আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কমেডি নাকি ট্র্যাজেডি

কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।

সিরিয়ালে কত তম সেটা মনে করতে পারতেছিনা !!! ট্র্যাজেডি ১ টাকা টাকা শুনলে ক্যান যেন গায়ে লাগে না। কিন্তু ডলার ডলার শুনলে ক্যামন একটা ইমেজ আসে। একটা ভাব আসে। আমি সাধারণত ফ্রিল্যান্সিং এ আর্টিকেল লিখি।

হালকা পাতলা ডলারও আসছে। আমিও যাবতীয় সমস্ত টাকামূলক কাজ যেমন টিউশানী, সেভিংস,আম্মার টুকটাক বাজার সব বাদ দিয়ে ডলারের পিছনে ব্যস্ত। ফ্রিল্যান্সার ডট কমে মোটামুটি তাই সারাদিনই ঘোরাঘুরি করি। এখানে সেখানে ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত কিছু দেখলেই ঝাপিয়ে পড়ি। একটা ওয়েব সাইট আমার চোখে পড়ল হঠাৎ।

ওখানে লেখা, ১৫ মিনিট এ স্কুইজি ওয়েবসাইট(ঐ যে ইমেইল এড্রেস জমা করে রাখে ডাটাবেইজে, নিউজলেটার পাঠানো যায়, ওগুলা) তৈরি করার টিউটোরিয়াল। এ ধরণের সাইটের ব্যাপারে আমি আগে কিছু জানতাম না। তবুও ওরে, মাত্র ১৫ মিনিট !! আমিও ধুমাধুম লিংকটা বুকমার্ক করে রাখলাম। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই দেখি ব্যপক সুযোগ। ফ্রিল্যান্সারে এক ব্যাটা স্কুইজি সাইট ডিজাইন করার জন্য লোক চাইছে।

সবাই বিড করতেছে সেখানে। একেকজন যতই বিড করুক, আমি করলাম একদম কম ডলার। আমার আর ভয় কী! আমি ত ১৫ মিনিটেই কাজটা পারব (যেহেতু আমার বুকমার্কে আছে সেই সাইট !!!)। আমি বললাম, আমার সময় লাগবে মাত্র ১ দিন। কোন ব্যাপারই না এসব! বিপুল বিক্রমে আমি সেদিন রাতে বিছানায় ঘুমাতে গেলাম।

যা দেখা গেল, দুদিন পরে ঐ প্রজেক্টের উইনার হলাম আমি। ক্লায়েন্ট আমাকে ডিসক্রিপশান পাঠিয়ে দিল। যাক বাবা, এবার ত কাজটা করার পালা। ফ্রিল্যান্সার ডট কম তার রুল অনুযায়ী আমার থেকে ৫ ডলার কেটে রেখে দিল। রাখুক গা, আমার ত ডলার পেতে বাকি মাত্র ১৫ মিনিট।

এবার, বিপুল বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়লাম। বুকমার্ক খুললাম। ওই টিউটোরিয়াল এর স্টেপ বাই স্টেপ পড়লাম। ও মাই গড !! এ কী!!!! বিভিন্ন ধানাই পানাই ইন্ট্রোডাকশনের পড়ে যুগান্তকারী স্টেপ দেয়া। স্টেপ ১ – অমুক সাইটে যান।

স্টেপ ২ – সেই পেজের পাছার দিকে একটা বই এর লিংক আছে, অইটা নামান। স্টেপ ৩ – এবার ঝটপট বইটা শেষ করে ফেলেন। ব্যাস আপনি এখন স্কুইজি সাইটের সব জেনে গেলেন। আমি পাগলের মত দৌঁড়ে(স্যরি আর উপমা পাচ্ছি না) সেই বই ডাউনলোড করলাম। হায় হায়, এই বই ২৯৪ পৃষ্ঠা।

আমি ত থতমত খেয়ে গেলাম। ও মাই গড। এখন কী হবে ! আমার একাউন্ট থেকে অলরেডি ৫ ডলার কেটে নিছে। আমি জমা দিতে না পারলে নেগেটিভ কমেন্ট দিয়ে দিবে ব্যাটা। হায় হায়! ওদিকে সময় ত আছে মাত্র ১ দিন।

সেমিস্টার ফাইনালেও এত পড়িনা গতকাল রাতে যা পড়লাম। এক্কেবারে ফালা ফালা অবস্থা। মাথা ঘুরাইতেছে। জানছি অনেক কিছুই কিন্তু কতটুকু এপ্লাই করতে পারব ধারণা নেই। ভাবলাম সময় আরও একটু বাড়াবো।

কোন একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে রাখি, অই ব্যাটার উত্তর দিতে দিতে একটু বাড়তি সময় পাওয়া যাবে। এখন ঐ ক্লায়েন্টকে মেইল দিলাম, “স্যার ডোমেইন নামের ব্যাপারে আপনি ব্যক্তিগত চয়েস দিতে পারেন। কোন সমস্যা নেই!” এই বুদ্ধি আবিষ্কার করে নিজেকে ত ব্যাপক বুদ্ধিমান মনে হচ্ছিল। আর মনে হচ্ছিল ঐ ব্যাটা কত কম ডলারেই এই জিনিস পেয়ে যাচ্ছে। ওরে হালুয়া।

ঐ ব্যাটার আর খবরই নেই। আমার সব কষ্ট কী বৃথাই গেল ! [ আমি বুঝলাম না, ব্যাটা তাহলে ডলার খরচ করে পজেক্টের এড দিল ক্যান? এখন সাইট যে আমার ৫ ডলার যে কেটে নিল তার কী হবে?] বাই দা বাই, এইটা কমেডি না, ট্র্যাজেডিই। তবু দিলাম। অনেকদিন কিছু দেই না। কমেডি ২ **এবার বাণিজ্য মেলায় এক ব্যাপক জিনিস দেখলাম।

Alloy ফার্নিচার বা কিছু একটা হল দোকানের নাম। সেখানে আমি আর আব্বু গেলাম সোফা কাম বেড কিনতে। বেশ বড় সড় স্টল। বড় বড় আলমারি ওয়ারড্রব সারি সারি করে রাখা। ফলে কয়েকটা গলি তৈরি হয়েছে স্টলের ভিতরে।

আমি আর আব্বু ঢুকে দেখি দর্শনার্থী কম। রিপ্রেজেন্টরও দেখি একদম কম। বুঝলাম না। এলোমেলো হাঁটছি। পরে দেখি, প্রতি গলিতে একজন করে মহিলা রিপ্রেজেন্টেটিভ আলমারির আয়নার দিকে তাকিয়ে মেকাপ আর গাঢ় করছে।

প্রতি গলিতে একই অবস্থা। প্রায় ৩-৪টা গলি। এ স্টলের মহিলাদের কী আর কোন কাজ নেই ! পেটে হাত দিয়ে(অবশ্যই নিজেরটা) শুধু হাসতেই থাকলাম। **সোফা কাম বেড খুঁজছি তখনও। জানি অটোবিতে নেই।

তবু গেলাম। অটোবিতে ঢুকতে গিয়ে একটু বয়েসি আপু(কর্পোরেট) সামনে এসে দাঁড়ালেন, “স্যার বলেন কীভাবে সাহায্য করতে পারি !” আমি যদিও আসছি সোফায় একটু বসে জিরিয়ে নিতে, তবু ব্যাপক ভারী গলায় বললাম, “আমি যা চাই, তা আপনি দিতে পারবেন না শিওর। ” (ইয়ে, আমি সোফা কাম বেডের কথা বুঝাইছি কিন্তু)। কিন্তু আপু কর্পোরেট হাসি দিয়ে বললেন, “স্যার বলেই দেখেন। আপনি যা চাবেন, নিরাশ না করার চেষ্টা করব।

” ইয়ে, আমি না চাইতেও কীভাবে যেন একটা লুলামি মার্কা হাসি বের হয়ে গেল। আরে কী অবস্থা, আমার আশে পাশের অপরিচিত কয়েকজন পোলাপানও দেখি কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে লুলামি হাসি দিতেছে !! মানুষের হাসি দেখে আমার আর লজ্জায় গলা দিয়ে কথা বের হইতেছে না। আমি কোনভাবে মিন মিন করে বললাম, “জ্বী,সোফা কাম বেড। ” আপু কর্পোরেট হাসি দিয়ে বললেন, “দুঃখিত স্যার। আপনাকে নিরাশ করে খারাপ লাগল।

” পাশের যারা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, কে যেন জোরেই হেসে দিল। ভাইরে আমি ত কিছুই করি নাই। তবু লজ্জায় পালায়া আসলাম। পোলাপান খুব খারাপ। ** আমারে ঘরের একজন বলছিল, “ছি ছি তোমার চুল থেকে এমন পঁচা গন্ধ আসে ক্যান! ব্যাটা, গোসল করিস না? কীসের শ্যাম্পু দেস? কে আনছে সেই জিনিস?” কিছু কইলাম না।

বিদেশ থেকে তার হাজব্যন্ড এসব পাঠাইছে। উনি সেইটা আমারে দিসেন। এখন এইটা কমেডি হইল নাকি ট্রাজেডি !!! ** আরেকটা কী যেন মাথায় ছিল লেখার শুরুতে। এখন ভুলে গেছি। স্যরি।

© আকাশ_পাগলা এই ক্যাটাগরীর সব পর্বের কাহিনী সত্যি। তাই দম ফাটানো হাসির কৌতুক আশা না করাই ভাল। এই ক্যাটাগরীর অন্যান্য পর্বের লিংক দিলাম। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।