আমার ল্যাজটা একদম সোজা এই মুহূর্তে যারা জামায়াত বা যদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করছে তাদের মধ্যে দুই ধরনের মানুষ আছেঃ
ক. একদল আছে যারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। দুনিয়ার সব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ভালোই আছে। তারা নিয়মিত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
খ. আর একদল আছে যারা পিছয়ে পড়া দরিদ্র শ্রণীর মানুষ। যারা আধুনিক শিক্ষা পায় না।
যাদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তারা কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যাহার করতে ভয় পায়। যে ৪টি ইসলামী দল ধর্ম বিরোধী কাজের অভিযোগে ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে গণমাধ্যমে দেওয়া সেই ৪টি দলের নেতাকর্মীদের সাক্ষাত্কারেও বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
যারা সচেতন তারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের জেনেছে গত কয়েক দিনের সহিংসতায় যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে পুলি নিরীহ পথচারী এবং আওয়ামী লীগ কর্মীও আছে। ৭৭ জনের সবাই জামায়াত-শিবিরের নয়।
অথচ বিএনপিসহ সব জামায়াতপন্থীরা অনবরত ৭৭ জনকেই জামায়াত পক্ষীয় বলে প্রচার করে যাচ্ছে। সচেতন যারা তারা বুঝতে পারছে এটা মিথ্যাচার, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য প্রপাগান্ডা। কিন্তু ঐসব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এদের মিথ্যাচারে প্রভাবিত হচ্ছে।
যারা জেনে বুঝে এসব মিথ্যাচার করছে তারা নিরাপদে থেকেই এটা করছে। যারা নিহত হয়েছে তাদের দেখলেই বুঝা যাচ্ছে তারা অতি সাধারণ পিছিয়ে পড়া দিরদ্র মানুষ।
নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জ্ঞান পাপীরা এসব সাধারণ মানুষের অজ্ঞানতাকে কাজে লাগাচ্ছে। যদি দেশে এরূপ পিছিয়ে পড়া এটা মানুষও না থাত তাহলে আজ এই সহিংস পরিস্থিতি আমাদের দেখতে হত না। কেননা যারা ধর্মকে ব্যবহার করে অনবরত মিথ্যাচার করে যাচ্বাছে তাদের পক্ষে মাঠে লড়াই করার কাউকে পাওয়া যেত না।
শাহবাগের আন্দোলন থেকে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি এসেছে। অনেক রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবীও এ দাবির সঙ্গে একমত।
এই ধরনের জামায়াত ঘরনার রাজনীতির মূলভিত্তি মানুষের অজ্ঞানতা। যদি এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যদি পিছিয়ে থাকে তাহলে তাদের ব্যবহার করার জন্য নতুন আর একটি দল তৈরি করতে খুব একটা অসুবিধা হবে না।
আর অন্যভাবে বলা যায়, স্বাধীন দেশ এক ধরনের শিশু-যুবরা অত্যাধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে আর এক ধরনের শিশু-যুবরা পিছিয় থাকছে। এটা এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করছে। যা থেকে সংঘাতের উদ্ভব হয়।
সারাদেশে যদি একই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকত তাহলে কি স্বাধীনতার এত বছর পরে স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে মিছিল করার লোক পাওয়া যেত? নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থানেও সারাদেশে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা করার দাবী করা হয়েছিল। নব্বইয়ের তরুণদের সে আন্দোলনের উপর ভর করে যারা ক্ষমতায় এসেছে তার সেই দাবী বাস্তবায়ন করেনি। বিভিন্ন সময় নির্বাচনী রাজনীতির দুর্বলতার কারণে সারাদেশে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি পশ্চাদপদ শিক্ষাব্যবস্থাও চালু আছে।
রাজনীতিবিদদের দিয়ে হবে না। বুদ্ধিজীবীরা সব দলীয় লেজুড়বৃত্তিতেই ব্যাস্ত।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য তরুণদের যেভাবে মাঠে নামতে হয়েছে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আলোর পথে আনতে রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবীদের ওপর ভরসা না করে তরুণদেরই মাঠে নামতে হবে। যারা অগ্রসর, আলোর পথের যাত্রী তারাই শাহাবাগের যুগান্তকারী আন্দোলন তৈরি করেছে। যারা সচেতন তারাই শাহবাগের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অজ্ঞানতা দূর করতে অগ্রসর, আলোপথ যাত্রী, সচেতনদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।
যদিও এই কাজটি করার দায়িত্ব সরকারের।
তবে আমরা দেখেছি সরকারি কাঠমোতে নানা দুর্বলতা আছে। ফলে শুধু সরকারে ওপর নির্ভর করলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য নাও আসতে পারে। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াই আমাদের সামনে জলজ্যান্ত প্রমাণ। সারদেশে চলমান যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আন্দোলন থেকে দল বেধে দেশের সকল স্কুল কলেজে জনসংযোগ শুরু করা দরকার। ব্লগ, ইটানের, কম্পিটার বিষয়ে গণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।
সব মানুষকে কম্পিউটার ইনটারনেট ও ব্লগ সম্পর্কে বোঝানো দরকার। এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়টিকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা দরকার। সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যবস্থাপনায় গণ প্রশিক্ষণ আয়োজন করা যায়। দেশব্যাপী সরকারের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের যে কাঠামো আছে তরুন প্রজন্মের সহায়তায় সেই কাঠামোটি ব্যবহার করে বয়ষ্ক শিক্ষা, গণশিক্ষার মতো বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনা যায়।
সরকার বা রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবীদের ওপর ভরসা করে এ কাজটি ফেলে রাখলে হয়ত আবার কোনো একদিন তরুণদের ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেত হবে এই দাবি নিয়ে যা কিনা এখনই সম্পন্ন করার সঠিক সময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।