মহাজাগতিক সংস্কৃতির পথে .. ..
এই শিরোনামটিকে হয়তো কোন গল্প বা সাহিত্যের বলে ভুল হতে পারে, তাই আগেই বলে নিচ্ছি বিষয়টি বিজ্ঞানের (মহাজাগতিক) একটি ঘটনা নিয়েই। বিষটি আরও আগে সবার সাথে শেয়ার করার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু এই ব্লগে মাত্র কিছুদিন হলো লেখা শুরু করেছি। ঘটনার নায়ক সূর্য আর ঘটনাটা সূর্যগ্রহণকে ঘিরেই।
যারা মহাজাগতিক বিভিন্ন ঘটনার ব্যাপারে আগ্রহী তারা হয়তো জেনে থাকবেন প্রতি বছর ১/২ টি সূর্যগ্রহণ ঘটে থাকে, যদিও এদের সবগুলো আমাদের দেশ বা দেশের সব অঞ্চল থেকে একসাথে দেখা যাবে এমন নয়। সম্প্রতি ২০০৯ সালের ২২ জুলাই বাংলাদেশ থেকে শতাব্দীর সর্বশেষ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল, যা সমগ্র দেশের মানুষকে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল।
এছাড়া আংশিক যে সূর্যগ্রহণ গুলো ঘটে থাকে সেগুলো অতোটা আলোচনায় আসে না।
ঐ দিনের পর গত ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি আরেকটি সূর্যগ্রহণ দেখার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশ থেকে, তবে এটি ছিল একটি আংশিক গ্রহণ এবং শুধুমাত্র দেশের চট্টগ্রাম আর কক্সবাজার অঞ্চল থেকেই এটি দেখার সুযোগ ছিল। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ দৃশ্যমান (৮৮%) ছিল সেন্টমার্টিন থেকে।
অনেকে হয়তো জেনে থাকবেন ২০০৯ সালের পূর্ণ সূর্যগ্রহণটি পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন বিজ্ঞান ও মহাকাশ বিষয়ক সংগঠন উদ্যোগ নিয়েছিল। আমরও তেমনি কয়েকটি বিজ্ঞান সংগঠন: 'কসমিক কালচার', 'বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন', 'ডিসকাশন প্রজেক্ট', 'বাংলাদেশ নেচার স্টাডি এন্ড কনজারভেশ ইউনিয়ন' এর সমন্বয়ে গঠন করেছিলাম 'পূর্ণ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ কমিটি'।
এই কার্যক্রমের বিস্তৃতির জন্য আমাদের সাথে আরও যুক্ত হয়েছিল 'মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর', ছায়ানটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'নালন্দা','শিক্ষা সমন্বিত কার্যক্রম' এর মতো সনামধন্য কিছু প্রতিষ্ঠান। আমাদের লক্ষ্য ছিল এই মহাজাগতিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে আরও বেশি করে বিজ্ঞানমনস্ক করা এবং কুসংস্কার দূর করা। বেশ সফল ভাবেই দেশ জুড়ে এই কার্যক্রমটি আমরা পরিচালনা করি।
এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় আমরা উদ্যোগ নেই সেন্টমার্টিন থেকে ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি'র আংশিক সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের। বিজ্ঞান সংগঠক, পরিবেশ বিষয়ক কর্মী, শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক সহ বিজ্ঞান আগ্রহীদের প্রায ৩০ জনের একটি দল নিয়ে আমরা ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন যাবার আয়োজন করি।
আপনার হয়তো এটি্ও জেনে থাকবেন সেন্টমার্টিন হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যা সত্যিই প্রাকৃতিকভাবে বিরল। এছাড়া বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম প্রবাল, কেয়াবন, শামুক, ঝিনুক, বালিয়াড়ি, সাগরলতাসহ নানা ধরনের বৈচিত্র্যের সমাহার এখানে। সাড়ে তিন বর্গকিলোমিটারের এ দ্বীপে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার পর্যটক আসে। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এখানেও সরকারের উদাসীনতা আর আমাদের অসচেতনতা এই দুয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষের ভোগ বিলাসের জন্য এখানে নির্মিত হচ্ছে দালান কোঠা-হোটেল-আরও কত কি! যা সত্যিই পুরোপুরি অবৈধ। (বলে রাখা ভাল মহামান্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ এরও সমুদ্র বিলাস নামে একখানা বিলাস বহুল বাসগৃহ রয়েছে এখানে, তো সাধারণ পাবলিকের আর দোষ কোথায়?) মাত্রাতিরিক্ত পর্যটক উপস্থিতির পাশাপাশি তাদের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডে দ্বীপটির পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও আবর্জনা সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে।
তই বলা যায় জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের আগেই মানুষের হস্তক্ষেপে সবুজদ্বীপ সেন্টমার্টিন নষ্ট হওয়ার সব রকম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। (১৯৭২ সালে ১১২ জনের বসতি থাকলেও বর্তমানে রয়েছে প্রায় দেড় হাজারের অধিক পরিবার; জনসংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের অধিক। )
এসব বিবেচনায় আমাদের সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের কারণে সেন্টমার্টিনের যাতে বিন্দৃমাত্র ক্ষতিসাধন যাতে না হয় সে ব্যাপারে সব রকমের সাবধানতা অবলম্বন করি এবং সকলকে অবহিতও করি। যদিও যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ (যাদের অধিকাংই সম্পূর্ণরূপে পরিবেশ সংরক্ষণে অসচেতন) যাতায়াত করছে, রাত কাটাচ্ছে সেখানে মাত্র ৩০ জন মানুষ নগন্য্। তারপরেও বিজ্ঞান সচেতন হিসেবে আমরা পুরোমাত্রায় সজাগ ছিলাম নিজেদের আচরণ সম্পর্কে।
কিন্তু ১৫ জানুয়ারির মাত্র ৪দিন আগে হঠাৎ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমাদের প্রত্যেক সংগঠনের পরিচালকদের বরাবর একটি করে চিঠি পাঠানো হয় এবং ডেইলী স্টার পত্রিকায় একটি গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় যাতে উল্লেখ করা হয়েছিল আমরা যেন সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের জন্য সেন্টমার্টিন না যাই। যেখানে প্রতিনিয়ত হাজার পর্যটক যথেচ্ছ ভ্রমনের নামে, রাত কাটানোর নামে কিংবা ইট-পাথরের ইমারত নির্মাণের নামে সেন্টমার্টিন ধ্বংস করছে সেখানে সরকারের কোন প্রকার মাথাব্যাথা নেই কিন্তু কিছু বিজ্ঞান কর্মীদের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি তাদের কাছে মনে হলো পরিবেশের জন্য হুমকি! আমরা যারপরনাই বিস্মত হয়ে গিয়েছিলাম। একই সাথে ফোনের মাধ্যমেও সকলকে সতর্ক করে দেয়া হয়। আর ঐ দিন সেন্টমার্টিনে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় সম্ভাব্য পর্যবেক্ষণ ঠেকানোর জন্য্। বিজ্ঞান চর্চা ও বিকাশের নামে আমরা যখন তৎপর তখন নির্দিষ্ট মহলের এই অপতৎপরতায় নির্লিপ্ত হয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কিইবা করার থাকে? সত্যিই সেলুকাস, বিচিত্র এই দেশ!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।