখা হয়েছে।

এরূপ শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা মানবতাবোধের নির্মম নিষ্ঠুরতা বলেই আমি মনে করি। এটা জাতির মুক্তি ও প্রগতির পথে বিরাট অন্তরায়। যারা জনগণকে সেবা প্রদানের কাজ করেন তাদের মাঝেই যদি এরূপ শ্রেণী বৈষম্য প্রকটভাবে বিদ্যমান থাকে, তাহলে তাদের দ্বারা প্রদত্ত সেবার মান কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বিষয়টি অনুধাবন করে ১০-টি গ্রেডে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করেছিলেন। পরে তা ঠিক রাখা যায়নি।

এছাড়াও সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত,ক্যাডার, নন-ক্যাডার আবার গেজেটেড, ননগেজেটেড- এরূপ নানা বৈষম্যের উপাদান সৃষ্টি করে শ্রেণী-বৈষম্য অতি সযত্নে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এসবই সংবিধানের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার ও নির্বাহী বিভাগ সম্পর্কিত বিধানাবলীর পরিপন্থী। সংবিধানের ৪র্থ ভাগে বর্ণিত নির্বাহী বিভাগের অঙ্গগুলো হলোঃ (১) রাষ্ট্রপতি, (২) প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভা, (২ক) নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, (৩) স্থানীয় সরকার, (৪) প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ ও (৫) অ্যাটর্নী জেনারেল। সংসদীয় পদ্ধতির এ সরকার ব্যবস্থা হলো গনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা। নির্বাহী বিভাগের কাঠামোদৃষ্টে সহজেই বুঝা যায় যে, রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের অভিবাবক ও সকল কার্যের চুড়ান্ত অনুমোদনকারী।

প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভা নির্বাহী কর্তৃত্বের কর্ণধার। রাষ্ট্র পরিচালনায় দৈনন্দিন কার্যাবলীর জন্য নীতি নির্ধারন, আইন সভায় প্রণীত আইন ও বিধি বিধান সমূহ প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরিবীক্ষন, মূল্যায়ন, সমন্বয়- এগুলো মন্ত্রীসভার কাজ। তারপর প্রচলিত আইন বিধি-বিধান ও মন্ত্রীসভার নীতি নির্দেশনা অনুসারে জনগণের পাশে থেকে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা ও উন্নয়ণমূলক কাজগুলো সম্পাদন করবে। প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ রাষ্ট্রের আন্তঃ ও বহিঃ নিরাপত্তার যাবতীয় সেবা দেবে। অ্যাটর্নী জেনারেলের দপ্তর জনগণ তথা সরকারের পক্ষে আদালত সমূহে আইনী সেবা দেবে।

এ হলো সংবিধান সম্মত নির্বাহী বিভাগের কাঠামো। কিন্তু বাস্তবে নির্বাহী বিভাগের অনেক কর্মকান্ডেই সংবিধানের সাথে সংগতি রক্ষিত হচ্ছে না । কিছুদিন আগেও মন্ত্রীসভার কর্মচারীগণ বিচার বিভাগীয় কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এখনো স্থানীয় সরকারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। জেলা প্রশাসন আজো নির্বাচনের মুখ দেখতে পারেনি।

সংবিধান এখানে পরাস্ত। বিসিএস (প্রশাসন) নামীয় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ক্যাডার সদস্যদের দ্বারা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা সহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সবকটি গুরুত্বপূর্ণ পদই দখল করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব চাকুরী কাঠামো রয়েছে। এসব চাকুরী কাঠামোভূক্ত নিজস্ব সার্ভিস সদস্যদের জন্য আলাদা সার্ভিস ক্যাডার না করে প্রেষনে ভিন্ন ক্যাডার সদস্যদের এতোদিন ধরে নিয়োজিত করে রাখার বিষয়টিই হলো সবচে উদ্বেগজনক বিষয়। এর কারনে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো যথার্থ প্রশাসনিক শক্তি অর্জন করে গতিশীল হয়ে বিকশিত হতে পারছে না।

এ বিষয়গুলো যথাযথ অনুধাবন করে সাংবিধানিক পদ্ধতি অনুসরনে সরকারের কর্ম বিভাগসমূহ পূণর্গঠণ করা জরুরী ভিত্তিতে অত্যাবশ্যক। আমার মতে সরকারের যাবতীয় কার্য নিম্নোক্ত পূণর্গঠিত মৌলিক ভিত্তির উপর পরিচালিত হওয়া দরকার- যা সাংবিধানিকভাবে সমর্থনযোগ্য। ১। সরকারের কার্য দুভাগে বিভক্ত থাকবে, যথাঃ (ক) স্থানীয় সরকারের কার্য ও (খ) কেন্দ্রীয় সরকারের কার্য। ২।

(১) স্থানীয় সরকার রাষ্ট্রের পক্ষে রাষ্ট্রের ভিতরে জনসেবা ও স্থানীয় উন্নয়নের সকল কার্য সম্পাদন করবে এবং স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে সকল প্রকার রাজস্ব আদায়সহ নিজস্ব বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল খাতের ব্যয় নির্বাহ করবে। জনশৃংখলা ও জননিরাপত্তা মূলক কার্যাদি নিষ্পন্ন করবে। জনসাধারণের কার্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ণ সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। সরকারী কর্মচারীদের কার্য তদারকি ও কার্য সম্পাদনের মান সম্পর্কে প্রতিবেদন দিবে। (২) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে।

অর্থ্যাৎ এ সকল প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন কেবলমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ। (৩) সাংবিধানিক প্রশাসনিক একাংশ ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদের কার্য পরিচালনার নিমিত্তে গ্রামীণ বা পল্লী প্রশাসন (Rural Administration) ও নগর বা শহর প্রশাসন (Urban Administration)- এ দুশ্রেণীর প্রশাসনিক অধিক্ষেত্র সমূহের জন্য দুটি সাধারণ কর্মকাঠামো থাকবে। উহাদের একটি হলো Local Government Urban Set-up ও অপরটি Local Government Rural Set-up। এ কাঠামোয় BCS (Urban Administration) ও BCS (Rural Administration) নামের দুটি সাধারন ক্যাডার সার্ভিস গঠন করে বিদ্যমান ব্যবস্থায় সরকারের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাগণকে উহাদের অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সার্ভিসসমূহ পূণর্গঠণ করা যেতে পারে। (৩) সংবিধানদৃষ্টে আইনসভা, নির্বাহী বিভাগের অন্তর্ভূক্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভা, প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ ও অ্যাটর্নী জেনারেল, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং কর্ম কমিশনের কার্য ব্যতীত রাষ্ট্রের অপর সকল কার্যই স্থানীয় সরকারের অন্তর্ভূক্ত হবে।

সুতরাং প্রচলিত ব্যবস্থায় দেশের সাতটি বিভাগীয় অধিক্ষেত্রে অবস্থিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহের কার্যাবলী স্থানীয়ভাবে পরিবীক্ষন, পরিদর্শন, মূল্যায়ন ও কর্মচারী ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার ০৭-জন সংসদ সদস্য নিয়োজিত করা যেতে পারে। তাঁরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ০৭-টি বিভাগে দায়িত্ব পালন করবেন এবং উক্ত মন্ত্রণালয়ে তাদের সমন্বয়ে জাতীয় স্হানীয় সরকার পরিষদ নামে একটি Mini Cabinet থাকতে পারে। তাতে বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সদস্য রাখা যাবে। এ ব্যবস্হা সরকারের নীতি নির্ধারণে সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। স্থানীয় সরকার অধিক্ষেত্রে কর্মরত বিভিন্ন সার্ভিসের সহায়তা প্রদান ও কর্মী ব্যবস্থাপনার জন্য বিদ্যমান অধিদপ্তর সমূহ উল্লেখিত স্থানীয় সরকারের বিভাগীয় প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে আত্মীকৃত হবে।

(৪) কেন্দ্রীয় সরকারের কার্য হবে সংবিধানের অধীনে প্রণীত আইন মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সকল বিধি-বিধান, নীতিমালা ইত্যাদি প্রণয়ন এবং তদানুযায়ী কার্য নির্বাহের নিমিত্তে নির্দেশনা প্রদান। স্থানীয় সরকারের কার্যাবলী সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণ (পরিবীক্ষন, পরিদর্শন, মূল্যায়ন) ও সহায়তা প্রদান। জাতীয় বাজেট ও আইন প্রণয়নে আইনসভাকে সার্বিক সহায়তা দান। জনগণ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান করা ও বৈদেশিক সম্পর্ক সুরক্ষা । রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ অনুসারে রাষ্ট্রের কার্যবিধান ও জনগণের মৌলিক অধিকার সমূহ সংরক্ষণ।

আলোচনাটা একটু দীর্ঘ হয়ে গেল। সামগ্রিকভাবে পরিকল্প নির্দিষ্ট করে কল্যাণমূখী ও সমন্বিত সংস্কারের আওতায় বিষয়টি নিয়ে আসার জন্যই এতগুলো কথা বলা। ১৫। এবার আপনি বিভাগীয় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসলেন। এটা অনেকটা ইতোপুর্বে উত্থাপিত গভর্নর, স্টেট বা প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

তবে আপনার প্রস্তাবে বিদ্যমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারন হিসেবেই এসেছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সমূহের স্থানীয় সার্ভিসগুলো এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারের অন্তর্ভূক্ত করে পুণর্গঠণ করা হলে কেন্দ্রে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা ও মাথাভারি প্রশাসন কাটছাঁট করা সম্ভব হতে পারে। আপনি কি আমার সাথে একমত পোষন করেন? উত্তরঃ হ্যাঁ। আপনি যথার্থ অনুধাবন করেছেন। পরিবর্তনের এ যুগে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।

উন্নত বিশ্বে অনেক আগেই তারা সে কাজটি করে নিয়েছেন। সেজন্যেই তাদের অগ্রগতি ও উন্নয়ণ এগিয়ে গেছে। আমরা আমাদের বিদ্যমান ব্যবস্থাটাকে একটু সম্প্রসারিত করে সংবিধান মোতাবেক স্থানীয় সরকারকে পূণর্গঠিত করার মাধ্যমেই সুফল পেতে পারি। তাতে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণ এবং সূস্থ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে। ঔপনিবেশিক ভূত আমাদের পিছু ছেড়ে পালাবে চিরতরে।

১৬। আপনার নতুন ধারণাটা হলো স্থানীয় সরকার বিভাগের ০৭-টি সম্প্রসারিত আলাদা দপ্তর- যা দেশের ০৭-টি বিভাগীয় আধিক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-দপ্তর হিসেবে কার্যকর হতে পারে। একজন করে প্রতিমন্ত্রী এ দপ্তরের নির্বাহী প্রধান থাকবেন। সরকারের অন্যান্য মন্ত্রনালয়/বিভাগের রাজধানী কেন্দ্রীক অধিদপ্তর/পরিদপ্তরগুলো স্থানীয় সরকারের এ যুগ্ম-দপ্তরের সাথে একীভূত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার অধীন হয়ে যাচ্ছে।

এটা কি সম্ভব? উত্তরঃ হ্যাঁ, অন্তত: সাংবিধানিক অভিপ্রায় তা-ই। বিষয়টি আমি পূর্বেই ব্যখ্যা করেছি যে, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের কার্যই স্থানীয় সরকারের কার্য। ঔপনিবেশিক স্বার্থে গড়ে উঠা এবং সেই ধ্যান-ধারণায় চলে আসা বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার করে সরকারের সার্ভিস সমূহ পূণর্গঠন করার বিষয়টি সুশিল সমাজ, অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গসহ সচেতন জনগনের প্রানের দাবী। ক্ষমতা কেন্দ্রে পুঞ্জীভূত রেখে সরকারের কার্যসমূহ জনস্বার্থে সুষ্ঠুভাবে চালানো যে সম্ভব নয়, তা সকলেই অনুধাবন করেন। তাই বিভাগীয় পর্যায়ে স্হানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবিত সম্প্রসারিত দপ্তর সংস্থাপন দ্বারা তাতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ সমূহের অনুবিভাগ (Wing) সম্প্রসারনের মাধ্যমে রাজধানী কেন্দ্রিক ব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসে কার্যকর জনসেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব।

এখানে সরকারের সকল কাজের সমন্বয়, পরিদর্শন, মূল্যায়ণ ইত্যাদি সহজ হয়ে যাবে। সময় বাঁচবে এবং জবাবদিহীতা বাড়বে। এ দপ্তরে সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে সাচিবিক দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। তিনি পূণর্গঠিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ক্যাডার সদস্যভূক্ত কর্মকর্তাবৃন্দ ও নিয়োজিত অন্যান্য কর্মচারীদের দ্বারা তার দাপ্তরিক দৈনন্দিন কার্য নির্বাহ করবেন। অধীনস্হ জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের কার্যাবলী সংশ্লিষ্ট স্ব-স্ব অনুবিভাগের মাধ্যমে তদারকি ও সমন্বয় করা সহজ হয়ে যাবে।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এখানে সমন্বয়সভা, আইন শৃংখলা বিষয়ক সভা, উন্নয়ন বিষয়ক সভা, পরিকল্পনা সভা, বাজেট সভা, নীতি নির্ধারণ বিষয়ক সভা- ইত্যাদি সভানুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের কাজকে আরো গতিশীল ও নিখূঁত করা যাবে। ইউনিটারী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকার সরকারের ভেতরে আর একটি সরকারী ব্যবস্থা নয়। এটিই সরকারের মূল অংশ- যা জনগনের নেতৃত্বে সরকারের জনসেবার সকল কার্য নিষ্পন্ন করবে। সুতরাং প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রচলিত মাঠ প্রশাসনের কার্য সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার দ্বন্ধ বা সাংঘর্ষিক বিষয় থাকতে পারে না। এছাড়া প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় স্হানীয় সরকার প্রশাসনের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণও যৌক্তিকভাবে অটুট থাকবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।