আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন আছি সৌদি আরবে –একুশ পর্ব

স্বাগতম

নামাজ ও মসজিদ এখানে হঠাৎ করেই মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাস্তায় যোহরের নামাজের আজান শুনে গাড়ী থেকে নেমে মসজিদে ঢুললাম। প্রথা অনুযায়ী চার রাকাত জামাত শেষ হতেই ঈমাম সাহেব বললেন আছরের জামাতও এখন পড়ে নিন কারন বাইরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা উনার নির্দেশ অনুযায়ী সুন্নতে না গিয়ে আছরের জামাতও পড়ে ফেললাম। নামাজ শেষে ভাবলাম আমাদের দেশে কতই না ঝড় বৃষ্টি হয় কখনোতো এই বোনাসটা আমরা নেইনি! গাড়ীতে উঠেই ঠিক করলাম সৌদি আরবের এই সালাহ বা নামাজ নিয়ে একটা লেখা হতে পারে।

আমি যখন প্রথম এদেশে এলাম নামাজের ভিন্ন কায়দা কানুন আমাকে অবাক করতো। মনে হতো আমাদের দেশের হুজুররা আমাদেরকে ঠিক মতো নামাজ শিখায়নি। যদিও বলতে দ্বিধা নেই আমি তখন নিয়মিত নামাজী ছিলামনা,কিন্তু নামাজ শিখেছিলাম একদম মাদ্রাসায় গিয়ে। এই নিয়ে আব্বাকে অনেক চিঠি লিখেছি এবং তিনিও অনেক ব্যাপারে জানতে চেয়ে চিঠি লিখতেন। পরে জেনেছিলাম দেশে আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেবের সঙ্গে আব্বাও আমার কথাগুলো শেয়ার করতেন।

এখানে বেশীর ভাগ আরবীয়ান মুছল্লীরা নামাজের নফল/ছুন্নত রাকাতগুলি পড়েননা। এছাড়া নামাজে সুরাহ ফাতিহার শেষে “আমিন” শব্দটা ঈমামের সঙ্গেই সবাই উচ্চস্বরে পড়েন আর নামাজ শেষে ঈমামের সঙ্গে সঙ্গে মুছল্লীরা সালাম না ফিরিয়ে উনার ছালাম শেষ হলেই,সবাই ছালাম ফেরান। আবার নামাজ শেষে দোয়া পড়ানোর বালাই নেই,আপন মনে দোয়া দরুদ পড়ে যে যার রাস্তায় বেড়িয়ে যান। আমার অফিস টাইমটা এমন ছিল যে তিন ওয়াক্ত নামাজ আমাকে অফিস সংলগ্ন মসজিদেই পড়তে হতো। এখানে প্রতিটা মসজিদেই ইমাম এবং মুয়াজ্জিন হিসেবে সৌদি নাগরীকরা চাকুরী পান।

কিন্তু ৯০% মসজিদেই মুয়াজ্জিন বাংলাদেশী আর ৭০% ঈমাম ইয়ামেনী,ইন্ডিয়ান ও বাংলাদেশী। আমি এখানে সাতটি সরকারী নুতন মসজিদ বানিয়েছি। তাই অনেক ব্যাপারই আমার জানা হয়ে গিয়েছে। এখানে বেশী বেতনে নিয়োগ পেয়েই সৌদি ঈমাম সাহেব নিজ থেকে কম বেতনের লোক রেখে তার কাজটি করিয়ে নেন। অবশ্য তিনিও মাঝে মধ্যে এসে নামাজ পড়ান।

একদিন অফিস থেকে নামাজের জন্য দুজন মিশরী কলিগের সঙ্গে বেরুলাম কিন্তু তারা আমাকে কাছের মসজিদ যেতে না দিয়ে দুরেরটাতে নিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপার কি দূরে যাচ্ছো কেন? তারা বললেন ঈমাম হিন্দি(বাংলাদেশী) অর্থ না বুজে নামাজ পড়ান,তাই বেশী সোয়াবের জন্য সেখানে যাচ্ছে!কথা শুনে আমি হতবাক!! আগেই বলেছি আমি বেশ কয়েকটা মসজিদ বানিয়েছি। একদিন মসজিদের ছাদ ঢালাইয়ের সময় আজান হয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী আজানের ধ্বনি কানে শুনা মাত্র সকল প্রকার কাজ বন্ধ করে দেয়া। কিন্তু আমার কাজটা এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে চালিয়ে যেতেই হবে।

তাই আমার অমুসলিম শ্রমিক ও রেডিমিক্সের ফিলিপিনো অপারেটরকে কাজ চালিয়ে যেতে বলে আমি নামাজ পড়তে পাশের অস্থায়ী মসজিদে ঢুকে পড়লাম। নামাজ শেষে বেড়িয়ে আসতেই ফিলিপিনোরা আমাকে ঘিড়ে ধরলো। তারা জানতো আমার সঙ্গে ইসলামিক ম্যাজিস্ট্রেটের(মতুয়া) বেশ সখ্যতা আছে, তাই আমার কথায় নামাজের সময় কাজ করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষন আগে নাকি মতুয়া এসে আমার লোকসহ ওদের সকলেরই আকামা নিয়ে গিয়েছে এবং তাদের অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলে গিয়েছে। আমি জানি এই ধরনের অপরাধের শাস্তি দোররা মারা বা হাজতবাস অথবা আর্থিক জরিমানা হতে পারে কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছিলনা আল্লাহ্‌র ঘড় বানাতে গিয়েও একই শাস্তি আমাদের হতে পারে।

আমি যথাশীঘ্রি তাদের অফিসে অফিসে চলে গেলাম। চীফের নিকট গিয়ে বিস্তারীত বললাম। মনে হলো ইনি আগেই জেনে গিয়েছিল তবুও না জানার ভান করে আমাকে কিছু উপদেশ দিলেন এবং সবগুলো আকামা ফিরিয়ে দিলেন কিন্তু সেই রেডিমিক্স কোম্পানীকে আর্থিক জরিমানা করেছিল। কাতিফ জামে মসজিদ আল-কাতিফ নামে শিয়াদের এলাকাতে আমরা জামে মসজিদের কাজ পেলাম। মাটি কাটা শুরু হতেই অনেকেই এসে জিজ্ঞেস করতো এখানে কি হবে?আমি গর্ব করে বলতাম জামে মসজিদ কিন্তু লক্ষ্য করতাম এই কথা শুনে মুখ বেকিয়ে তারা চলে যেত।

তারপর খোজ নিয়ে জানলাম ৯৫%লোক এখানে শিয়া ,তারা চায়না এখানে সুন্নীদের কোন মসজিদ হোক। মজার ব্যাপার মাঝে মধ্যে আমি ভুল করে শিয়াদের মসজিদে নামাজ পরতে ঢুকে পড়তাম। তবে তাদের নামাজের স্টাইল দেখেই ছিটকে বেড়িয়ে আসতাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।