আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দ্বিবর্ষ পূর্তি পোষ্টে আমার ভালবাসার গল্প ! (হয়তো এটাই সামুতে শেষ পোষ্ট)

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!
-এই কি করিস ? -চুপ থাক ! -আচ্ছা ! গার্লফ্রেন্ড পেয়ে ফ্রেন্ড কে ভুলে গেছিস ? -ফুট ! এখন বিজি ! -এখন ফুট ! থাক তোর গার্ল ফ্রেন্ড কে নিয়ে ! আমি গেলাম ! লিয়া অফ লাইনে চলে যায় ! অপু মেসেঞ্জারের উইনডো থেকে চোখ ফেসবুকের ম্যাসেজ উইন্ডোর দিকে নিয়ে এল । ওখানে ততক্ষনে গোটা কয়েক মেসেজ চলে এসেছে ! -এই তুমি কোথায় ? -এই কোথায় ? -কোথায় গেলে ? -ভুলে গেছো আমাকে ? কার সাথে কথা বলছো ? অপু হাসে কেবল ! তাড়াতাড়ি রিপ্লে দেয় -এই তো আমি পাখি ! এই তো ! কোথায় যাই নি তো ! -তাহলে রিপ্লে দাও না কেন ? হুম ? -দিতেছি পাখি ! -হুম !!! -আই লাভ ইউ ! -হবে না । আবার বল ! -আই লাভ ইউ ! -হুম । হয়েছে ! আই লাভ ইউ ! অপুর মন টা আজ অনেক বেশি ভাল । অনেক বেশি ।

আজ কত দিন পরে এই কাঙ্খিত লাইনটা ও বলতে পারছে । এমন কি সেই মেসেজটার রিপ্লেও আসতেছে । বারবর বলতে ইচ্ছে করছে । অপুর কেবল মনে হচ্ছে সারা দিনই যেন কথা বলুক ওকে ! -এই শুন ! -হুম শুনছি । -এখন ঘুমাবো ? -আমিও ঘুমাবো ! আমার সাথে ঘুমাবা ? -দুষ্টামী করবা না ! -করবো ! তোমার সাথে দুষ্টামি করবো না তো কার সাথে করবো ? -হুম ! হয়েছে ! এখন রাখো ! -না ! তুমি যাবা না ! তুমি যাবা বলে দিলাম ! লিয়া অপুর পাগলামো দেখে হাসে ।

ছেলেটা কি পাগলামো শুরু করেছে । এমন একটা ভাব যেন ও সত্যি সত্যি ওর টিয়া পাখি ! এমন পাগলামো কেন করছে । সেই ১২ টার দিক থেকে ওদের চ্যাটিং শুরু হয়েছে এর ভিতর ছেলেটা অন্তত হাজার বার আই লাভ ইউ লাইনটা বলেছে ! এমন কেন করছে ছেলেটা ? অপুকে বাস্তবে খুব একটা চিনে না লিয়া । কেবল অনলাইনেই পরিচয় । প্রথমে ব্লগ পড়তো ! তারপর ম্যাসেঞ্জারে ।

এখন ফেসবুকে । লিয়া খুব বেশি অন লাইনে থাকতো না । একদিন এক বন্ধুর ফেসবুক শেয়ার একটা ব্লগ পোষ্ট দেখে প্রথম ছেলেটার ব্লগে ঢুকে লিয়া । লিয়ার এখনও মনে আছে গল্পটার নাম । সাইনবোর্ড ।

একটা মেয়ে ছেলের বাড়ির সামনে একটা সাইনবোর্ড নিয়ে হাজির । তাকে বিয়ে করতে হবে । তারপর ঘটতে থাকে মজার কত গুলো ঘটনা । গল্পটা পড়ে লিয়ার মন চট করেই ভাল হয়ে গেল । ওর মন টা কদিন থেকেই বেশ খারাপ ছিল ।

গল্পটা পড়ে আসলেই ভাল লাগলো ওর । তারপর থেকেই ছেলেটার ব্লগে নিয়মিত হয়ে গেল ! একটা অবাক হওয়া বিষয় ও লক্ষ্য করলো যে ছেলোর পুরো ব্লগ জুরে সব আজগুবি ভালবাসার গল্পে ভরা । কিন্তু আজগুবি হলেও গল্প গুলো পড়লে মন ভাল হয়ে যায় ! আর সব থেকে বড় কথা ছেলেটা সব সময় হ্যাপি এন্ডিংয়ের গল্প লেখে । নিশ্চই ছেলেটার জীবনে কোন কষ্ট নাই ! এই জন্য মনে হয় সব সময় এমন আনন্দের গল্প লিখতে পারে ! এই শুনো ! -হুম ! -আকলে অনেক দেরি হয়ে গেছে ! এখনই ঘুমাতে হবে নয়তো আম্মু বকবে ! -তোমার আম্মু জেগে আছে ? -না । -তাহলে ? সে কিভাবে জানবে ? -যদি চলে আসে ? -আসবে না ! আমি বললাম ! -কিভাবে জানো যে আসবে না ! -আমি সব জানি ! --------০--------- বৃক্ষের সাথে আমার পরিচয় খুব সাধারন ভাবেই ।

অল্প কিছু মানুষ আমার লেখা পড়তো তার ভিতর সে ছিল ! আসলে আমি প্রথমে জানতামই না যে ও আসলে একজন মেয়ে ! যেদিন থেকে জানলাম সেদিন একটু অবাক হয়েছিলাম ! আস্তে আস্তে ওর সাথে পরিচয় হয় ! প্রথমে আমাদের মেসেঞ্জারে কথা হত । আমি আমার কথা গুলো বলতাম । ও বলতো ওর কথা গুলো ! আমরা দুজনেই কষ্টে ছিলাম ! কেবল দুজনের কষ্টের কথা গুলো শেয়ার করে নিতাম একে অপরের সাথে । মনের ভিতর একটা শান্তি লাগতো ! ওর সাথে কথা বলেই একটা গল্প লিখেছিলাম অপরিচিতার সাথে কথপোকথন ! এভাবেই দিন যাচ্ছিল কেটে ! তারপর একদিন অদ্ভুদ একটা কাজ করলাম আমি । কেন করলাম ঠিক বলতে পারবো না ! কিন্তু করলাম ! টিয়াপাখি নামের আমার একটা ফেইক আইডি খোলা ছিল ।

ঐ আইডিটা আমি নিজের সান্তনার জন্য খুলে ছিলাম । যখনই মন খারাপ হত আমি টিয়াপাখি আইডিটাতে মেসেজ পাঠাতাম । ওর ওয়ালে কত কিছু লিখতাম ! কোন কারন নাই । এমনিই লিখতাম ! কোন দিন সেগুলোর জবাব আসতো না ! একদিন সেই আইডির পাসওয়ার্ডটা আমি বৃক্ষ্যকে দিয়েদিলাম ! ও আমার কাছে জানতে চেয়েছিল আমি আমি কেন ওকে আইডিটা দিলাম আমি কোন উত্তর দিতে পারি নি ! তারপর ...... বৃক্ষ্য সেই আইডি দিয়ে আমার সাথে প্রথম চ্যটিং করলো ! বুকের ভিতর কেমন লাগছিল আমি বলে বোঝাতে পারবো না । আমি আই লাভ ইউ বলছি আর সেইটার উত্তর আসতেছে ! আমার আর কিছু জানার দরকার ছিল না ।

আমি সেদিন কত বার যে কথাটা বলেছিলাম আমি জানি না ! সেদিন আসলেই এমন কিছু হয়েছিল । মেসেঞ্জারে বৃক্ষ্য রয়েছে আর ফেসবুকে টিয়াপাখি ! যদিও দুজনই একই মানুষ ! তারপর এমন হয়ে গেল যে সারা দিন ফেসবুকে মেসেজ পাঠাই ! মেসেজের রিপ্লে না আসলে ভাল লাগে না ! মনের ভিতর শান্তি পাই না । কোন উপাই না দেখে ওর কাছে মোবাইল নাম্বার চাইলাম । প্রথমে দিতে চাইলো না । তবুও কল না করার সাপেক্ষে ফোন নাম্বার দিল ।

কিন্তু তাই কি হয় ? একদিন সকালে ও নিজেই আমার কাছে ফোন দিল ! প্রথমে আমি ঠিক মত চিন্তে পারি নি । মনে হচ্ছিল ১২/১৩ বছরের কোন বাচ্চা মেয়ের সাথে কথা বলছি ! কন্ঠে একটা আদুরে আদুরে ভাব ! অবশ্য এখনও আমার তাই মনে হয় ! বৃক্ষের মোবাইল ভয়েস আসলেই বাচ্চাদের মত । সেদিন কি বলেছিলাম আমার নিজের মনে নাই । আসলে ঘুমের ঘোরে কি বলেছি আমার ঠিক মত মনে নেই । তবে বলে আমি নাকি খুব ভাব নিয়ে কথা বলছিলাম ।

কে জানে ! এভাবেই ওর সাথে কথা হতে থাকে । কথা বলতে বলতে ওর কত খানি কাছে চলে গেছি আমি কোন দিন বুঝিও নি ! এমনও হয়েছে আমরা ফোনে কথা বলছি আর সাথে চ্যটিং করছি ! যে কথাটা মুখে বলতে পারছি না সেটা ইনবক্সে বলছি ! কয়েকদিনের ভিতরই ইনবক্সের আই লাভ ইউ মুখে চলে এল ! আমরা সারা দিন কথা বলতাম । আমি নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতাম এতো কথা আমি কিভাবে বলি ! সে ততদিনে টিয়াপাখি আইডি থেকে অপুর হৈম আইডি তে চলে এসেছে । তখন অবশ্য অনেকেই মনে করতো যে অপুর হৈম আইডিটাও আসলে আমারই তৈরি ! আমি বেশি কিছু বলি নি ! ও হ্যা ! আর একটা কথা । ওর ব্লগার বটবৃক্ষ আইডিটাও আমি খুলে দিয়েছি ! ঠিক খুলে দিয়েছি বললে ভুল হবে ।

আগে যে টিয়াপাখি আইডিটা ছিল সেইটা নাম বদলে ব্লগার বটবৃক্ষ করেছি ! এভাবেই দিন যাচ্ছিল ! ও একবার অপুর হৈম দিয়ে আমার পোষ্টে কমান্ট দিতো আবার ব্লগার বটবৃক্ষ আইডি তে । আমার মজাই লাগতো ! তারপর একদিন ও বলল যে এই ভাবে কথা বলাটা ঠিক হচ্ছে না । আমাদের কথা বন্ধ হওয়া উচিৎ ! তারপর ও কথা বলা বন্ধ করে দিল ! আমিও অভিমান করে কথা বললাম না ! সাতদিন পরে ও নিজেই আবার আমার কাছে ফোন দিল ! ফোন দিয়ে একটু অভিমান কন্ঠে কত কিছু বলল ! আমি কেবল মনে মনে হাসি ! এই সিম্পল কাহিনী আমাদের ! এতোদিন ব্লগে আমি কেবল বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখেছি । মানুষের গল্প লিখেছি ! আজকে আমার প্রেম কাহিনী বলে দিলাম ! আসলে আমি গত প্রায় দুই সপ্তাহ দিয়ে এই গল্পটা লেখার চেষ্টা করছিলাম ! কত ভাবে ভাবলাম ! কত ভাবে ট্রাই করলাম । কিন্তু মন মত হল না ! কেন হল না জানি না ! একবার ভাবলাম লিখবোই না কিন্তু সামনের কথা বলা যায় না ।

তাই লিখে দিলাম । লেখার একটা কারন হল সামুতে ২ বছর হয়ে গেল ! কোন পোষ্ট দেওয়া হল না । প্রথম বর্ষপূর্তিতে লিখেছিলাম প্রিয়া ব্লগার শায়মা আপুকে নিয়ে । আর এই বর্ষপূর্তিতে লিখলাম মনের কাছের মানুষটিকে নিয়ে ! কাছের মানুষ বলছি কারন সবাই কেবল আমার বাইরের চেহারাটাই দেখেছে । সবার কাছে অবশ্য আমি আমি এই বাইরের চেহারাটাই নিয়ে থাকি ।

নিজের কষ্ট দুঃখ মানুষের সামনে বলতে ইচ্ছা হয় না ! কিন্তু বৃক্ষের বেলায় সেটা হয় নি ! সে আমার সব কিছু জানে ! আমার ভেতরের আমিকে সে খুব ভাল করেই জানে ! আমার মন খারাপ হলে যেন আমার জানার আগেই ও জেনে যায় ! এই টা লেখার পেছনে আরো একটা কারন হল আর হয় তো সামুতে পোষ্ট নাও দেওয়া হতে পারে । সামনের ১৪ তারিখে বান্দরবন যাচ্ছি । নীলগিীরি নীলাচল না । একেবারে গভীরে । ছয় দিনের ট্যুর ! হয়তো বেঁচে নাও ফিরতে পারি এমন জায়গায় যাচ্ছি ! কেন যাচ্ছি জানি না ! এই জন্য এই পোষ্ট টা দিয়ে যাচ্ছি ।

যদি ফিরে না আসি তবে এটাই হবে হয়তো সামুতে আমার শেষ পোষ্ট ! তবে ১২/১৩ হরতাল আছে । ১৪ তারিখেও হরতাল দিতে পারে সে ক্ষেত্রে হয়তো আর যাওয়া হবে না ! তবুও যদি যাওয়া হয় তাই এই শেষ পোষ্ট ! কালকে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি । সবাই ভাল থাকবেন ! আর আমার জন্য না হলেও বটবৃক্ষের জন্য দোয়া করবেন । ওয়ার্ডপ্রেস লিংক
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।