আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভবিষ্যতের কম্পিউটার:কোয়ান্টাম কম্পিউটার

সুস্থবিজ্ঞানের চর্চা করতে চাই

"ধপাস করে আজমল সাহেব বিছানায় শুয়ে পড়লেন। সাথে সাথে তার বিছানাটি একটি বিপজ্জনক সংকেত দিয়ে সার্ভারে জানিয়ে দিল তার প্রভুর শরীর অনেক খারাপ। কারন তার হার্টবিট অনেক বেড়ে গেছে। একমিনিটের মাথায় এম্বুলেন্স এসে হাজির। এম্বুলেন্সটি শরীরে সব ধরনের আগা টু গোড়া তথ্য নিয়ে নিল বিছানা থেকে।

তারপর তার ব্যাংক একউন্টটি চেক করেই নিয়ে গেল সবচেয়ে কাছের হাসপাতলে। ডাক্তার দ্রুত এসে রোগীর সব ইতিহাস দেখে নিল সার্ভার থেকে এবং রোগীর আপন জন কে বলে দিলেন যে অতিরিক্ত চর্বিই তার হার্টএট্যাকের কারন। তার সসপেন হয়ত কোন কারনে এটি ধরতেই পারেনি। কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে গেলেন সেই রোগী আজমল সাহেব। বাসায় ফিরে যাবেন আজ।

" সাইন্স ফিকশন মনে হচ্ছে তাই না। আমাদের মনে রাখতে হবে আজকের সাইন্স ফিকশন আগামী দিনের বাস্তব। সাইন্স ফিকশন ছাড়া কে ভেবে ছিল যে মহাকাশযান তৈরী হবে, চাঁদে মানুষ যেতে পারবে, কম্পিউটার তৈরী হবে। সে যাই হোক আজ আমার আলোচনার বিষয় হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। জিনিসটা কি? হুম খুবই গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন।

উইকিপিডিয়ার ভাষায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার হল এমন এক ধরনের কম্পিউটিং ডিভাইস যা কোয়ান্টাম মেক্যানিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গিতে (যেমন সুপারপজিশন এবং এনটানগ্লিমেন্ট) ডাটা অপারেশন করতে পারে। আমাদের ট্রাডিশনাল ট্রানজিস্টর বেসড সিস্টেম থেকে সর্ম্পুন আলাদা। মুলত এটি কোয়ান্টাম মেক্যানিক্যালএর সূএ গুলো ব্যবহার করে ডাটা অপারেশন করতে পারে। এর থিওরীটিক্যাল মডেলটির নাম হচ্ছে কোয়ান্টাম টিউনিং মেশিন। বাহ্যিক দিক থেকে হয়ত কেউ এই কম্পিউটারকে আলাদা দেখবে না ।

কিন্তু যখন এই কম্পিউটিং এর বিট বাইট এর কোন হিসাব পাবেন না তখন বুঝতে পারবেন আমরা কি ব্যবহার করছি? আসলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারেও বিট থাকে যাকে আমরা কোয়ান্টাম বিট বলতে পারি। একটি ভিডিও দেখুন। ট্রানজিস্টর বেসড সিস্টেমে কম্পিউটারে বিদুৎ থাকা না থাকার উপর এ বিট নির্ধারিত হয়। আর একটি ট্রানজিস্টর একক সময়ে একটি অবস্থায় থাকতে পারে। হয় ০(অফ) বা ১(অন) তাই ট্রানজিস্টরের পরিমানের উপরই নির্ভর করে কম্পিউটারের ক্ষমতা।

কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার অন্যরকম কারন এটা কোয়ান্টাম মেকনিক্স একটি সূএ ব্যবহার করে যার নাম হচ্ছে সুপারপজিশন। এ সূএটি ব্যাখ্যা করে কিভাবে তরঙ্গ যেমন বিদুৎ বা শব্দ একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়ত করে। তো সে সূএের উপসংহার অনুযায়ী(সূএটি দেখে নিন) একটি কোয়ান্টাম বিট ০এবং ১ দুটো বিটকেই একক সময়ে ধরে রাখে পারে। যেমন ধরা যাক একটি ৮ বিট কম্পিউটারে ২৫৬ রকম পজিশন থাকতে পারে একক সময়ে তো ৮ বিট এর কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেই ২৫৬ কিউবিট(কোয়ান্টাম বিট) পজিশন থাকে একক সময়ে। একটি ৩০ কিউবিট কোয়ান্টাম কম্পিউটার বর্তমানের ১০টেরাফ্লপস(ট্রিলিয়ন হিসাব নিকাশ প্রতি সেকেন্ডে)গতির কম্পিউটারের সমান কাজ করতে পারে।

চিন্তুা করুন আপনার কম্পিউটার কি ক্ষমতা হতে পারে। চিএ: কিউবিট এর গঠন কেন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং দরকার? মুরস’ল আমাদের বলে যে প্রতি ১৮ মাস পরপর প্রসেসরএ ট্রানজিস্টরের পরিমান দ্বিগুন হবে (এটি কিন্তু কোন অনুমান নয় নিখাদ সূএ)। বর্তমানে ভিএলএসআই(VLSI) বা ইন্টিগ্রেশন কারনে এই সূএ বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে কিন্তু একটি নিদিষ্ট সময় পড়ে এই সূএ আর হয়ত কাজে লাগবে না যদি না ইন্টিগ্রেশনের কোন নতুন সূএ আমরা দাড় করাতে পারি। সময়টি হতে পারে ২০২০ বা ২০৩০ সাল। কারন তখন আমাদের এই প্রসেসর গুলোর ট্রানজিস্টর হতে হবে পরমানুর আকৃতি।

আর তখনই বের করতে হবে বিকল্প কিছু। তাই এর সবচেয়ে উপযুক্ত বিকল্প হতে পারে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। কারা কাজ করছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে: চিএ: সর্বশেষ আবিস্কৃত কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে এখন বিস্তর গবেষনা হচ্ছে । থিওরী এবং ব্যবহারিক দুটোদিকেই অনেক বিভিন্ন রিসার্চ এজেন্সি এবং ইউনিভার্সিটি সমানে কাজ করে যাচ্ছে আর মিলিটারিরা তো আছেই। তবে কয়েকটি সাফল্য পেয়েছে এমআইটি, লসআলহামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি(Los Alamos National Laboratory)।

আইবিএম এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক তৈরী করেছে শোর এলগরিদম(Shore Algorithm)। আর কতদুর যেতে হবে: অনেক অনেক দুর যেতে হবে বাস্তবে এটি পেতে হলে। সর্বশেষ খবর হচ্ছে ১৬কিউবিট এর একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিস্কার হয়েছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি তা হল এর এলগরিদম। সঠিক ক্যালকুলেশনের এলগরিদম এখন তৈরী হয়নি।

তবে বিজ্ঞানিরা কিন্তু এখন ক্ষান্ত দেননি। কারন তারা বলছেন এই প্রযুক্তি মাএ শুরু হয়েছে। আসলে এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাধারন মানুষদের এখনই মাথা ঘামাতে হবে না। কিন্তু আমরা চাই উপরের আজমল সাহেবের মত কিছু বুদ্ধিমান বিছানা আর বুদ্ধিমার এমবুলেন্স আর তা হয়ত সম্ভব হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মত বিশাল প্রসেসিং ক্ষমতার কম্পিউটার দ্বারা। সূএ:wikipedia.org, howstuffworks.com youtube.com


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।