আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই দ্বীপরাজ্যের গল্প যখন আমাদের আঁড়িয়াল বিলেঃ রাষ্ট্রকে দাঁড় করানো হচ্ছে জনগনের বিরুদ্ধে

স্বপ্ন ছুঁয়ে

একটা গল্প খুব মনে পড়ছে। এক দ্বীপ রাজ্যে ছিলেন এক রাজা। তো হঠাৎ একদিন তার খেয়াল হল, তার রাজ্যকে তিনি আরো আধুনিক বানাবেন, এখানে থাকবে সুসজ্জিত ভবন, আসবাব সামগ্রী সহ আরো বিলাসের উপকরন। এগুলোর জন্য চাই অনেক কাঠ। দরকার হলে সব গাছ কেটে ফেল, রাজহুকুম জারি হল।

বয়স্করা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে সাবধান করতে চাইলেন রাজাকে, সাধারন মানুষ হল আতঙ্কিত। কিন্তু রাজার আভিজাত্য আর দাম্ভিকতা বলে কথা! সাধারনের কথা শুনে রাজা তো আর পিছিয়ে আসতে পারেন না, এতে যে তার ক্ষমতা খর্ব হয়!!!!!! সুতরাং কাটা হল সব গাছ, পরিনতি? আবহাওয়ার বিরূপতা আর প্রকৃতির প্রতিশোধে নিশ্চিহ্ন হল সেই দ্বীপ। রাজা নিজেও কি বেঁচে গেলেন? না , তিনিও বাঁচতে পারেন নি। অনেক অহেতুক প্যাঁচাল পাড়লাম। কিন্তু প্রিয় ব্লগারগন, এই গল্পের সাথে কি আমদের দেশের কিছুটা মিল খুঁজে পাচ্ছেন? হ্যাঁ, পাওয়ারই কথা।

আড়িয়াল বিলের গল্প। আচ্ছা, সবার আগে একটা প্রশ্ন করতে চাই। আড়িয়াল বিলের বিপুল পরিমান ফসলি জমি ধ্বংস করে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে বিমানবন্দর বানানোর বিরোধিতা যারা করছেন, তাদের মূল যুক্তি হচ্ছে এই বিমানবন্দরের কোন দরকারই আমাদের নেই, কেননা বর্তমানে থাকা বিমানবন্দর গুলোরই শতভাগ দূরে থাক ৩০ শতাংশ ব্যাবহার ও নাকি হচ্ছে না। প্রশ্নটা হল ,আমাদের অতি উচ্চাভিলাষী সরকারি কর্মকর্তারা কি এখন পর্যন্ত এর উত্তরে উপযুক্ত যুক্তি সম্পন্ন কোন জবাব দিয়েছেন ? তারা কি কোন তথ্য-উপাত্ত অথবা কোন হিসাব দিয়ে দেখাতে পেরেছেন , কি ভাবে এই বিমান বন্দর আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগবে? উত্তরটা হচ্ছে, তারা এরকম কিছু জানান নি। জানাবেন কি করে, মিথ্যা কথা বলার ও তো একটা সীমা থাকা লাগবে!!!!!! যখন আমাদের অভিবাসী শ্রমিকরা একের পর এক বিতাড়িত হচ্ছেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের কূটনীতি ও পররাষ্ট্র নীতি ব্যর্থতার কারনে, যখন আমাদের কৃষকরা তাদের সর্বস্ব দিয়ে বছরের পর বছর বাম্পার ফলনের চেষ্টা করার পর ও আমরা খাদ্য ঘাটতি মেটাতে পারছি না, যখন মাসের পর মাস পদ্মা সেতুর কাজ ঝুলিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা বাড়তি ঋনের বোঝা চাপান হচ্ছে মানুষের ঘাড়ে, যখন যমুনা সেতু তে ফাটল নিয়ে চিন্তিত স্বয়ং যোগাযোগ মন্ত্রী তখন মোট জাতীয় বাজেটের প্রায় অর্ধেক টাকা খরচ করে বানান হচ্ছে এমন এক বিমান বন্দর যার কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই, সারা দেশের মানুষ যার বিরুদ্ধে এক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তবু ও আমাদের দলবাজ, চাটুকার রাজনীতিবিদেরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে আছেন এই প্রকল্পের ব্যাপারে!!!!!!! হবেনই বা নে কেন!!!!! যেখানে দশ কোটি টাকার রাস্তা বানানোয় চার-পাঁচ কোটি টাকা মেরে দেয়া যায়, সেখানে ৫৫ হাজার কোটি টাকায় কত মারা যাবে তার হিসাব করতে যে তাদের কোর আই সেভেন প্রসেসরের কম্পিউটার লাগছে!!!!!!!! আহা, কি আনন্দ!!!!!! অনেকে হয়ত হিসাব করছেন কয়টা নতুন একাউন্ট খোলা লাগবে সুইস ব্যাংকে, কারো ছেলে মেয়ে হয়ত এরই মধ্যে বায়না ধরেছেন ফেরারীর স্পোর্টস কারের!!!!!! রাষ্ট্র আর রাজনীতি কখনো সমার্থক নয়। কিন্তু আমাদের সুচতুর রাজনীতিবিদেরা এই ভুলটাই জনগনের মাথায় ঢুকাচ্ছেন তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। তাইতো আজ প্রশাসনকে নামানো হয়েছে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সংগ্রামী জনগনকে দমনের জন্য । প্রশাসন হচ্ছে জনগনের প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদ দের লোভ মেটাতে। ফলাফল কি? ফলাফল হচ্ছে জনতার হাতে নিহত হচ্ছেন পুলিশ অফিসার, আর তার বদলা নিতে পুলিশ নামছে হিংস্র কুকুরের রূপ নিয়ে।

হায়রে , ক্ষমতাবাজদের ক্ষমতা আর দলবাজির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে মরতে হচ্ছে পুলিশকে, মাকে কোলের বাচ্চা নিয়ে নেমে আসতে হচ্ছে রাস্তায়, তরুনদের স্কুল কলেজ বন্ধ করে লাঠি হাতে তাড়া করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। আর রাজধানীর সুরম্য অট্টালিকায় বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে রাজনীতিবিদেরা। গতকাল কথা হল বুয়েটের ইউ আর পি ডিপার্টমেন্টের এক ভাইয়ার সাথে। তিনি বিস্তারিত যা বললেন, তার সারমর্ম দাঁড়ায় এটা যে, ঢাকা শহরের জন্য আড়িয়াল বিল হচ্ছে সেই জোন, যা ভরাট হয়ে গেলে ঢাকায় দেখা দিতে পারে স্থায়ী এবং ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। কিন্তু এই সোজা বিষয়টা নূন্যতম নগর পরিকল্পনার জ্ঞান থাকা যে কেউ বুঝতে পারা সত্ত্বেও , সরকারের এরকম আত্বাঘাতী পরিকল্পনা দেখে অবাক হওয়াই বোধ হয় প্রথম অনুভুতি হতে পারে! সবশেষে ফিরে যাই, সেই দ্বীপ রাজ্যের গল্পে।

ক্ষমতার দাম্ভিকতায় আভিজাত্য দেখাতে গিয়ে আর নিজের জেদ বজায় রাখতে গিয়ে দ্বীপের সাথে ধ্বংস হয়েছিলেন সেই রাজাও। কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগ বলে কথা! এখন আমাদের রাজাদের আছে সুইস ব্যাংকে একাউন্ট , তাদের রাজপুত্র-রাজকন্যাদের আছে ভিনদেশে বিশাল ব্যবসা। সুতরাং আমাদের ছোট্ট, নানা সংকটে নিপীড়িত দেশটায় যদি বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠে অচল হয়ে যায় অর্থনীতি, খাদ্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারন করে, যদি ডুবে যায় এই ঢাকা শহর হাঁটু সমান ড্রেনের পানির নিচে অথবা উদ্বাস্তু হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ , বেকার হয়ে পড়ে কয়েক লক্ষ কর্মক্ষম মানুষ তাতে কিন্তু আমাদের রাজাদের প্রাসাদে আগুন জ্ব্লবে না!!!!! তাদের যে আছে বিমানবন্দর, কয় মিনিটই বা লাগবে বলুন এই হতভাগা দেশটা ছেড়ে যেতে? সুতরাং ,আমার আপনার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। দেশটা আমাদের। আমাদের মাতৃভূমি কে বিপন্ন করে তোলে এমন যে কোন পরিকল্পনা অথবা কর্মকান্ডই রুখে দিবে এ দেশের মানুষ, এর প্রমান আগেও আমাদের রাজা অথবা রানীরা পেয়েছেন, ভবিষ্যতেও পাবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।