আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংরেজী ভিক্ষা চাওয়ার ভাষা কর্মের ভাষা নয়

আমি আমার মতো

এটি মাসকাওয়াথ আহসান ভাইয়ের একটি লেখা। ভাল লাগলো তাই সবার সাথে শেয়ার করলাম। এটি তার ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। by Maskwaith Ahsan on Friday, November 19, 2010 at 6:12pm ঢাকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং তদীয় স্কুল ড্রেস বা স্টেশনারী দোকানের বিকাশ মনোমুগ্ধকর। ইলাস্টিকা এবং এই ঘরানার অন্তসারশূণ্য শিক্ষার দোর্দন্ড প্রতাপ ঢাকা সমাজকে বিলাতী ইদুর দৌড়ের এক কপি র‌্যাট সমাজে পরিণত করেছে।

এইসব স্কুলের প্রধান শিক্ষিকারা প্রধানত ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইংরেজীর বেওউলফ সাজ্জাদ হোসাইন এবং তদীয় নিওএলিটিজমের ছাত্রী। তারা চমতকার ইংরেজী বলেন, পরিমিত সাজেন। এরা ঢাকা নগরীর ভবিষ্যত নির্ধারণের কাজটি জোরে শোরে করেছেন। ঢাকা ইংরেজীর মনোপলি সাজ্জাদ হোসাইন ঘরানার নিও এলিটেরা ইংরেজী পত্রিকা খুলে ইংরেজীর চসারীয় ভাষার বিকাশ বেগবান করেছিলেন। সাজ্জাদ হোসাইনের ছাত্ররা ধণুক ভাঙ্গা পণ করেছিলেন ইংরেজীর রাজনীতিটা ডিফিকাল্ট করে দেবেন।

ঢাকার স্কুল,পত্রিকা,টিভি নিউজ আর কফি শপে যেসব ইংরেজী বর্ষিত হয় তা আমার কাছে দুর্বোধ্য। ইংরেজীতে দুর্বলতার কারণে হতে পারে। সিএনএন বিবিসির জানালা খোলার আগে পর্যন্ত আমরা আমজনতা বুঝতে পারিনি ইংরেজী ব্যাপারটা এত কঠিন কিছু নয়। কারণ ঢাকার নব্য ইংরেজী শিক্ষিত গার্ডিয়ানরা উঁহু উচ্চারণ হচ্ছে না, প্রিপসিশন ঠিক নেই বলে নাক কুঁচকে আমজনতাকে ভয় পাইয়ে দিলেন। তবে ঢাকা ইংরেজীর দার্শনিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ছাত্রদের কাউন্টার হেজিমনি চলছে ইংরেজী মিডিয়ায়।

রেডিওর ডিজেগুলো সদয় হলে দুহাজার একুশের ঢাকা ইংরেজী গোলক মাতাবে। ইংরেজীটাকে গুলশান বারিধারার এপার্ট মেন্ট গুলোর স্টাডি রুমে,লিভিং রুম কমেডিতে আটকে রেখেদিলেন সাজ্জাদ স্যারের ছেলে মেয়েরা। দেশে বিদেশে অনেক সৎ সফল দেশপ্রেমিক ষাটোর্ধ মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে যারা সাজ্জাদ হোসাইনের ধমক খেয়ে সমাজবিজ্ঞানী বা অর্থনীতিবিদ হয়েছেন। উনারা ঢাকা ইংরেজীর পেডাগগ সাজ্জাদ হোসাইনের সফল ছাত্রদের চেয়ে ভালো ইংরেজী লেখেন, সেগুলো নানা দেশে জার্নালে ছাপা হয়। আর সাজ্জাদ হোসাইনের ছাত্রের দৌড় তদীয় স্কুল ম্যাগাজিনে বোরিং বাণী চিরন্তনী অথবা তদীয় তিনহাজার কপি সার্কুলেশনের পোস্ট এডিটোরিয়ালে।

ধাকার ইংরেজীর গার্ডিয়ানরা দর্শনের ধার ধারেন না, কৌটীল্য কথা তাদের প্রিয় বিষয়। কিভাবে যেন মধ্যবিত্তের টাকাগুলো স্কুল স্কুল থমথমে গম্ভীর খেলা খেলে নিজের স্টেশনারী দোকানের কাবুলিওয়ালা হয়ে যায়। মুসলমান বাঙ্গালী ব্যবসায়ী বুদ্ধি কাবুলিওয়ালার মতো। ইংলিশ মিডিয়ামের কাবুলীওয়ালারা মিনিকে আদর করে কিন্তু মিনির সৎ পেশার বাবাকে অসততার আত্মহননে ব্রতী করে। কারণ মিনির মা চায় মিনি কাবুলীওয়ালীদের মত টেবিলে কাঁটাচামচ মারা ঠক ঠক করে ইংরেজী বলবে।

এদের ব্যবসা চলবেই। মিনি গরীব মানুষকে ঘৃণা করার শপথ নিয়ে একজন গোল্ড ডিগার হিসেবে বের হবে। ঢাকার ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার মান ভালো হলে একজন অরুন্ধতী রায়ের দেখা পেতাম বুক রিডিং এ। পেলাম মেটেরিয়ালিস্টিক ইনসেনসিটিভ ইনসাফারেবল ডিজুস। কিচির মিচির করে অনেক কথা বলে।

সোলাইমান নবীর গুণাবলী অধমের নাই তাই বুঝতে পারিনা। ইংরেজী বিভাগের বারান্দায় এমেরিকান সিটকম ককনী দিয়ে মিনি হা হা হা করতো, এখন দাতা পশ্চিমা আড্ডায় কথা শুরুই করতে পারেনা। কারণ তথ্য নাই,ভাষা দিয়ে কি হবে। অনেকেই কেন অনুদান দরকার তা ব্যাখ্যা করতে পারেনা,ফাম্বল করে, কিন্তু টাকা চাওয়ার সময় ঘন্টায় আইসিই ট্রেন স্পিড। অর্থাৎ কাবুলীওয়ালা শিখিয়েছে ইংরেজী ভিক্ষা চাওয়ার ভাষা কর্মের ভাষা নয়।

বেসরকারী সংস্থাগুলোতেও মিনিদের নেটোয়ার্ক, মফিজ ফিল্ডোয়ার্ক করবে, মিনি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্টেশন করবে, কারণ মিনির বস কাবুলীওয়ালা ম্যাডামের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। মফিজকে মিনির ডেঢোয়াইট বোরিং ম্যাম প্রান্তিক মনে করে। ঢাকার ক্ষুদ্র ইলিউমিনেত্তি কপি সমাজ ২০২১এর রহমান বাহাদুর খেতাবের জন্য পড়ি মড়ি করে ইংরেজী শিখছে আর কাজের বুয়া ড্রাইভারকে বকা ঝকা করে অথরিটি জাহির করছে। ড্যাডি মাম্মিকে দেখে শিখছে। আমাদের মিনি বাংলা কইতে পারেনা, এই আনন্দে মিনির নানী দিশেহারা।

মিনিদের লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস বা এম আইটিতে কোন অর্জন দেখিনাই। মিনির চোখে যারা মফিজ তারাই গবেষণা করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। মিনির ঢাকায় থাকতে একটা ফেক এমেরিকান একসেন্ট তৈরী হয়, হার্ভাডে গিয়ে সেইটা ধরা খেয়ে যায়। টিচার ভাষা খোজেনা মামনি কনটেন্ট খোঁজে। তখন মিনি একটা এভারেজ গ্রেড নিয়ে কিছু একটা করে।

ফেসবুকে খান বাহাদুর দাদার গপ্পো ফাঁদে। মিনি প্রতিশ্রুতিশীল ছবি আপলোড করে আর সফল কাজিনদের গপ্পো বলে ফেসবুকে ডেস্পারেট হাউজ ওয়াইফ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্ট করে। হার্ভার্ড মফিজ মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখে,কিন্তু গবেষণার চাপে মাথা তুলতে পারেনা। মিনির জন্য ফেসবুকমফিজ অপেক্ষা করে বইমেলায়। ঢাকার কাবুলীওয়ালা স্কুলের রিইউনিয়নে মিনির টপ নচ বণিকপুত্ররা স্কচ ক্লান্ত মেট্রোসেক্সুয়াল জেল্লা নিয়ে হাজির হয়।

মফিজের ছোটভাই রিপোর্ট করে তারার আলোয় কাবুলীগ্রামার। ঢাকা গ্রাইন্ড। মধ্যবিত্ত গৃহিণীরা বাচ্চা কনসিভ করার পরপরি কাবুলীস্কুলে ভর্তির রেজিস্ট্রেশন করিয়ে ফেলে। ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার এই মধ্যবিত্তের সঞ্চয় লুন্ঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বামপন্থী উদবেগকে আমরা পাত্তা দিইনি। ফলাফল এমিরিকা ক্যানাডার সপনে বিভোর সমাজ এখন ইংরেজী শেখার জন্য ঘুষ খাচ্ছে,ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে, মিনিরা মানুষকে হিন্দু-মুসলমান, ধনী গরীব, ফর্সা-কালো, শিক্ষিত আশিক্ষিত,হট খ্যাত ইত্যাদি বিভাজন সুত্র শিখে একএকজন তালগাছন্মন্য স্নব হিসেবে বের হচ্ছে।

এদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আদিখ্যেতাপূর্ণ, হিপ্সশটার ট্রাউজার পশ্চাদ দেশ উন্মুক্ত করছে। টাচ স্ক্রীণ মোবাইল, গেমস, আইপড শো অফ, টিশার্টে মানে না বুঝে চে গুয়েভারা বা কোন রকস্টারের বাণী চিরন্তনী, আই এম ডিফরেন্ট এই কথাটা কিভাবে ডিসপ্লে করবে তা ঠিক করতে করতেই আমরা বোর ফিল করি। এদের পছন্দের রঙ ফেরারী রেড। এই লেখার মাঝে ইংলিশ মিডিয়ামের কোন ছাত্র ছাত্রী যদি অতিরঞ্জন খুঁজে পান আমি অবাক হবো না। কারণ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোর পাইওনিয়ার দের মাঝে সোশ্যাল সায়েন্সের প্রতি দর্শনের প্রতি এমনকি বিজ্ঞানের প্রতি কোন আগ্রহ নাই।

শুধু ইংরেজী বলা শেখার জায়গা। এখন তিনটে লিংক দিয়ে বলবেন তিনজন জিপিএর গ্র্যান্ড মাস্টার হয়েছে। ছাগল নাইয়া বা ভুরুঙ্গামারীর লোক নাসাতেও আছে জন হপকিনসে আছে কোথায় কোথায় আছে অস্ট্রিচদের কল্পনাতেও তা নেই। ইংলিশ মিডিয়াম কালচারের নীট ফল অপভ্রংশ বেংলিশ অধুনা রেডিওর ডিজেদের পশুপাখিসুলভ বাচ্চা। চোখের সামনে দেবশিশুগুলো ওরাং ওটাং হয়ে গেলো, ডারুইনের ভাবশিষ্যরা এই বিষয়ে উলটো বিবর্তন গবেষণা করলেন না।

দৈবচয়নে ঢাকার দশজন ইংলিশ মিডিয়াম দশজন বাংলা মিডিয়ামের বাচ্চাদের মনোসমীক্ষকের কাছে পরীক্ষা করালে বুঝবেন যোগাযোগের ক্ষেত্রে কি ধরণের ব্লকেজ বাংরেজদের তৈরী হয়েছে। বস রোমান পোলানস্কি না হলে এইসব বাচ্চার চাকরী ক্ষেত্রে ভালো করা কঠিন। কারণ ইংলিশ চাতুরী দিয়ে বোকা বানানোর কর্পোরেট যুগ শেষ। নাউ উই মিন বিজনেস। স্মার্ট নেসের অন্তসারশূণ্য আরবান ফোক বিচিং সমাজের অচল সোপ অনেক দেখলাম।

এবার একটু কনটেন্ট আর সাবসস্ট্যান্স নিয়ে বিতর্ক করতে চাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।