আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেলানীরা কিন্তু ফেলনা নয়


সুমধুর দ্বিপক্ষীয় সকল সম্পর্কে চাই সৎ, আন্তরিক ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নির্ভর বিশ্বাসযোগ্য আচরণের লেনদেন। সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখার দায়-দায়িত্ব দু’পক্ষেরই। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সকল প্রেক্ষাপটেই এটাই সুসম্পর্কের পূর্বশর্ত। ছোট-বড়, ধনী-গরিব, শিক্ষিত-বকলমে কোন ফারাক নেই। আমাদের ‘আজদাহা’ প্রতিবেশী ভারত এই সত্য সম্যক বুঝেও ‘কানা-বোবা’র ভানে ব্যস্ত।

কাকের চক্ষু বন্ধের লুকানোর আদলে নব্য সুপার পাওয়ার নিজেদের ‘দাদাগিরি’ আচরণ ঢাকে। ভারতের স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য হুমকি দুর্বল ও অনুন্নত বাংলাদেশ। কারণ জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের উত্থানের নেপথ্যে থাকে দারিদ্র্য-অশিক্ষা। আবার অতি উন্নত বা আশাপ্রদ জিডিপি’র বাংলাদেশ আগ্রাসী বাজার অর্থনীতির প্রতিবেশী ভারতের না-পছন্দ। ভারতীয় প্রার্থনায় বাংলাদেশের ‘সামান্য’ উন্নতি প্রত্যাশা যাতে বাংলাদেশ অবলীলায় আসা ভারতীয় পণ্য কিনবে দু’হাতে।

বাংলাদেশকে কখনওই প্রতিবেশীর সম্মান-মর্যাদা দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ স্রেফ ভারতের বাজার! বাংলাদেশের ‘বুদ্ধিজীবী’ পাঠক বাঁচিয়ে রাখেন পশ্চিম বাংলার সাহিত্য। ঢাকায় আমদানি বন্ধ হলে আড়াই হাজার কপি মুদ্রণের কলকাতার ঔপন্যাসিকরা উপোসে মরবেন। সাপ্তাহিক-পাক্ষিকগুলো থেকে লেখক-সাংবাদিক হবেন ছাঁটাই। বন্ধ হবে ‘উত্তম-সুচিত্রা’ যুগের মেলোড্রামায় আটকে থাকা ‘টিভি জাতীয়’ অশুদ্ধ উচ্চারণের বাংলা ‘হ্যাংলামি’।

সুপ্রতিবেশীসুলভ সুসম্পর্কের কারণে ও লক্ষ্যে ভারতীয় বাংলা সাহিত্যের বই উদার আমদানির সুযোগ দেয় বাংলাদেশ। দেয় কলকাতার চ্যানেলগুলোর ফ্রিকোয়েন্সিগুলোকে অনুমতি। কিন্তু ‘মোড়ল’ ভাবাপন্ন ‘দাদা’ প্রতিবেশী ভারত কি দেয় অনুরূপ সুবিধা? সোজাসাপ্টা উত্তর, কিছুই না, কেবল নেয়। অচ্ছুৎ নমশূদ্র প্রতিবেশী বাংলাদেশের ভারত-যাত্রী পণ্যগুলোর সংখ্যা আঙুলে গোনা যাবে। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক পণ্য তো দূরের কথা, মুক্ত আকাশ-সংস্কৃতির টিভি চ্যানেল কিংবা বুদ্ধিবৃত্তি বিনিময়ের গ্রন্থাদি ও পত্রপত্রিকা বাধাগ্রস্ত।

সে কারণেই সুপার পাওয়ার প্রতিবেশী ‘মস্তান’ দাদা ফেলানীদের মতো বাঙালি কীটপতঙ্গ মারেন বিনা নোটিশে ঘন ঘন। গত দশ বছরে বিএসএফ যত বাঙালি মেরেছে অকারণে নিজেদের ‘সুপ্রিমেসি’ প্রতিষ্ঠায়, বাংলাদেশ যদি তার সিকি ভাগও মারতো, তাহলে পরিণতি হতো কল্পনাতীত। ফেলানীদের মেরে বাংলাদেশের নতজানু ‘মিনমিনে’ পররাষ্ট্রনীতিকে আরও খানিকটা নতজানু করার আনন্দটা লুটে নেয় ভারত। কড়া পররাষ্ট্র প্রতিবাদে কি ক্ষতি হতো বাংলাদেশের? দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের? নাকি নতজানুতে অভ্যস্ত বাংলাদেশ ‘শির’ উঁচু করা নিজের ন্যায্য অধিকার গিলে বসে আছে? আমদানি-নির্ভর বাংলাদেশ এখন ব্যাংকক-কুয়ালালামপুর-হংকং-চীন চেনে। ওদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাঙালি খদ্দেরের সামনে ভারতীয় ‘দোকানি’ রাজনীতিকে হাসিখুশি হতে হবে।

ক্রেতা বাংলাদেশের কাছে এখন অনেক প্রতিযোগী ও পছন্দসই বিকল্প খোলা। বাংলাদেশ হুট করে গুলি করে ফেলানীরা কিন্তু গাছের ডালে বসে থাকা পাখি কিংবা ফেলনা নয়। একদিন হয়তো আমাদের পররাষ্ট্র জেগে উঠবে। সঙ্গে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে রাস্তায় নামবে ‘আম-জনতা’। যারা বলেছিলেন সামান্য মানববন্ধনে কি লাভ তাদের জন্য করুনা রইলো।

Source- আবিদ রহমান
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।